ইন্দোনেশিয়ায় মুক্তিসংগ্রামের প্রসার ও স্বাধীনতা লাভ সম্পর্কে আলােচনা করাে।

সূচনা: ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ায় হল্যান্ডের ওলন্দাজদের চূড়ান্ত ঔপনিবেশিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান ডাচ শক্তির হাত থেকে ইন্দোনেশিয়াকে ছিনিয়ে নেয় (১৯৪২ খ্রি.)। কিছুদিন পর জাপান বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হলে (১৭ আগস্ট, ১৯৪৫ খ্রি.) হল্যান্ড আবার ইন্দোনেশিয়ায় নিজের আধিপত্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে; কিন্তু ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দারা তীব্র আন্দোলন চালিয়ে সেখানে ডাচ শাসনের অবসান ঘটায় (১৯৪৯ খ্রি.)।


ইন্দোনেশিয়ার মুক্তিসংগ্রাম

[1] ডাচদের শােষণ ও অত্যাচার: হল্যান্ড ইন্দোনেশিয়ার প্রাকৃতিক সম্পদ ও কৃষিপণ্য নির্বিচারে লুণ্ঠন করে এবং খনিজ তেলের ওপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। ফলে ইন্দোনেশিয়ার অর্থনীতি পুরােপুরি বিদেশিদের দখলে চলে যায় এবং দেশের সাধারণ মানুষ ক্রমে দরিদ্র হতে থাকে। হল্যান্ডের স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থায় ইন্দোনেশিয়ার সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণের কোনাে সুযােগ ছিল না। এভাবে দেশবাসীর মনে ক্ষোভের পাহাড় জমে ওঠে।


[2] পশ্চিমি শক্তির ব্যর্থতা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানি হল্যান্ড দখল করে নিলে ইন্দোনেশিয়ায় হল্যান্ডের ঔপনিবেশিক শাসন লুপ্ত হয়। এই শক্তিশূন্যতার সুযােগে পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শক্তিগুলিকে এশীয় অঞ্চল থেকে বিতাড়িত করে জাপান এখানে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। জাপানের কাছে পশ্চিমি শক্তিগুলির এই পরাজয় ইন্দোনেশিয়া-সহ এশিয়ার বিভিন্ন উপনিবেশের মানুষকে উৎসাহিত করে। ইন্দোনেশিয়ার মানুষ উপলদ্ধি করে যে, তাদের পক্ষেও হল্যান্ডকে বিতাড়িত করে স্বাধীনতা অর্জন করা সম্ভব।


[3] জাপানের সহায়তা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান এশীয় অঞ্চলে সাম্রাজ্যবাদী নীতি গ্রহণ করে ইন্দোনেশিয়া-সহ এশিয়ার বেশ কয়েকটি উপনিবেশ দখল করে নেয়। জাপান ইন্দোনেশিয়া দখল করলেও তারা সেখানে ডাচদের মতাে সীমাহীন শােষণ-পীড়ন চালায়নি। বরং তারা ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের চেতনাকে আরও শক্তিশালী হতে সহায়তা করে। তারা ডাচ আধিকারিকদের বন্দি করে ইন্দোনেশিয়ার রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দেয়। ইন্দোনেশিয়ায় ডাচ ভাষার ব্যবহার নিষিদ্ধ করে জাপান সেখানে দেশীয় ভাষার ব্যবহার চালু করে।


[4] জাতীয়তাবাদের অগ্রগতি: জাপানের উদ্যোগে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদী চেতনা অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এর ফলে ইন্দোনেশিয়ায় বুদি উমা, সারেকাত ইসলাম, কমিউনিস্ট দল প্রভৃতি জাতীয়তাবাদী প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। ড. সুকর্ণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জাতীয়তাবাদী দল ইন্দোনেশিয়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এসব সংগঠনের সক্রিয় উদ্যোগে ইন্দোনেশিয়ায় ডাচদের বিরুদ্ধে মুক্তিসংগ্রাম অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে।


[5] প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা: জাপান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরাজিত হয়ে ইন্দোনেশিয়ায় আধিপত্য হারালে ওলন্দাজরা পুনরায় সেখানে নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়; কিন্তু এর বিরুদ্ধে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদীরা তীব্র সংগ্রাম শুরু করে। তারা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে ডাচদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘােষণা করে সেদেশে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। জাপান এই প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয়। এই প্রজাতান্ত্রিক সরকারের রাষ্ট্রপতি হন ড. সুকর্ণ এবং প্রধানমন্ত্রী সুতান জাহরির।


[6] গ্রেপ্তার: ইন্দোনেশিয়ার আন্দোলনকারীরা স্বাধীনতা ঘােষণা করে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলে হল্যান্ড সামরিক অভিযান চালিয়ে সুমাত্রা ও জাভা ছাড়া গােটা ইন্দোনেশিয়া দখল করে নেয় পাশাপাশি ড. সুকর্ণ ও হাত্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।


[7] চুক্তি স্বাক্ষর: গ্রেপ্তারির প্রতিবাদে ইন্দোনেশিয়ার সর্বত্র বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়লে ব্রিটেনের মধ্যস্থতায় হল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ার মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। হল্যান্ড এই চুক্তির দ্বারা সুমাত্রা ও জাভায় সুকর্ণের প্রজাতান্ত্রিক সরকারের শাসনকে মেনে নেয়।


উপসংহার: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স ও ইন্দোনেশিয়ার স্বাধীনতার প্রতি সমর্থন জানায়। শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির চাপে হল্যান্ড ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে (২৭ ডিসেম্বর) ইন্দোনেশিয়াকে স্বাধীনতা প্রদান করতে বাধ্য হয়।


আলজেরিয়ার উপনিবেশিক বিরোধী আন্দোলানের প্রসার ও স্বাধীনতালাভ আলোচনা করো।


ফ্রান্সের বিরুদ্ধে আলজেরিয়ার মুক্তিসংগ্রামের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলােচনা করাে।


আলজেরিয়ার চূড়ান্ত মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা লাভ উল্লেখ করাে। স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে আলজেরিয়ার বিকাশ কর্মসূচি ও জাতি সংগঠয়ের পরিচয় দাও।