উল্লেখযােগ্য কয়েকটি স্মৃতিকথার সংক্ষিপ্ত আলােচনা‌ করাে।

সূচনা: স্মৃতির ওপর নির্ভর করে অতীতের কোনাে ঘটনার বিবরণ লেখা হলে তাকে স্মৃতিকথা বলা হয়। স্মৃতিকথা অনেক সময় কালেকটিভ মেমরি বা যৌথ স্মৃতি হিসেবে প্রকাশিত করে।


বিভিন্ন স্মৃতিকথা

[1] জীবনস্মৃতি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিকথামূলক আত্মজীবনী‌ জীবনস্মৃতি গ্রন্থটি থেকে ঠাকুরবাড়ির অন্দরমহলের নানা কাহিনি জানা যায়। এই গ্রন্থটি থেকে তৎকালীন ইংরেজি ভাষা ও বিদেশি প্রথা সম্পর্কে বাঙালি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি, স্বদেশিয়ানার প্রতি বাঙালিদের আগ্রহ ও উদ্যোগ প্রভৃতি সম্পর্কে নানা তথ্য পাওয়া যায়। নবগােপাল মিত্রের 'হিন্দুমেলা' এবং রাজনারায়ণ বসুর সভাপতিত্বে গড়ে ওঠা স্বাদেশিকতার সভার কথাও এই গ্রন্থ থেকে জানা যায়।


[2] সত্তর বৎসর: 'সত্তর বৎসর' হল বিপিনচন্দ্র পালের স্মৃতিকথামূলক আত্মজীবনী। এই গ্রন্থ থেকে তার বংশ ও গ্রামের পরিচয়, স্কুল ও কলেজ জীবনের নানা কথা জানা যায়। তার সঙ্গে আনন্দমােহন বসু, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথাও আমরা জানতে পারি। এ ছাড়াও জানা যায় ব্রাহয্মসমাজে তাঁর যােগদান ও স্বদেশি, বয়কট, পূর্ণস্বরাজ প্রভৃতি আন্দোলনে তাঁর অংশগ্রহণের কথা।


[3] জীবনের ঝরাপাতা: সরলাদেবী চৌধুরানির স্মৃতিকথামূলক আত্মজীবনী জীবনের ঝরাপাতা’র ছত্রে ছত্রে সমকালীন সশস্ত্র বৈপ্লবিক কর্মকাণ্ডের বর্ণনা রয়েছে। এরই পাশাপাশি ব্রিটিশ ভারতে অর্থনৈতিক শােষণের স্বরূপটিও ফুটে উঠেছে। এ ছাড়াও গ্রন্থটি থেকে ঠাকুরবাড়ির সাংস্কৃতিক চর্চা, শিশুসদস্যদের একসঙ্গে বেড়ে ওঠা, তাদের ঈশ্বরভাবনাসহ বিভিন্ন সামাজিক বিধান সম্পর্কেও জানা যায়। বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, ঋষি অরবিন্দ, মহাত্মা গান্ধি, তিলক, লাজপত রায় প্রমুখের নানা কর্মকাণ্ডের পরিচয় মেলে বইটিতে।


[4] ছেড়ে আসা গ্রাম: দক্ষিণারঞ্জন বসুর লেখা 'ছেড়ে আসা গ্রাম নামে স্মৃতিকথায় দেশভাগের প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। দেশভাগের পরিণতিরূপে উদ্বাস্তু শরনার্থীদের মানসিক যন্ত্রণা ও বেদনা ধরা পড়েছে এই উপন্যাসে।


[5] সেদিনের কথা: ধীনতা লাভের প্রাক্কালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে মণিকুন্তলা সেন লেখেন তাঁর স্মৃতিকথা সেদিনের কথা। এই আত্মকথায় হিন্দু মুসলিম হানাহানির নিদারুণ করুণ‌ চিত্র ফুটে ওঠে।


[6] দ্য স্ট্রাগল ইন মাই লাইফ: দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী‌ প্রাণপুরুষ নেলসন ম্যান্ডেলা তার বর্ণবিদ্বেষ বিরােধী জীবনসংগ্রামের স্মৃতি নিয়ে রচনা করেন 'দ্য স্ট্রাগল ইন মাই লাইফ’ নামে গ্রন্থটি। এই স্মৃতিকথাটিতে নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ সরকারের বর্ণবিদ্বেষমূলক অপশাসনের বিরুদ্ধে নিজের ও নিজ দেশবাসীর জীবনসংগ্রামের কাহিনি পরিবেশন করেছেন।


[7] অন্যান্য স্মৃতিকথা: অন্যান্য স্মৃতিকথার মধ্যে মহাত্মা গান্ধির 'দ্য স্টোরি অব মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথ, মৌলানা আবুল কালাম আজাদের ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম’ বিশেষ উল্লেখযোগ্য।


উপসংহার: স্মৃতিকথায় লেখকের কলমে তার অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা উঠে আসে না। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিগত দিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির ওপরেই আলােকপাত করা হয়।