স্বাধীন ভারতের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার বিবরণ দাও।

সূচনা: দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৫৬-৬১খ্রি.) বিভিন্ন ব্যর্থতার মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হয়। এরপর প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বাধীন ভারত সরকার ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬১-৬৬ খ্রি.) গ্রহণ করে।


তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬১-৬৬ খ্রিঃ)

প্রেক্ষাপট: এই পরিকল্পনা মােটামুটিভাবে দ্বিতীয় পঞ্বার্ষিকী পরিকল্পনার অনুকরণে তৈরি হয়। তবে দ্বিতীয় পরিকল্পনায় কৃষির উন্নতি ব্যাহত হওয়ায় তৃতীয় পরিকল্পনায় কৃষিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।


লক্ষ্য: তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রধান লক্ষ্যগুলি ছিল- 

  • [i] জাতীয় আয় প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা। 

  • [ii] মাথাপিছু বার্ষিক আয় প্রায় ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে ৩১০ টাকা থেকে ৩৮৫ টাকা করা। 

  • [iii] খাদ্য উৎপাদনে স্বাবলম্বী হওয়া। 

  • [iv] শিল্পের কাঁচামাল ও রপ্তানিযােগ্য কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করা, 

  • [v] শিল্পক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ১০.৮ শতাংশে পৌছেনাে। 

  • [vi] ইস্পাত, রাসায়নিক দ্রব্য, শিল্প-যন্ত্রপাতি, শক্তি প্রভৃতি উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি করা। 

  • [vii] কর্মসংস্থানের সুযােগ বৃদ্ধি করা। 

  • [viii] অর্থনৈতিক শক্তির সুষম বণ্টনের মাধ্যমে আর্থিক বৈষম্য হ্রাস করা।


পদক্ষেপ: তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার রূপায়ণে ব্যয় ধরা হয় ১১,৬০০ কোটি টাকা।


সাফল্য: তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার  সাফল্যগুলি হল-

  • [i] কৃষি উৎপাদনে গুরুত্ব বাড়ানাে হয়। 

  • [ii] গ্রামীণ অর্থনীতির পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে গ্রাম পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ, সমবায় সমিতি প্রভৃতির সম্প্রসারণ ঘটানাে হয়। 

  • [iii] ক্ষুদ্র ও ভারী বুনিয়াদি শিল্পের বিকাশে উদ্যোগ নেওয়া হয়। 

  • [iv] শিক্ষার প্রসার ও কর্মসংস্থানের ওপর গুরুত্ব বাড়ানাে হয়।


ত্রূটি: তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বহু ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার প্রধান ত্রূটি গুলি ছিল-

  • [i] জাতীয় আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা বার্ষিক ৫ শতাংশ ধরা হলেও বাস্তবে বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ২.২ শতাংশ। 

  • [ii] কৃষিক্ষেত্রে শােচনীয় ব্যর্থতা দেখা দেয়। খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ কোটি টন। কিন্তু বাস্তবে মাত্র ৬ কোটি ৩০ লক্ষ টন উৎপাদিত হয়। 

  • [iii] ইস্পাত, কয়লা, সিমেন্ট, বিদ্যুৎ প্রভৃতি উৎপাদনও আশানুরূপ হয়নি। 

  • [iv] পরিকল্পনার শেষে ব্যাপক সংখ্যায় কর্মসংস্থান করা সম্ভব। হয়নি। 

  • [v] সেচ, বিদ্যুৎ, গৃহনির্মাণ, সংগঠিত শিল্প প্রভৃতি ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা স্পর্শ করা সম্ভব হয়নি। 

  • [vi] এই পরিকল্পনাকালে যথেষ্ট পরিমাণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি ঘটে। দ্রব্যমূল্য কোনো কোনাে ক্ষেত্রে ৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। 

  • [vii] অন্যান্য পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার মতাে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার ক্ষেত্রেও ভারত সরকারকে বহুলাংশে বিদেশি ঋণ ও অন্যান্য সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হয়। ফলে দেশ বিপুল পরিমাণ ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ এই পরিকল্পনা বহু ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। চিন কর্তৃক ভারত আক্রমণ (১৯৬২ খ্রি.), পাক-ভারত যুদ্ধ (১৯৬৫ খ্রি.), ব্যাপক খরা (১৯৬৫-৬৬ খ্রি.) প্রভৃতি ঘটনা এই ব্যর্থতার জন্য বহুলাংশে দায়ী ছিল।


গুরুত্ব: বিভিন্ন ব্যর্থতা সত্ত্বেও তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কয়েকটি গুরুত্ব লক্ষ্য করা যায়। যেমন-

  • [i] এই পরিকল্পনার দ্বারা ঔপনিবেশিক অর্থনীতির গতিহীনতা দূর হয়। 

  • [ii] জাতীয় আয় ৬২.১ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। 

  • [iii] শিল্পক্ষেত্রে নানা বৈচিত্র্য আসে।