লােককথার উল্লেখযােগ্য সুত্রগুলি অর্থাৎ এপিক ল্য-গুলির পরিচয় দাও।

সূচনা: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লােককথাগুলির মধ্যে কাহিনি কাঠামাে, চরিত্র কাঠামাে বা পরিণতির ইঙ্গিত প্রভৃতি অভ্যন্তরীণ আঙ্গিক বিন্যাসের ক্ষেত্রে এই মিলগুলি থাকে। লোককথার এই বিশ্বজনীন মিলগুলির ভিত্তিতে লােককথায় কিছু মহাসূত্রাবলি নির্ধারিত হয়েছে। এগুলি এপিক ল্য (Epic Law) নামে পরিচিত।


লোককথার সূত্রাবলি বা এপিক ল্য-সমূহ

[1] শুরু ও সমাপ্তির সূত্র: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লােককথাগুলি শুরু হয় এক যে ছিল... শব্দগুলি দিয়ে, আর লােককথার সমাপ্তি ঘটে 'এবং তারা সুখে শান্তিতে বাস করতে লাগল’ এই ধরনের শব্দগুলি দিয়ে। লােককথার শুরু ও সমাপ্তির মধ্যেকার কাহিনি কখনােই ট্রাজিক বা করুণ পরিণতি নিয়ে‌ শেষ হয় না।


[2] পুনরাবৃত্তির সূত্র: লােককথায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে থাকে। অনেকসময় লােককথার চরিত্রের মুখে বারবার একই শব্দ ঘুরে ফিরে আসে। একটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা বর্ণিত হয় দ্বিতীয় বা তৃতীয় চরিত্রের ক্ষেত্রেও সেই ঘটনা বর্ণনার প্রয়ােজনীয়তা দেখা দিলে হুবহু প্রথমবারের মতােই সেই বর্ণনা হয়ে থাকে।


[3] একই দৃশ্যে দুইয়ের সূত্র: একই দৃশ্যে একই সঙ্গে দুটি চরিত্র, দুটি বস্তু বা দুটি ঘটনার বেশি কোনো কিছু থাকে না অর্থাৎ লােককথায় একসঙ্গে কেবল দুইয়ের কথাই বলা হয়।


[4] পরম্পর-বিরােধিতার সূত্র: লোককথায় দেখা যায় ঘটনাগত বা চরিত্রগত দিক থেকে পরস্পর বিরােধী ধর্ম অর্থাৎ লােককথার কাহিনি বর্ণনায় দেখা যায় একটি চরিত্র খুব নিষ্ঠুর প্রকৃতির হলে অন্য চরিত্রটি দয়ালু বা উদার প্রকৃতির হয়ে থাকে।


[5] তিনের সূত্র: লােককথায় তিন সংখ্যার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লােককথার ঘটনাগুলি তিন তিনবার করে হয়। যেমনলােককথার কোনাে চরিত্র কোনাে কাজের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয়বারে সফল না হলেও তৃতীয়বারে অবশ্যই সফল হয়ে থাকে।


[6] চূড়ান্ত অবস্থানের গুরুত্বগত সূত্র: একই সঙ্গে বহু ব্যক্তি বা ঘটনা যখন থাকে তখন প্রধান ব্যক্তি বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি প্রথমে গুরুত্ব পায়। তাই লােককথার কাহিনিতে দেখা যায় প্রধান ঘটনা বা প্রধান চরিত্রটি পূর্ণ পরিণতি পায় আর কাহিনির সমাপ্তিতে শুধুমাত্র প্রধান চরিত্রটিই উল্লেখিত হয়।


[7] একক উপাদানের সূত্র: লােককথার কাহিনিগুলিতে প্রধানগুচ্ছ (চরিত্র)-কে এককভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।


[8] আদর্শ গঠনের সূত্র: লোককথায় মূলত‌ Ascending Descending Method-এর দ্বারা একটি Pattern তৈরি করে নেওয়া হয়। লােককথায় আদর্শ সরাসরি উত্থাপিত হয় এবং তার ছন্দটিও গণিতের নিয়ম মেনে অত্যন্ত দৃঢ় থাকে। লোককথার মধ্যে সুখ-দুঃখের বিপরীত তত্ত্ব থাকলেও তা সবসময় মিলনাত্মক হয়ে থাকে।


[9] ছন্দোবদ্ধ কাহিনি দৃশ্যের সূত্র: লােককথায় বেশকিছু ছন্দোবদ্ধ কাহিনির দৃশ্য থাকে। এই সমস্ত দৃশ্যগুলিতে নায়ক-নায়িকা একে অপরের প্রতি সমীপবর্তী হয়।


[10] যুক্তিশাস্ত্রগত সূত্র: লোককথার নিজস্ব এক যুক্তিশাস্ত্র রয়েছে যার দ্বারা কাহিনি ও চরিত্রগুলি নিয়ন্ত্রিত হয়। লােককথার কাহিনিতে সুখের পরিবেশ ফুটিয়ে তােলার জন্য শুরুতেই দুঃখের ছবি তুলে ধরা হয়।


উপসংহার: লােককথার এপিক ল্যগুলি কমবেশি বিশ্বের বেশিরভাগ দেশের লােককথার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায়।