দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষায় পিতা-মাতার ও শিক্ষক-শিক্ষিকা ভূমিকা আলােচনা করাে।

পরিবারে পিতা-মাতা ও বিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষিকা দৃষ্টি ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য শিক্ষাদানের গুরু দায়িত্ব বহন করেছে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষায় পিতা-মাতার ভূমিকা

(১) বাবা-মাকে সেই ধরনের শিক্ষা দিতে হবে যাতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুরা নিজের সহজে তার পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।

(২) শিশুকে তার চিন্তাশক্তির স্বাধীন বিকাশ ঘটাতে সহায়তা করে।

(৩) শারীরিক, মানসিক দক্ষতা, প্রাক্ষোভিক ইত্যাদি সব ধরনের বিকাশ যাতে যথাযথভাবে ঘটে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

(৪) পিতা-মাতার ভূমিকা এমন হবে যা তার দৃষ্টি প্রতিবন্ধী সন্তানের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করবে, জ্ঞানমূলক দক্ষতার বিকাশ ঘটায় এবং আর্থিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে গড়ে তুলবে।

দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের শিক্ষায় শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকা

(১) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদানের জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি, উপকরণের ব্যবহার করা। সেই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকদের পরামর্শ নেওয়া।

(২) শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মনির্ভরতা বৃদ্ধি করতে শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদেরকে স্বয়ং দায়িত্ব নিতে শেখান।

(৩) শিক্ষক-শিক্ষিকা সাধারণ শিশুদের তুলনায় তাদের সঙ্গে কোনো পৃথক ব্যবহার প্রদর্শন করবেন না।

(৪) স্বাভাবিক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের যাতে সুসম্পর্ক বজায় থাকে তার ব্যবস্থা করবেন।

(৫) দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের কথা মাথায় রেখে শ্রেণিকক্ষে যাতে পর্যাপ্ত আলো ঢাকা, উপযুক্ত বসার জায়গা (যেখান থেকে বোর্ড লেখা বড়াে বড়াে দেখায়) ইত্যাদির ব্যবস্থা করবেন।

(৬) ঘরের কোন্ দিকে কী আছে ইত্যাদি বিষয়ে প্রথমেই শিক্ষক শিক্ষিকা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুদের জানিয়ে দেবেন।

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি পিতা-মাতার ভূমিকা

১৯৬০-এর দশকে শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের প্রথম সমন্বিত করণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ, স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্যে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ, শ্রবণ সহায়ক যন্ত্র ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। মা-বাবা হল শিশুর জীবনের আদর্শ শিক্ষক। পিতা-মাতার ভূমিকা এইসকল প্রতিবন্ধী শিশুদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ -

(১) মা-বাবার প্রথম দায়িত্ব শ্রবণ চিকিৎসকের কাছে সন্তানকে নিয়ে গিয়ে প্রতিবন্ধকতার মাত্রা কতখানি তা নির্ণয় করা।

(২) চিকিৎসকের পরামর্শ মতে শ্রবণ সহায়ক উপকরণ ব্যবহার। 

(৩) বিশেষ শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষকের প্রতি সহযোগী হবেন। 

(৪) সবসময় শিশুর ব্যাপারে সচেতন থাকবেন যাতে শিশু আইন ঘটিত বিভিন্ন সুবিধা, অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।

শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকা

শিক্ষক-শিক্ষিকার সক্রিয়তা, বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ ইত্যাদি হল গুরুত্বপূর্ণ। শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকা গুলি নিম্নলিখিত -

(১) শিক্ষার্থীদের সামাজিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশে বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ ও পদ্ধতি প্রয়োগ করবেন, যথাক্রমে ওষ্ঠ পঠন, অডিটরি ট্রেনিং, ইঙ্গিত ভাষা ইত্যাদি।

(২) IEP অর্থাৎ Integrated Education Programme-এর অধীন বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের জানাবেন।

(৩) বিশেষজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে সমন্বয় প্রক্রিয়ায় কাজ করবে।

(৪) বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে যাতে শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন পুস্তক ও পত্রিকা থাকে তার ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেষ্ট হতে হবে।

(৫) পাঠদানের সময় শ্রেণিকক্ষে Overhead Projector (OHP)-এর ব্যবহার বেশি করেন। এ ছাড়া চার্ট, ব্ল্যাকবোর্ড ব্যবহার করবেন।

(৬) শ্রেণিকক্ষ এমন হবে যাতে বাইরের কোলাহল ভিতরে না আসে।

(৭) পাঠ পরিকল্পনার সময় সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের কথা মনে রেখে তৈরি করতে হবে।

(৮) শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে সামনের সারিতে বসাবেন শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ।

(৯) শ্রবণ প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পাঠ বুঝতে বা পাঠগ্রহণ করতে কোন অসুবিধা হলে সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ বিশেষজ্ঞ শিক্ষক শিক্ষিকার পরামর্শ নেবেন।