সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকে নতুন বিশ্বে ঔপনিবেশিকতাবাদের রাজনৈতিক ভিত্তি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

সূচনা: পঞ্জদশ-যােড়শ শতকে পাের্তুগাল ও স্পেন সামগ্রিক অভিযানে এগিয়ে থাকলেও সপ্তদশ-অষ্টাদশ শতক থেকে নতুন বিশ্বে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আসলে এই সময় থেকেই সম্পদ। সংগ্রহ, খ্রিস্টধর্ম ও বাণিজ্যের প্রসারের পাশাপাশি উপনিবেশগুলিতে নিজ নিজ রাজনৈতিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয় ইউরােপীয় দেশগুলি।


উপনিবেশবাদের রাজনৈতিক ভিত্তি

অধ্যাপক জেমস জোল বলেন যে, সম্ভবত কোনাে একটি অভিমত সাম্রাজ্যবাদী সম্প্রসারণের কারণ ব্যাখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়। এর জন্য বিভিন্ন কারণকে দায়ী করা যায়। তবে এই কারণগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য হল রাজনৈতিক কারণ এবিষয়ে সন্দেহ নেই।


[1] রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল: ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি যখন দুর্বল রাষ্ট্রগুলিকে নিজেদের উপনিবেশে পরিণত করে তখন তাদের অন্যতম লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে সেখানকার রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করা।


[2] সামগ্রিক আধিপত্য: ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি উপনিবেশের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে উপনিবেশের যাবতীয় ক্ষমতা দখল করত। এর ফলে তারা উপনিবেশের অর্থনৈতিক, সামরিক, সামাজিক, ধর্মীয় প্রভৃতি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহজেই নিজেদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হত।


[3] উগ্র জাতীয়তাবাদ: ইউরােপের বিভিন্ন দেশে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দের পরবর্তীকালে উগ্র জাতীয়তাবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। প্রতিটি জাতিই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠলে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এশিয়া ও আফ্রিকার অনুন্নত দেশগুলিতে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের রাজনৈতিক তথা সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধির চেষ্টা চালায়।


[4] ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা: উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইউরােপের বিভিন্ন দেশ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নিজেদের সম্মান, প্রতিপত্তি ও ক্ষমতা বৃদ্ধির চেষ্টা চালায়।


[5] বাণিজ্যিক আধিপত্য: উপনিবেশে বাণিজ্যিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে গেলে অবশ্যই সেখানে রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা প্রয়ােজন। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধ এবং ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে এবং সেখানে বাণিজ্যিক একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযােগ পায়।


[6] অর্থনৈতিক শােষণ: ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি উপনিবেশ ভূমিরাজস্বসহ বিভিন্ন ধরনের কর আদায় করার চেষ্টা চালায়। এই অর্থসম্পদ নিজ দেশে পাঠানাের ফলে উপনিবেশগুলির অর্থনৈতিক শক্তি ধ্বংস হয় এবং ঔপনিবেশিক শক্তিগুলির আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পায়। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের পর ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব আদায়ের অধিকার লাভ করে।


উপসংহার: ইটালি ও রাশিয়া শুধু রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেই তারা উপনিবেশ স্থাপনে আগ্রহী হয়। আবার শিল্পের ক্ষেত্রে জার্মানির চেয়ে ফ্রান্স ও বেলজিয়াম অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও শুধু রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আগ্রহেই আগে উপনিবেশ স্থাপনে এগিয়ে আসে।