সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি কী? ভারতীয়দের মধ্যে এই নীতির কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি

ব্রিটিশ সরকার ভারতে তাদের শাসনকে নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী করার উদ্দেশ্যে হিন্দু, মুসলিম-সহ বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। এজন্য সরকার ভারতে বিভাজন ও শাসননীতি অনুসরণ করে। সরকারের বিভাজন ও শাসননীতিকে কার্যকরী করতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডােনাল্ড ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক নির্বাচনের কথা ঘােষণা করেন। তার এই নীতি 'সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা' নামে পরিচিত।


ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র্যামসে ম্যাকডােনাল্ড কর্তৃক সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির দ্বারা一


  • [1] মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ, ভারতীয় খ্রিস্টান, ইঙ্গ ভারতীয়, ইউরােপীয় প্রভৃতি বিভিন্ন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে পৃথক নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়। অর্থাৎ, এই নীতির দ্বারা মুসলিমদের জন্য সংরক্ষিত আসনে শুধু মুসলিমরা বা শিখদের জন্য সংরক্ষিত আসনে শুধু শিখরা নির্বাচিত হওয়ার অধিকার পাবে।


  • [2] হিন্দু সম্প্রদায়কে বর্ণহিন্দু, নিম্নবর্ণের হিন্দু বা দলিত, অস্পৃশ্য হিন্দু প্রভৃতি ভাগে বিভক্ত করে তাদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।


  • [3] কোনাে কোনাে নির্বাচন কেন্দ্রে শুধু অস্পৃশ্য সম্প্রদায়কে ভােটদানের অধিকার দেওয়া হয়।


সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির প্রতিক্রিয়া


[1] সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জয়: সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির মাধ্যমে মুসলিম লিগের যাবতীয় সাম্প্রদায়িক দাবিদাওয়া মেনে নেওয়া হয়। শুধু বাকি থাকে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে পৃথক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। ফলে আপাতত মুসলিম সাম্প্রদায়িক রাজনীতির ব্যাপক জয় ঘােষিত হয় এবং লিগের মানসিক শক্তি যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। অবশ্য জাতীয়তাবাদী মুসলিম নেতারা সরকারের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি সমর্থন করেননি।


[2] গান্ধিজির অনশন: জাতীয় কংগ্রেস সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতির তীব্র বিরােধিতা করে। গান্ধিজি সরকারের এই নীতির প্রতিবাদে ২০ সেপ্টেম্বর জারবেদা জেলে আমরণ অনশন করলে তার জীবনরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস নেতারা আইন অমান্য আন্দোলন পরিচালনায় গুরুত্ব না দিয়ে দলিত সম্প্রদায়ের নেতা ড. বি. আর. আম্বেদকরের সঙ্গে আলােচনায় বেশি গুরুত্ব দেন।


[3] পুনা চুক্তি: সরকারের সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘােষণার পরিপ্রেক্ষিতে দলিত নেতা ড. বি. আর. আম্বেদকর ও গান্ধিজির মধ্যে আলােচনার পর উভয়ের মধ্যে পুনা চুক্তি (২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৩২ খ্রি.) স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির দ্বারা—


  • [i] আম্বেদকর দলিত হিন্দুদের পৃথক নির্বাচনের দাবি ত্যাগ করেন ও হিন্দুদের যৌথ নির্বাচনের নীতি মেনে নেওয়া হয়।


  • [ii] সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারার মাধ্যমে তফশিলি সম্প্রদায় যতগুলি আসন পেত, তার দ্বিগুণ আসন তাদের জন্য সংরক্ষিত হয়।


  • [iii] গান্ধিজি ২৬ সেপ্টেম্বর অনশন ভঙ্গ করেন।


[4] পৃথক পাকিস্তানের দাবি: সাম্প্রদায়িক বাঁটোয়ারা নীতি ঘােষণার পর লিগের পৃথক পাকিস্তানের দাবি আরও জোরালাে হয়। ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে চৌধুরী রহমত আলি ও তার অনুগামীরা 'এখন অথবা কখনও না’ (Now or never) শীর্ষক চার পাতার এক পুস্তিকায় ভারতের মুসলিম-অধ্যুষিত পাঁচটি প্রদেশ-পাঞ্জাব, আফগান প্রদেশ বা উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, কাশ্মীর, সিন্ধু এবং বেলুচিস্তান নিয়ে পৃথক পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানায়। কিছুকাল পরে তিনি পাকিস্তান জাতীয় আন্দোলন শুরু করেন এবং প্রস্তাবিত 'পাকিস্তান' ভূখণ্ডে কয়েকটি প্রচারকেন্দ্র স্থাপন করেন। কিছুকাল পরই ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে লিগের লাহাের অধিবেশনে পৃথক পাকিস্তানের দাবি জানানাে হয়।


মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে আলােচনা করাে। লিগ প্রতিষ্ঠার পর প্রথমদিকে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে লিগের সম্পর্ক কীরূপ ছিল?


অসহযােগ আন্দোলনের পরবর্তীকালে ভারতে সাম্প্রদায়িক বিভেদ বৃদ্ধি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


নেহরু রিপাের্ট কী? মহম্মদ আলি জিয়ার ‘চোদ্দো দফা দাবি' সম্পর্কে কী জান?