গান্ধিজি কেন রাওলাট আইনের (১৯১৯ খ্রি) বিরােধিতা করেছিলেন?

রাওলাট আইনের বিরোধিতায় গান্ধিজি

প্রেক্ষাপট: প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ভারতে বৈপ্লবিক ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে ব্রিটিশ সরকার শঙ্কিত হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতির মােকাবিলার জন্য সরকার সিডনি রাওলাটের সভাপতিত্বে 'সিডিশন কমিটি' গঠন করে। এই কমিটির তৈরি আইনের খসড়াটি কেন্দ্রীয় আইনসভায় আইন হিসেবে গৃহীত হয়। এই আইনের নাম হয় রাওলাট আইন। আসলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতরক্ষা আইনের আয়ু শেষ হলে বিপ্লবী ও সন্ত্রাসবাদীদের দমনের জন্য এক নতুন আইনের দরকার পড়ে। এই আইন সেই দরকার মেটায়।


গান্ধিজির বিরােধিতা


[1] আইনের আপত্তিকর দিক: ভারতীয়দের দৃষ্টিতে রাওলাট আইনের বেশকিছু আপত্তিকর দিক ছিল। রাওলাট আইনের মূল উদ্দেশ্য হিসেবে বিপ্লবী ও সন্ত্রাসবাদীদের দমনকে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই আইনে বিনাবিচারে যে-কোনাে সন্দেহজনক ব্যক্তিকে আটক করা, তাদের বাসস্থানের ওপর নজর রাখা ও ঘর তল্লাশি করা, সম্পত্তি দখল করা, জুরি ছাড়া রুদ্ধদ্বার আদালতে বিচার করা, মােটা টাকার জামানত আদায় করা প্রভৃতি দমনমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। পুলিশকে এই আইন রূপায়ণের জন্য বিশেষ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। গান্ধিজি তাই ভারতবাসীর সার্বিক স্বার্থরক্ষার লক্ষ্যে এই আইনের বিরােধিতা করেন।


[2] জাতীয় আন্দোলনের রূপবদল: জাতীয় নেতা হিসেবে গান্ধিজি অনুভব করেছিলেন তরুণ প্রজন্ম আর আবেদন-নিবেদনের রাজনীতি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে চায় না। যুগবদলের সাথে সাথে পরের প্রজন্ম জাতীয় আন্দোলনের রূপ তথা পরিচালন পদ্ধতির বদল চেয়েছিল। গান্ধিজি তাঁর অসামান্য দূরদৃষ্টির দ্বারা এই সত্য অনুভব করেছিলেন। আসলে জাতীয় কংগ্রেসের প্রথমদিকের নরমপন্থী নেতৃবর্গ আবেদন-নিবেদন নীতির রাজনীতি করে ভারতবাসীর স্বার্থরক্ষায় তেমন সফল হননি। তাই জাতীয় স্তরে সরাসরি ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলন গড়ে তােলার পরিস্থিতি তৈরি হয়। গান্ধিজি এই পরিস্থিতির সঙ্গে সংগতি রেখে ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলন গড়ে তােলার সিদ্ধান্ত নেন।


[3] সত্যাগ্রহ আদর্শের প্রয়ােগ: গান্ধিজির রাজনৈতিক আদর্শ ছিল সত্যাগ্রহ। সত্যাগ্রহের দুটি দিক—একটি সত্যবাদিতা ও অপরটি অহিংসা। প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে শুদ্ধ তেজ বা শক্তি থাকে গান্ধিজি তাকেই বলেছেন 'সত্যের শক্তি'। এই শক্তিরই অপর নাম প্রেমের শক্তি। গান্ধিজি মনে করতেন, এই শক্তি দিয়ে সবকিছু জয় করা যায়। গান্ধিজি এই শক্তিকে দু-ভাবে ব্যবহার করতে চেয়েছেন, যথা—গঠনমূলক কাজে ও অন্যায়ের প্রতিশােধক হিসেবে। সত্যাগ্রহের মূল কথাই হল অন্যায়ের সঙ্গে অসহযােগিতা করা। গান্ধিজি মনে করতেন, রাওলাট আইন জারি করে ব্রিটিশ অন্যায় করেছে। তাই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে সত্যাগ্রহ আন্দোলন গড়ে তােলা প্রয়ােজন।


১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট ও শর্তাবলি আলােচনা করাে। এই আইনের গুরুত্ব কী ছিল?


কোন্ পরিস্থিতিতে ১৯১৯ খ্রি. মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন জারি হয়? ব্যাখ্যা করাে। এই আইন ভারতবাসীর মধ্যে কী প্রভাব ফেলেছিল?


রাওলাট আইন কী? কেন রাওলাট আইন (১৯১৯ খ্রি.) প্রবর্তন করা হয়?