সুয়েজ খাল জাতীয়করণের বিরুদ্ধে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইজরায়েলের যুদ্ধ-চক্রান্ত বর্ণনা করাে | সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা কী ছিল?

ব্রিটেন, ফ্রান্স ও ইজরায়েলের যুদ্ধ-চক্রান্ত

[1] ব্রিটেনের ভূমিকা: নাসের সুয়েজ খালকে মিশরের অধীনে জাতীয়করণ করলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় প্রমাদ গােনে ব্রিটেন। কেন-না সুয়েজ খাল কোম্পানির শতকরা ৪৪ ভাগ শেয়ার ছিল ব্রিটেনের। নাসের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের পর জানিয়েছিলেন যে, এই খালের পূর্বতন অংশীদার কোম্পানিগুলি বাজার মূল্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পাবে। কিন্তু এই ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ব্রিটেনের কাছে যথেষ্ট ছিল না।


[2] ফ্রান্সের ভূমিকা: ফ্রান্সও মধ্যপ্রাচ্য থেকে অশােধিত খনিজ তেল এই পথেই জাহাজে করে নিজের দেশে নিয়ে যেত। কাজেই সুয়েজ খাল। কোম্পানির জাতীয়করণ ফ্রান্সের কাছে বিপর্যয়ের শামিল ছিল। নাসের সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানির প্রতিটি শেয়ার-মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে সম্মত ছিলেন। তা ছাড়া সুয়েজ খাল দিয়ে রাজস্ব দানের বিনিময়ে অনুমতি সাপেক্ষে কোনাে দেশেরই জাহাজ যাতায়াতে বাধা ছিল না। আন্তর্জাতিক মানের জলপথ সুয়েজ খাল থেকে ফরাসি কোম্পানির বিশাল অঙ্কের মুনাফার উৎস বন্ধ হয়ে গেলে ফ্রান্স মিশরের সঙ্গে বিরােধিতায় লিপ্ত হয়।


[3] ইজরায়েলের ভূমিকা: ইজরায়েলও নাসেরের সুয়েজ খাল জাতীয়করণের তীব্র বিরােধিতা করে এবং ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পাশে দাঁড়ায়। এর কারণগুলি হল—


  • [i] নাসের ছিলেন ইজরায়েলের শত্রু। তাই মধ্যপ্রাচ্যে নাসেরের প্রাধান্য খর্ব করে ইজরায়েল বিপন্মুক্ত হতে চেয়েছিল।


  • [ii] নাসের সুয়েজ খালে ইজরায়েলের জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তাই যুদ্ধে নেমে সে তার জাহাজ চলাচলকে নিশ্চিত করতে চেয়েছিল।


  • [iii] ইজরায়েলের ওপর আরব সন্ত্রাসবাদীদের প্রায়শই যে আক্রমণ চলছিল, তাতে মিশরের একটা ভালাে রকমের মদত রয়েছে। বলে ইজরায়েলের অভিযােগ ছিল।


এইসমস্ত কারণে মিশরকে একটা ভালােমতাে শিক্ষা দিতে ইজরায়েল ব্রিটেন ও ফ্রান্সের পক্ষ নিয়েছিল।


সুয়েজ সংকট সমাধানে ভারতের ভূমিকা


সুয়েজ সংকট সৃষ্টির পর থেকেই ভারত এই সংকট সমাধানের উদ্যোগ নেয়। ভারত সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশ ছিল বলে, সুয়েজ সমস্যা সমাধানে ভারতের স্বার্থ জড়িত ছিল।


[1] প্রাথমিক প্রচেষ্টা হিসেবে: সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশ হিসেবে নিজস্বার্থেই ভারত সুয়েজ সমস্যা (১৯৫৬ খ্রি.) সমাধানে এক অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। ভারত মনে করত ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের 'কনস্ট্যান্টিনােপল কনভেনশন' অনুসারে সুয়েজ খাল মিশরের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। তবে সেই সঙ্গে সে এ-ও মনে করত যে, খাল ব্যবহারকারীদের একটি উপদেষ্টামূলক ভূমিকা থাকা দরকার।


[2] বিদেশমন্ত্রীর মাধ্যমে: ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে সুয়েজ সমস্যার সমাধানে লন্ডন সম্মেলনে মিশরের কোনাে প্রতিনিধি যােগদান না করায় ভারতের প্রতিনিধি বিদেশমন্ত্রী কৃয় মেনন দু-পক্ষের মধ্যে যােগসূত্রের ভূমিকা পালন করেছিলেন। সুয়েজ সংকট সমাধানের লক্ষ্যে কৃষ মেনন পাঁচ দফা পরিকল্পনা পেশ করেন। তিনি সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলির মধ্যে এক কমিটি গঠন করে সমস্যা সমাধানের প্রস্তাব দেন। তিনি মিশরের ওপরও খাল রক্ষার দায়িত্ব দেওয়ার কথা বলেন।


[3] প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে: ব্রিটেন ও ফ্রান্সের প্ররােচনায় মিশরের ওপর ইজরায়েলের আক্রমণকে ভারত সরকার কঠোরভাবে নিন্দা করে। প্রধানমন্ত্রী নেহরু এটিকে এক নগ্ন আক্রমণ বলে নিন্দা করেন।


[4] জাতিপুঞ্জে যােগদান: জাতিপুঞ্জের শান্তিরক্ষা বাহিনী হিসেবে ভারত মিশরে সেনা পাঠায়। যুদ্ধবিরতি কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে এবং বিদেশি সৈন্য অপসারণের বিষয়ে জাতিপুঞ্জে আলাপ-আলােচনাকালে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


চেকোশ্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরিতে সােভিয়েত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার বিবরণ দাও।


যুগােশ্লাভিয়া ও রাশিয়া কমিউনিস্ট রাষ্ট্র হওয়া সত্ত্বেও উভয়ের মধ্যে মনােমালিন্যের কারণ কী ছিল? আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সােভিয়েত রাশিয়া ও পােল্যান্ডের সম্পর্ক লেখাে।


সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।