স্বাধীন ভারতে বিভিন্ন ভারী শিল্পের ধারাবাহিক বিকাশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

সূচনা: ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং ভারী শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়।


ভারী শিল্পের ধারাবাহিক বিকাশ

[1] প্রথম পরিকল্পনায় শিল্পের প্রসার: প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৫১-৫৬ খ্রি.) বিভিন্ন ভারী শিল্পে উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। সিমেন্ট, ভারী রাসায়নিক দ্রব্য, ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পজাত দ্রব্য প্রভৃতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে। এই পরিকল্পনাকালে শিল্পোৎপাদন ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। ৩৭০ মাইল নতুন রেলপথ নির্মিত হয়। এই সময় সরকারি উদ্যোগে যেসব ভারী শিল্পের কারখানা গড়ে ওঠে, সেগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল পেট্রোলিয়াম শােধনাগার, রেল ইঞ্জিন তৈরি, সার উৎপাদন, নিউজপ্রিন্ট উৎপাদন প্রভৃতি।


[2] দ্বিতীয় পরিকল্পনায় শিল্পোৎপাদন: দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (১৯৫৬-৬১ খ্রি.) নেহরু-মহলানবিশ মডেল অনুসারে দেশে ভারী শিল্প গড়ে তােলার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন, রেল ও সড়ক পরিবহণ, জাহাজ ও বিমান চলাচল প্রভৃতি ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটেছিল। তবে ইস্পাত, কয়লা, সিমেন্ট প্রভৃতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করতে পারেনি। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রে 'হিন্দুস্থান স্টিল লিমিটেড’ (HSL) নামে কোম্পানির অধীনে ভারতে তিনটি ইস্পাত কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই তিনটি ইস্পাত কারখানা প্রতিষ্ঠায় মােট ব্যয় হয়েছিল ৩৫৩ কোটি টাকা। এই তিনটি কারখানা হলㅡ


  • রাউরকেল্লা ইস্পাত কারখানা: জার্মানির সহযােগিতায় ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দে উড়িষ্যার রাউরকেল্লায় রাউরকেল্লা স্টিল প্ল্যান্ট (RSP) নামে প্রথম ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে। এর সহযােগী কোম্পানিগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ক্লুপ ডেমাগ, ফ্রায়েড ক্লুপ, এসেন, ডেমাগ প্রভৃতি। এই কারখানায় ১৯৫৯ খ্রিষ্টাব্দে উৎপাদন শুরু হয়।


  • ভিলাই ইস্পাত কারখানা: সােভিয়েত ইউনিয়নের সহযােগিতায় মধ্যপ্রদেশের ভিলাই-এ ভারতের দ্বিতীয় ইস্পাত কারখানা ভিলাই স্টিল প্ল্যান্ট প্রতিষ্ঠিত হয় (১৯৫৭ খ্রি.)। এই কারখানায় ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে উৎপাদন শুরু হয়।


  • দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা: বিড়লা ব্রাদার্স নামে সংস্থার উদ্যোগে এবং ব্রিটেনের সহযােগিতায় ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট নামে ভারতের তৃতীয় ইস্পাত কারখানাটি স্থাপিত হয়। এই কারখানায় ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে উৎপাদন শুরু হয়।


[3] অন্যান্য লৌহ-ইস্পাত কারখানা: দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ লৌহ- ইস্পাত কারখানা গড়ে ওঠে।


  • [i] তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বােকারাে স্টিল লিমিটেড (BSL) নামে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অধীনে বিহারে 'বােকারাে স্টিল প্ল্যান্ট' প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। এই কারখানায় ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে উৎপাদন শুরু হয়।


  • [ii] এরপর তামিলনাড়ুর সালেম স্টিল প্ল্যান্ট (১৯৮২ খ্রি.), অপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে 'রাষ্ট্রীয় ইস্পাত নিগম লিমিটেড' নামে একটি কারখানা (১৯৯২ খ্রি.) এবং কর্ণাটকের বিজয়নগরে দুটি বড়াে লৌহ-ইস্পাত কারখানা (১৯৯৮ খ্রি.) স্থাপিত হয়।


[4] পেট্রো-রাসায়নিক শিল্প: ১৯৫০-এর দশকে আই.সি.আই. কোম্পানি পশ্চিমবঙ্গের রিষড়ায় পলিইথিলিন তৈরির একটি কারখানা গড়ে তােলে। এরপর ক্রমে উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতে ‘সিন্থেটিক অ্যান্ড কেমিক্যালস লিমিটেড’, অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে 'পলিকেম লিমিটেড’ ও ‘কেমিক্যালস অ্যান্ড প্লাস্টিকস লিমিটেড', মহারাষ্ট্রের ট্রম্বেতে 'ইউনিয়ন কার্বাইড (ইন্ডিয়া) লিমিটেড' প্রভৃতি পেট্রো রাসায়নিক কারখানা গড়ে ওঠে। এ ছাড়া মহারাষ্ট্রের থানে, গুজরাটের জওহরনগর ও জামনগর, তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন, কণাটকের ম্যাঙ্গালাের, পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া প্রভৃতি স্থানে পেট্রোরাসায়নিক শিল্প কারখানা গড়ে ওঠে।


[5] অন্যান্য ভারী শিল্প: উপরােক্ত শিল্পগুলি ছাড়া ভারতে গড়ে ওঠা অন্যান্য উল্লেখযােগ্য ভারী শিল্পগুলি হল ভারত হেভি ইলেকট্রিক লিমিটেড’ (BHEL), 'হিন্দুস্তান মেশিন টুলস (HMT), 'হিন্দুস্তান এরােনটিক্স লিমিটেড (HAL), ইন্ডিয়ান রেয়ার আর্থ (IRE) প্রভৃতি।


উপসংহার: স্বাধীনােত্তরকালে ভারতে ভারী শিল্পের ধারাবাহিক বিকাশ ঘটেছে এবং শিল্পোৎপাদন খুব দ্রুতহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।


স্বাধীন ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বিবরণ দাও।


'ভারী শিল্প' বলতে কী বােঝায়? স্বাধীনতা লাভের পরবর্তীকালে ভারতে ভারী শিল্পের বিকাশে কী কী উদ্যোগ নেওয়া হয়?


স্বাধীনােত্তরকালে ভারতে আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির বিবরণ দাও।