ওজন ক্ষয়ের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আলােচনা করাে।

ওজন ক্ষয়ের ক্ষতিকর প্রভাব


(১) মানুষের উপর প্রভাব :

  • মানুষের ত্বকের অনাবৃত অংশ অতিবেগুনি রশ্মির (UV-B, তরঙ্গ দৈর্ঘ্য 2,900 A থেকে 3,200 A পর্যন্ত) দ্বারা দগ্ধ হয়। একে সৌর দগ্ধ বা Sunburn বলে। এর ফলে ত্বক তামাটে বর্ণের হয়ে যায়।


  • অতিবেগুনি রশ্মির (UV-B) প্রভাবে ত্বকে ক্যানসার সৃষ্টি হয়। ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী একে দু-ভাগে ভাগ করা যায়। যথা—চরম ক্ষতিকারক বা ম্যালিগন্যান্ট এবং অপেক্ষাকৃত কম ক্ষতিকারক ও নিরাময়যােগ্য বা নন-ম্যালিগন্যান্ট। শ্বেতাঙ্গদের ত্বক মেলানােসাইট মেলানিন প্রস্তুত করতে না পারায় ত্বক UV-B হাত থেকে রক্ষা পায় না। ফলে তারা ত্বক ক্যানসার দ্বারা আক্রান্ত হয়। উত্তর আমেরিকার উত্তর অংশে ওজোন স্তরের ঘনত্ব হ্রাস। পাওয়ায় বেসাল কোশ কারসিনােমা (নিরাময়যােগ্য), স্কোয়ামাস কোশ কারসিনােমা ও মেলানােমা জাতীয় ক্যানসার বৃদ্ধি পাচ্ছে। ওজোন স্তর 10 শতাংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ে 20 থেকে 30 শতাংশ। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর এই রােগে 7,000 জন লােকের মৃত্যু ঘটছে। এই সংখ্যা অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে 10 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।


  • চোখের লেন্স ও করনিয়া দ্বারা অতিবেগুনি রশ্মির (UV-B) অধিশােষণের ফলে অল্পবয়স্ক মানুষের চোখে ছানি পড়ার ঘটনা বাড়ছে।


  • অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে মানুষের অনাক্রম্যতা (Immunity) অর্থাৎ রােগ-প্রতিরােধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, ফলে মানুষ সহজেই নানা রােগে আক্রান্ত হচ্ছে।


  • অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে স্তন ক্যানসার ও লিউকোমিয়ায় মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে।


  • প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস এবং বন্ধ্যাত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে।


(২) প্রাণীদের ওপর প্রভাব :

  • অতিবেগুনি রশ্মির (UV-B) প্রভাবে জলজ বাস্তুতন্ত্রের মূল ভিত্তি-উদ্ভিদ প্লাঙ্কটনের পরিমাণ হ্রাস পায়, ফলে বাস্তুতন্ত্র সামগ্রিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


  • UV-B-র প্রভাবে নিম্নশ্রেণির প্রাণীর বৃদ্ধি ও বংশ বিস্তার ব্যাহত হয়।


  • জীব পরিবেশে UV-B এর অবাধ অনুপ্রবেশের ফলে উভচর প্রাণীর সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে।


(৩) উত্তিদের ওপর প্রভাব :


  • UV-B এর প্রভাবে 20 থেকে 50 শতাংশ পাতায়। ক্লোরােফিলের পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে এবং ক্ষতিকর মিউটেশন লক্ষ করা যাচ্ছে।


  • অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে উদ্ভিদের পত্ররন্ধ্র দ্বারা মৃত্তিকা স্তরের জল দ্রুতহারে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে হ্রাস প্রাপ্ত হয়।


  • অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে গাছের পাতা, ফুল, ফল ও বীজের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায়।


(৪) জলবায়ুর ওপর প্রভাব : ওজোন হ্রাসের ফলে আবহাওয়ার বিভিন্ন উপাদান, যেমন— উষ্ণতা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহের দিক ও গতি প্রভৃতির পরিবর্তন ঘটে। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি শােষণ করে নিম্ন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ওজোন স্তর উত্তপ্ত হয় এবং উষ্ণতার বৈপরীত্য ঘটায়। UV-Bর অবাধ অনুপ্রবেশে বিশ্বব্যাপী উয়ায়ন সংঘটিত হচ্ছে।


(৫) বাস্তুতন্ত্রের ওপৱ প্রভাব : ওজোন হ্রাস নিয়ন্ত্রণ করা না হলে বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদনশীলতা, স্থায়িত্ব ও ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে।