ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসারের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সূচনা: ব্রিটিশরা নিজেদের বুদ্ধি ও শক্তির সহায়তায় বাংলার রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে। ক্রমে ভারতের অন্যান্য স্থানেও ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার ঘটে।


ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের প্রসার

[1] বাংলা, বিহার, ওড়িশা: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কলকাতা কর্তৃপক্ষ বাংলার নবাব সিরাজ-উদদৌলাকে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশির যুদ্ধে এবং ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে মীরকাশিমকে বক্সারের যুদ্ধে পরাজিত করে। ব্রিটিশ কোম্পানি মােগল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমের কাছ থেকে ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদের দ্বিতীয় সন্ধির (১৬ আগস্ট) মাধ্যমে বাংলা, বিহার ও ওড়িশার দেওয়ানি অর্থাৎ রাজস্ব আদায় ও দেওয়ানি বিচারের অধিকার লাভ করে। এভাবে ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলা, বিহার ও ওড়িশায় নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত করে।


[2] মহীশূর: দক্ষিণ ভারতের উদীয়মান শক্তি মহীশূরের হায়দার আলি প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে (১৭৬৭-১৭৬৯ খ্রি.) নিজের শক্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম হলেও দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে (১৭৮০- ১৭৮৪ খ্রি.) হায়দার আলি ও তার পুত্র টিপু সুলতান পরাজিত হন। পরবর্তীকালে টিপু সুলতান তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে (১৭৮৯- ১৭৯২ খ্রি.) ও চতুর্থ ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধে (১৭৯৮-১৭৯৯ খ্রি.) ইংরেজ বাহিনীর কাছে পরাজিত হন। চতুর্থ যুদ্ধে টিপু যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন এবং মহীশূরের বৃহদংশ ইংরেজরা দখল করে নেয়। এভাবে মহীশূরে ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।


[3] মারাঠা: মারাঠাদের বিরুদ্ধে প্রথম ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে (১৭৭৫- ১৭৮২ খ্রি.) ইংরেজ কোম্পানি বিশেষ সাফল্য দেখাতে পারেনি। তবে কোম্পানির বাহিনী দ্বিতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে (১৮০৩-১৮০৫ খ্রি.) বিভিন্ন মারাঠা নেতাকে একে একে পরাজিত করে। এই পরাজিত নেতারা অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণে বাধ্য হয়। তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধে (১৮১৭-১৮১৮ খ্রি.) মারাঠা শক্তি ইংরেজদের কাছেচূড়ান্তরূপে পরাজিত হয়। পেশােয়া পদ লুপ্ত করে মারাঠা রাজ্য কোম্পানি দখল করে নেয়।


[4] পাঞ্জাব: ব্রিটিশ কোম্পানি পাঞ্জাবের শিখ নেতা রণজিৎ সিংহের (১৭৮০-১৮৩৯ খ্রি.) সঙ্গে অমৃতসরের সন্ধি (১৮০৯ খ্রি.) স্বাক্ষর করে। এই সন্ধির শর্ত অনুসারে তিনি শতদ্রু নদীর পূর্ব তীরবর্তী অঞ্চলে তার দাবি ত্যাগ করেন। ফলে এই অঞ্চল ব্রিটিশদের অবাধ বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়। রণজিৎ সিংহের পরবর্তীকালে শিখ শক্তি প্রথম ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে (১৮৪৫-১৮৪৬ খ্রি.) এবং দ্বিতীয় ইঙ্গ-শিখ যুদ্ধে (১৮৪৮- ১৮৪৯ খ্রি.) কোম্পানির বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। এর ফলে স্বাধীন শিখ সাম্রাজ্যের পতন ঘটে এবং সমগ্র পাঞ্জাব ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয়।


[5] অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি: নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী শাসক লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি (১৭৯৮ খ্রি.) প্রবর্তন করে দেশীয় রাজ্যগুলিকে সম্পূর্ণরূপে কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল করে তােলার উদ্যোগ নেন। এই নীতি প্রয়ােগ করে ভারতে ব্রিটিশ শক্তি হায়দ্রাবাদ, সুরাট, তাঞ্জোর, কর্ণাটক, অযােধ্যা, মালব, বুন্দেলখণ্ড, উদয়পুর, যােধপুর, জয়পুর প্রভৃতি স্থানে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮২৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষুদ্র রাজপুত রাজ্য এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।


[6] ডালহৌসির সাম্রাজ্যবাদী নীতি: লর্ড ওয়েলেসলি কর্তৃক অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রয়ােগের প্রায় অর্ধেক শতাব্দী পরে অপর সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড ডালহৌসি ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য তিনটি নীতি গ্রহণ করেন, যথা一


  • যুদ্ধের দ্বারা রাজ্যজয়: ডালহৌসি যুদ্ধের দ্বারা পাঞ্জাব, সমগ্র দক্ষিণ ব্রহ্ম, আরাকান ও তেনাসেরিম জয় করেন।


  • কুশাসনের অজুহাতে রাজ্য দখল: ডালহৌসি কুশাসনের অভিযােগে অযােধ্যা, সিকিমের একাংশ ও বেরার দখল করে নেন।


  • স্বত্ববিলােপ নীতির প্রয়ােগ: ডালহৌসি স্বত্ববিলােপ নীতির (১৮৪৮ খ্রি.) মাধ্যমে সাতারা, জয়েৎপুর, সম্বলপুর, বাঘটি, ভগৎ, উদয়পুর, ঝাসি, নাগপুর প্রভৃতি স্থান দখল করেন।


উপসংহার: সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শক্তি দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সক্রিয় উদ্যোগের দ্বারা ভারতে সুবিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তােলে।


সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি কী? ভারতীয়দের মধ্যে এই নীতির কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?


ব্রিটিশ শাসনকালে মধ্য ভারতে দলিত সম্প্রদায় কীরূপ সামাজিক বৈষম্যের শিকার হত? এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা দলিত শ্রেণির আন্দোলনের সূত্রপাত ও প্রসার সম্পর্কে আলােচনা করাে।


ব্রিটিশ শাসনকালে দক্ষিণ ভারতে মন্দিরে প্রবেশ সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পরিচয় দাও।