ভারতে সমাজসংস্কার আন্দোলনে থিওসফিক্যাল সােসাইটির ভূমিকা লেখাে।

সমাজসংস্কার আন্দোলনে থিওসফিক্যাল সোসাইটি

[1] প্রতিষ্ঠা: উনিশ শতকের শেষার্ধে ভারতে সমাজসংস্কার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল 'থিওসফিক্যাল সােসাইটি'। হেলেনা পেট্রোভনা মাদাম লাভাটস্কি নামে এক রুশ মহিলা ও কর্নেল হেনরি স্টিল ওলকট নামে এক ব্রিটিশ সামরিক অফিসার ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে 'থিওসফিক্যাল সােসাইটি স্থাপন করেন। ১৮৭৯ খ্রিস্টাব্দে তারা আর্যসমাজের আমন্ত্রণে ভারতে আসেন ও মাদ্রাজের উপকণ্ঠে আডিয়ারে 'থিওসফিক্যাল সােসাইটি'র ভারতীয় শাখাটি (১৮৮৬ খ্রি.) স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে এটিই সােসাইটির প্রধান কার্যালয়ে পরিণত হয়।


[2] লক্ষ্য: ইংরেজি শব্দ থিওসফির অর্থ হল ঈশ্বর সম্পর্কে জ্ঞান। বাংলা বা সংস্কৃতে যা 'ব্রহ্মজ্ঞান' হিসেবে পরিচিত। খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকে গ্রিক পণ্ডিত আয়ামবেচস সর্বপ্রথম থিওসফি শব্দটি উল্লেখ করেন। থিওসফিক্যাল সােসাইটি'র মূল কয়েকটি লক্ষ্য ছিল—


  • [i] জাতি-ধর্ম বর্ণ ও নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সৌভ্রাতৃত্ব স্থাপন। 

  • [ii] প্রাচীন হিন্দুধর্মের হৃত মর্যাদা ফিরিয়ে আনা। 

  • [iii] দেশপ্রেম ও স্বাধীনতার আদর্শে সকলকে অনুপ্রাণিত করা। 

  • [iv] হিন্দুদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি গড়ে তােলা। 

  • [v] ধর্ম, দর্শন ও বিজ্ঞানের পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন ও চর্চায় উৎসাহদান ইত্যাদি।


[3] অ্যানি বেসান্তের ভূমিকা: আইরিশ মহিলা অ্যানি বেসান্ত সােসাইটিতে যােগদান করলে (১৮৮৯ খ্রি.) এটি জনপ্রিয় ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তার চেষ্টায় ভারতের নানা স্থানে এর শাখাপ্রশাখা গড়ে ওঠে। বেসান্তের চেষ্টায় কাশীতে স্থাপিত হয় কেন্দ্রীয় হিন্দু বিদ্যালয়। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে এই বিদ্যালয়টি মদনমােহন মালব্যের উদ্যোগে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। বেসান্তের মতে—ভারতে 'থিওসফিক্যাল সােসাইটি'র প্রধান কাজ হল হিন্দু, জরথুস্ট্রীয় ও প্রাচীন বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণ ঘটানাে। বেসান্ত বলতেন—"হিন্দু আদর্শের পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই পরাধীন ভারতবাসী ফিরে পাবে তার আত্মসম্মান, দেশাত্মবােধ ও স্বাধীনতা।"


[4] অবদান:


  • হিন্দু ধর্মের পুনরুখান: 'থিসফিক্যাল সােসাইটির উদ্যোগে গড়ে ওঠা আন্দোলন হিন্দুধর্মের নব উত্থানে সাহায্য করেছিল।


  • ধর্মীয় বিশ্বাস: থিওসফিক্যাল আন্দোলন স্বদেশবাসীকে নিজধর্মের প্রতি বিশ্বাস অটুট রাখতে সাহায্য করেছিল।


  • বিদেশি বিদ্বেষ হ্রাস: বেসান্ত বিদেশি সংস্কার (বন্দিশালার সংস্কার, হাসপাতালের রুগিদের সঙ্গদান)-এর আদর্শ এদেশে প্রচলন করলে বিদেশিদের প্রতি ভারতীয়দের বিদ্বেষের ধারণা অনেকটাই পরিবর্তিত হয়।


[5] সােসাইটির ব্যর্থতা: 'থিওসফিক্যাল সোসাইটি'র কিছু ব্যর্থতাও ছিল一


  • জনপ্রিয়তা হ্রাস: হিন্দুধর্মের মূর্তিপূজা আচার-অনুষ্ঠানকে সমর্থন করে 'থিওসফিক্যাল সােসাইটি' প্রথমদিকে জনপ্রিয়তা পেলেও শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখতে পারেনি।


  • নগরকেন্দ্রিক: থিওসফিক্যাল আন্দোলন মূলত পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মুষ্টিমেয় শহুরে ভারতীয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। গ্রামীণ সাধারণ দরিদ্র ভারতীয়দের সঙ্গে এই আন্দোলনের কোনাে সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।


  • হিন্দুধর্মকেন্দ্রিক: থিওসফিক্যাল আন্দোলন হিন্দু জাতীয়তাবাদ কেন্দ্রিক হওয়ায় ভারতের অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়, বিশেষত মুসলিম সম্প্রদায় এই আন্দোলন থেকে দূরে সরে থাকে।


মূল্যায়ন: থিওসফিস্টরা হিন্দুধর্ম ও ঐতিহ্যের পক্ষে প্রচারে নামলে ভারতীয়দের আত্মবিশ্বাস ফিরে আসে। জওহরলাল নেহরু এই সংস্থাটির প্রশংসা করে তাঁর দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া গ্রন্থে লিখেছেন- "থিওসফিক্যাল সােসাইটি ভারতীয় মধ্যবিত্ত হিন্দুদের মনে প্রবল আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তােলে।”


জাতীয়তাবাদের বিকাশ ও নবভারত গঠনে স্বামী বিবেকানন্দের অবদান নির্ণয় করাে।


ভারতের মুসলমানদের নবজাগরণে স্যার সৈয়দ আহমেদ খানের ভূমিকা আলােচনা করাে।

আলিগড় আন্দোলনের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।


উনিশ শতকে মহারাষ্ট্রের সমাজসংস্কার আন্দোলনে প্রার্থনা সমাজের ভূমিকা লেখাে। মহারাষ্ট্রে সমাজসংস্কার আন্দোলনে মহাদেব গােবিন্দ রানাডের ভূমিকা লেখাে।