আধুনিক অন্ধের প্রতিষ্ঠায় বীরসালিঙ্গম পালুর অবদান কতখানি?

ভূমিকা: অন্ধ্রপ্রদেশের নবজাগণের জনক কান্দুকুরি বীরসালিঙ্গম পান্তুলু ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৬ এপ্রিল পূর্ব গােদাবরী জেলার ঐতিহাসিক শহর রাজামুন্দ্রির এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মানুষের নৈতিক উন্নতি ঘটিয়ে সামাজিক উন্নতির পথ প্রশস্ত করাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ 'Swatantra Centenary Tributes'-এ বলেছেন一 "আমাদের সমাজে আমূল পরিবর্তন ঘটানাের জন্য দক্ষিণ ভারতের যাঁরা পথিকৃৎ তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ছিলেন শ্রী বীরসালিঙ্গম পান্তুলু (১৮৪৮-১৯১৯ খ্রি.)।"


অন্ধের প্রতিষ্ঠায় বীরসালিঙ্গমের অবদান

[1] সমাজের উন্নতিবিধানে: জাতিভেদ, অস্পৃশ্যতা ও দলিত শ্রেণির ওপর উচ্চবর্ণের শােষণ-পীড়নের তিনি তীব্র নিন্দা করেন। মানুষের নৈতিক উন্নতি ঘটিয়ে সামাজিক উন্নতির পথ প্রশস্ত করাই ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। ব্রিটিশ সরকারের পদস্থ আমলা, বিচারকদের দুর্নীতি ও অত্যাচারের কাহিনি জনসমক্ষে তুলে ধরে তিনি এর বিরােধিতা করেন। তিনি কয়েকটি সমাজসেবামূলক সংস্থা গড়ে তােলেন। যেমন—সংঘ সংস্কার সমাজম (১৮৭৬ খ্রি.), প্রার্থনা সমাজম (১৮৭৮ খ্রি.) এবং 'স্ত্রী পুনর্বিবাহ সমাজম' (১৮৮০ খ্রি.)।


[2] তেলুগু সাহিত্যে: বীরসালিঙ্গম তেলুগু সাহিত্য ও সাংবাদিকতার জনক। তাঁর সম্পাদিত কয়েকটি তেলুগু পত্রিকা হল- বিবেকাবর্ধনী (১৮৭৪ খ্রি.), হাস্য সঞ্জীবনী (১৮৭৬ খ্রি.), সতীহিত বােধিনী (১৮৮৩ খ্রি.), সত্য সম্বর্ধনী (১৮৯১ খ্রি.) এবং সত্যবােধিনী (১৯০৫ খ্রি.)। তিনিই প্রথম তেলুগু উপন্যাস, নাটক, প্রকৃতি বিজ্ঞান ও ইতিহাস গ্রন্থের রচয়িতা। জোনাথন সুইফট-এর 'গালিভার ট্রাভেলস' ও গােল্ডস্মিথের 'ভিকার অব ওয়েকফিল্ড'-এর অনুসরণে তিনি রচনা করেন সত্যরাজা পূর্বদেশ যাত্রালু’ ও 'রাজশেখর চরিত্র'। তেলুগু সাহিত্যের বিবর্তন ও গতিপ্রকৃতির ওপর লেখা তার প্রামাণিক গ্রন্থটি হল—'দ্য লাইভস অব তেলুগু পােয়েটস'।


[3] নারীকল্যাণ: বীরসালিঙ্গম নারীকল্যাণের লক্ষ্যে বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, দেবদাসী প্রথা, বাইজি নাচ প্রথা, ধনীদের উপপত্নী রাখার রেওয়াজ ইত্যাদির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন। তিনি নারীসমাজের সার্বিক কল্যাণে রাজামুন্দ্রি সমাজসংস্কার সমিতি (১৮৭৮ খ্রি.) এবং বিধবাবিবাহ সমিতি (১৮৭১ খ্রি.) প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরই উদ্যোগে অপ্রদেশে প্রথম বিধবাবিবাহ অনুষ্ঠিত হয় (১৮৮১ খ্রি. ১১ ডিসেম্বর)। এ ছাড়া মহীশূর (১৯০৭ খ্রি.) এবং ব্যাঙ্গালােরে (১৯১০ খ্রি.) তিনি একটি করে বিধবা আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সকল কাজের ছায়াসঙ্গী ছিলেন পত্নী রাজলক্ষ্মী।


[4] জনশিক্ষা বিস্তার: জনশিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে তিনি দোয়ালেশ্বরম (১৮৭৮ খ্রি.) ও রাজামুন্দ্রিতে (১৮৮৪ খ্রি.) একটি করে বালিকা বিদ্যালয় ছাড়াও বয়স্ক মহিলা, হরিজন ও শ্রমিকদের জন্যও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত নিম্নবর্ণের মহিলাদের তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়গুলিতে তিনি নিয়ােগ করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত কয়েকটি বিদ্যালয় ছিলবালভারতী সমিতি ন্যাশন্যাল হাই স্কুল, বন্দেমাতরম হাই স্কুল ইত্যাদি।


মূল্যায়ন: আধুনিক অন্ত্রের রূপায়ণে সমাজসংস্কারকরূপে বীরসালিঙ্গম ভারতের যে-কোনাে স্বনামধন্য সমাজসংস্কারকের সঙ্গে একনিশ্বাসে উচ্চারিত একটি নাম। ভি আর নায়ালা তার 'বীরসালিঙ্গ' গ্রন্থে বলেছেন— “তিনি অন্ত্রের মানুষের জীবন ও চিন্তাধারাকে আধুনিক, প্রগতিশীল ও মানবিকতার পথে চালিত করেছিলেন” (“He gave an altogether modern, progressive and humanistic turn to their life and thought")।