মার্কেন্টাইল মূলধন অর্থনীতির অবসান কীভাবে ঘটেছিল?

মার্কেন্টাইল মূলধন অর্থনীতির অবসানের কারণসমূহ

[1] শিল্পপুঁজির উত্থান: আঠারাে শতকের মাঝামাঝি সময়কাল থেকে মার্কেন্টাইলবাদ জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করে। শিল্প, কৃষি, নির্মাণ, পরিবহণ প্রভৃতি ক্ষেত্রে মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে যে পুঁজি বিনিয়ােগ করা শুরু হয় তা সাধারণভাবে শিল্প পুঁজি বা শিল্পমূলধন নামে পরিচিত। এই শিল্পপুঁজির উত্থান ও প্রসার শুরু হয় আঠারাে শতকের শেষদিক থেকে, বিশেষত উনিশ শতকের ইউরােপের শিল্পবিপ্লবের পর থেকে। শিল্প ও বাণিজ্যের নতুন নতুন ক্ষেত্রগুলিতে এই পুঁজি বিনিয়ােগ করে বাড়তি মুনাফা লাভ করার নীতি গ্রহণ করে ইউরোপের শিল্পবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলি।


[2] মার্কেন্টাইলবাদের নানান ভুলত্রুটি: অ্যাডাম স্মিথ, মার্ক ব্লখ, টি এইচ মার্শাল, হিল্টন, মরিস ডব প্রমুখ ঐতিহাসিক ও অর্থনীতিবিদ মার্কেন্টাইলবাদের নানা ভুলত্রুটি তুলে ধরে এর সমালােচনা করেন। এই মার্কেন্টাইলবাদের নানা ভুলত্রুটিগুলি এই মতবাদের পতন ডেকে আনে। যেমন一


  • সম্পদের পুনর্বিনিয়ােগ: অ্যাডাম স্মিথ-এর বন্ধু ডেভিড হিউম মার্কেন্টাইলবাদের সমালােচনা করে বলেন যে, সঞ্চিত অর্থ ও সম্পদের ভাণ্ডার বৃদ্ধি করে নেয়, তা পুনরায় বিনিয়ােগের মাধ্যমেই দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হতে পারে।


  • সরকারি হস্তক্ষেপের বিরােধিতা: ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ অ্যাডাম স্মিথ প্রমুখ বলেন যে, বাণিজ্যে সংরক্ষণ নীতি বা অযথা হস্তক্ষেপের দ্বারা নয়, অবাধ বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি মজবুত হতে পারে।


  • বৈদেশিক বাণিজ্যে ক্ষতি: মার্কেন্টাইলবাদের ফলে দেশীয় শিল্প বৈদেশিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার হাত থেকে রক্ষা পেলেও শিল্প সংরক্ষণ নীতির ফলে বৈদেশিক বাণিজ্য বাধা পায়। কারণ প্রতিটি দেশই নিজের দেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়িয়ে আমদানি কমানাের চেষ্টা চালায়।


  • সুস্পষ্ট ধারণার অভাব: মার্কেন্টাইলবাদে অর্থনীতি সম্পর্কে সচেতনতা, বাস্তববােধ, উৎপাদন, বাণিজ্যিক লাভ-লােকসান প্রভৃতি সম্পর্কে ধারণার অভাব ছিল। এসব কারণে মার্কেন্টাইলবাদ বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছু কালের মধ্যেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।


[3] সম্পদের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা: মার্কেন্টাইলবাদ প্রকৃত অর্থে সম্পদের ভুল ব্যাখ্যা দেয়। এতে বলা হয় পৃথিবীতে প্রাকৃতিক সম্পদ সীমিত। কিন্তু প্রকৃত অর্থে প্রাকৃতিক ভাণ্ডারে সঞ্চিত সম্পদের পরিমাণ বা তার উৎস অসীম। পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যাণে নিত্যনতুন সম্পদের নানা উৎসের খোঁজ মিলছে। অপরদিকে অর্থনীতির মানদণ্ডে বলা যায় এক ব্যক্তির কাছে অর্জিত সম্পদ অন্য ব্যক্তির হারানাে সম্পদের সমানুপাতিক। এ ছাড়াও মাকেন্টাইল মতবাদে প্রাকৃতিক সম্পদ হিসেবে সকল যুগে একই ধরনের সম্পদের উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু বাস্তব হল আগের যুগের সম্পদ যে পরের যুগে সম্পদ বলে বিবেচিত নাও হতে পারে।


[4] ভ্রান্ত উপনিবেশ নীতি: এই মতবাদে প্রচার করা হয় যে উপনিবেশগুলিকে সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি সেগুলির ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করছে কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তা নয়। প্রকৃত অর্থে উপনিবেশগুলির ওপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি উপনিবেশবাসীদের চরম শােষণ, নিপীড়ন শুরু করে। এর পরিণতি হিসেবে ধীরে ধীরে ইউরােপের দেশগুলি তাদের উপনিবেশগুলি হারায়। এই ভ্রান্ত উপনিবেশ নীতির কারণে মার্কেন্টাইলবাদ তার জনপ্রিয়তা হারায়।


১৮৭০ থেকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল বিশ্বের ইতিহাসে 'সাম্রাজ্যবাদের যুগ' হিসেবে পরিচিত কেন?


ঔপনিবেশিক ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব | উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব


'মার্কেন্টাইলবাদ' / 'মার্কেন্টাইল' মূলধন বলতে কী বােঝ? এই মতবাদের মূল বক্তব্য তুলে ধরাে।