১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ভারত বিভাজন ও পৃথক পাকিস্তানের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলােচনা করাে।

সূচনা: উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে স্বাধীনতার দাবিতে ভারতে তীব্র ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলন শুরু হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ব্রিটেনও যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই উপনিবেশগুলি ধরে রাখার শক্তি ব্রিটেনের ছিল না। এই পরিস্থিতিতে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেন ভারতকে দ্বিখণ্ডিত করে স্বাধীনতা প্রদান করে। ফলে দক্ষিণ এশিয়ায় স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়।


১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে পৃথক পাকিস্তানের সৃষ্টি

[1] স্বাধীনতা আন্দোলন: উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতে জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটে। ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠার পর ভারতীয়দের রাজনৈতিক অধিকারের দাবি জোরদার হতে থাকে। বিংশ শতকের প্রথম থেকে ভারতে ব্রিটিশ বিরােধী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠে। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া স্বদেশি আন্দোলন, ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের অহিংস অ২যােগ আন্দোলন, ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের আইন অমান্য আন্দোলন, ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়াে আন্দোলন প্রভৃতি এদেশে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দেয়।


[2] পৃথক পাকিস্তানের দাবি: আলিগড় আন্দোলনের নেতা স্যার সৈয়দ আহমদ খান (১৮১৭-১৮৯৮ খ্রি.) উনবিংশ শতকের শেষদিকে ভারতে দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণা ছড়িয়ে দেন। তিনি বলেন যে, হিন্দু ও মুসলিম দুটি পৃথক জাতি। তাদের একত্রে সহাবস্থান সম্ভব নয়। পরবর্তীকালে ভারতীয় রাজনীতি ও স্বাধীনতা আন্দোলনে দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রভাব যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। মুসলিম লিগ ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লাহাের অধিবেশনে মুসলিমদের জন্য পৃথক পাকিস্তানের দাবি জানায়। এটি 'লাহাের প্রস্তাব' নামে পরিচিত।


[3] আন্দোলনের অগ্রগতি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতে ব্রিটিশবিরােধী স্বাধীনতা আন্দোলন আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সময় ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে ভারতে আজাদ হিন্দ ফৌজের সংগ্রাম, ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌ-বিদ্রোহ, ভারতকে স্বাধীনতা দানের বিষয়ে ব্রিটেনকে আমেরিকার চাপ প্রভৃতি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার যথেষ্ট চাপে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ব্যয়ভারের ফলে ব্রিটিশ শক্তি যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে সরকার ভারতে স্বাধীনতা দানের কথা ভাবতে শুরু করে।


[4] সাম্প্রদায়িকতা বৃদ্ধি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর লিগের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান ধ্বনি তুলে লিগ পৃথক পাকিস্তানের দাবিতে আপােসহীন সংগ্রাম শুরু করে। পৃথক পাকিস্তান সৃষ্টিতে ব্রিটিশ সরকারকে বাধ্য করতে লিগ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ আগস্ট প্রত্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দিয়ে কলকাতায় ব্যাপক হারে হিন্দু নিধন চালায়। অবশ্য কয়েকদিন পর হিন্দুরাও এখানে পালটা আক্রমণ চালাতে শুরু করে। পরবর্তী দুমাসে নােয়াখালি এবং ত্রিপুরায়ও ব্যাপক হারে হিন্দু নিধন হয়।


[5] স্বাধীনতা লাভ ও পৃথক পাকিস্তান: তীব্র সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সরকার মুসলিম লিগের পৃথক পাকিস্তানের দাবি মেনে নিয়ে ভারত বিভাজনের সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতের স্বাধীনতা আইন- এর মাধ্যমে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি পৃথক রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়। ভারত স্বাধীনতা লাভ করার মাত্র কয়েক ঘন্টা আগে অর্থাৎ ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে বেলুচিস্তান, উত্তর-পশ্চিম সীমান্তপ্রদেশ, সিন্ধু, পশ্চিম পাঞ্জাব, পূর্ববঙ্গ এবং আসামের শ্রীহট্ট জেলার কিছু অংশ নিয়ে পাকিস্তান গঠিত হয়;অর্থাৎ পাকিস্তানের দুটি ভূখণ্ড হয়-একটি পশ্চিম পাকিস্তান এবং অপরটি পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ববঙ্গ)। অবশিষ্ট ভূখণ্ড নিয়ে ভারত গঠিত হয়। কংগ্রেসও বাধ্য হয়ে ভারত বিভাজনের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়।


উপসংহার: ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে মুসলিমদের জন্য পৃথক পাকিস্তানের সৃষ্টি হলেও ধর্মই যে-কোনো রাষ্ট্র গঠনের প্রধান শর্ত নয়, তা কয়েক বছরের মধ্যে পাকিস্তানে সুস্পষ্ট হয়ে যায়। সৃষ্টির কিছুকাল পরই পশ্চিম পাকিস্তান, পূর্ব পাকিস্তানের ওপর তীব্র অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বনা চাপিয়ে দেয়। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ পূর্ববঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের পরিণতিতে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়।


আলজেরিয়ার চূড়ান্ত মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা লাভ উল্লেখ করাে। স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে আলজেরিয়ার বিকাশ কর্মসূচি ও জাতি সংগঠয়ের পরিচয় দাও।


ইন্দোনেশিয়ায় মুক্তিসংগ্রামের প্রসার ও স্বাধীনতা লাভ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


ইন্দোনেশিয়ার চূড়ান্ত মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতালাভ উল্লেখ করো। স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে ইন্দোনেশিয়ার বিকাশ কর্মসূচি ও জাতি সংগঠনের  পরিচয়া দাও৷