শ্রেণিকক্ষে চুরির কারণ গুলি লেখ | এর প্রতিকারের উপায়গুলি লেখাে।

শিশু যা চায় তা না পেলে তার মধ্যে এক ধরনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়। এর ফলে কাউকে না জানিয়ে সে যে আচরণ সম্পন্ন করে, তাকে বলা হয় চুরি। যেমন— সহপাঠীদের বই খাতা, কলম, পেন্সিল, টাকাপয়সা ইত্যাদি না বলে নিয়ে নেওয়া বা চুরি করা।

শ্রেণিকক্ষে চুরির কারণ

(১) চাহিদা পূরণ না হওয়া : শিশুর কিছু প্রাথমিক মৌলিক চাহিদা আছে, সেগুলি পূরণ না হলে সে অন্যের বাড়ি থেকে চুরি করে। যেমন— যদি বাড়িতে খাদ্যের অভাব থাকে, তখন সে অন্যের বাড়ি থেকে চুরি করে চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে।

(২) বাবা-মায়ের শিশুর অন্যান্য চাহিদা পূরণে সমর্থ না হওয়া : মৌলিক চাহিদা গুলো ছাড়াও শিশুদের অন্যান্য চাহিদা থাকে। যেমন খেলনা সামগ্রী ইত্যাদি। অনেক সময় বাবা-মা এগুলি শিশুকে কিনে দিতে পারে না, তখন শিশুরা অন্য উপায় অবলম্বন করে।

(৩) কুসঙ্গ : অনেক সময় শিশু বন্ধুদের সঙ্গে মিলে চুরি করে।

(৪) নিরাপত্তাবােধের অভাব : বাড়িতে পিতা-মাতা ও অন্যান্য সদস্যদের থেকে স্নেহ-ভালোবাসা ও সঙ্গী না পেলে শিশু নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। নিরাপত্তাহীনতা থেকে সে চুরি করে।

(৫) অন্যকে পীড়ন করার মানসিকতা : অন্যকে পীড়ন করার ইচ্ছা থেকে অনেক সময় শিশু চুরি করে।

(৬) বিকৃত অহংসতা : অনেকসময় শিশু বিকৃত বা জটিল অহংসত্তা (ego complex) থেকে চুরি করতে প্রবৃত্ত হয়।

(৭) যৌন বস্তুর প্রতীক : অপহৃত বস্তু যৌন বস্তুর প্রতীকরূপে কল্পনা করলে শিশু চুরি করে।

শ্রেণিকক্ষে চুরির প্রতিকার

(১) চুরি করার কারণ : চুরি করার অনেক কারণ থাকে। শিশু ঠিক কোন্ কারণে এই কাজ করেছে তা প্রথমেই অনুসন্ধান করে দেখা উচিত।

(২) নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা : গৃহ পরিবেশ ও স্কুলের পরিবেশ যেন স্বাভাবিক আনন্দদায়ক হয়। এই পরিবেশগুলিতে যেন শিশু ভালোবাসার অভাব বোধ না করে অর্থাৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

(৩) শিক্ষকের স্নেহপরিপূর্ণ আচরণ : শিক্ষকের আচরণ যেন কখনােই নির্মম না হয়। শিশু অন্যায় করলে তাকে কঠোর শাস্তি না দিয়ে বুঝিয়ে বলা প্রয়োজন।

(৪) চাহিদা পূরণ করলে : শিশুর প্রাথমিক চাহিদাগুলো পূরণ করা প্রয়ােজন। এ ছাড়া অন্যান্য যেসকল চাহিদা যেমন - নতুন খেলনা বা অন্য খাদ্য সামগ্রী স্বাভাবিক উপায়ে প্রয়োজনমতো পূরণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। আবার সবসময় যে-কোনাে সামগ্রী চাইলেই তাকে দেওয়া উচিত নয়। পিতা-মাতার উচিত শিশুর প্রয়ােজন বুঝে চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা।

(৫) পরামর্শদানের ব্যবস্থা : ব্যক্তিগতভাবে শিশুর পরামর্শদানের ব্যবস্থা করতে হবে।

(৬) মনোচিকিৎসকের পরামর্শ : অনেক সময় শিশুর বাড়ির সচ্ছল অবস্থা থাকা সত্ত্বেও তার চাহিদাপূরণ হলেও অথবা পিতা-মাতার থেকে ভালোবাসা পেয়েও শিশু স্বভাব বশত চুরি করে। একে ক্লিপ্টোম্যানিয়া (Kleptomania) বলে। এরকম শিশুর ক্ষেত্রে প্রতিকারের জন্য অবশ্যই মনসা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে এবং সহানুভূতি মূলক মনে ভাব নিয়ে শিক্ষক ও অভিভাবকদের এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে, তাহলে এরা সুস্থ জীবনে ফিরে আসতে পারবে।