১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং আইনের শর্তাবলি কী ছিল? রেগুলেটিং আইনের মূল্যায়ন করাে।

রেগুলেটিং আইন-এর শর্তাবলি

১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং আইন-এর প্রধান দুটি দিক হল [1] ইংল্যান্ডে কোম্পানির পরিচালক সভা (Board of Directors) সম্পর্কিত দিক, [2] ভারতে কোম্পানির শাসনব্যবস্থা সম্পর্কিত দিক।


[1] কোম্পানির পরিচালক সভা: বিলাতে কোম্পানির পরিচালক সভা ও মালিক সভার গঠনতন্ত্রে কিছু পরিবর্তন ঘটানাে হয়। আইনে বলা হয় যে—

  • [i] এখন থেকে ৫০০ পাউন্ড শেয়ারের পরিবর্তে ১০০০ পাউন্ড শেয়ারের মালিকরা বণিক সভায় ভােটদানের অধিকার পাবে।
  • [ii] পরিচালক সভার সদস্য সংখ্যা হবে ২৪। সদস্যরা ৪ বছরের জন্য নির্বাচিত হবেন।
  • [iii] প্রতি বছর ১/৪ অংশ (অর্থাৎ ৬ জন) সদস্য পদত্যাগ করবেন।
  • [iv] সরকারের অনুমােদনক্রমে পরিচালক সভা ভারত শাসনের জন্য গভর্নর-জেনারেল ও তার কাউন্সিলের সদস্যদের নিযুক্ত করবেন।
  • [v] পরিচালক সভা প্রতি ৬ মাস অন্তর ভারত সম্পর্কিত সামরিক, বেসামরিক ও রাজস্ব বিষয়ক তথ্যাদি সরকারকে জানাতে বাধ্য থাকবে।

[2] কোম্পানির শাসনব্যবস্থা: ভারত শাসনের বিষয়ে রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটানাে হয়। যেমন—

  • [i] ভারতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কেন্দ্রীয় বাংলা, বােম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি নিয়ে গঠিত হয়।
  • [ii] বাংলা প্রেসিডেন্সির গভর্নর পদের নাম হয় 'গভর্নর-জেনারেল। তিনি বােম্বাই এবং মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওপর কর্তৃত্ব করার অধিকার পান। ওয়ারেন হেস্টিংস ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ও ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল নিযুক্ত হন।
  • [iii] গভর্নর- জেনারেলের অধীনে ৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি 'কাউন্সিল গঠিত হয়। এই সদস্যরা ৫ বছরের জন্য নিযুক্ত হন। এই কাউন্সিলের প্রথম চারজন সদস্য ছিলেন ক্লেভারিং, মনসন, বারওয়েল এবং ফিলিপ ফ্রান্সিস।
  • [iv] কাউন্সিলের পরামর্শক্রমে গভর্নর-জেনারেল কার্য পরিচালনা করতেন এবং সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত গ্রহণ করতেন।
  • [v] বাংলার অনুরূপ বােম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সিতে একজন করে গভর্নর ও ৪ জন সদস্যবিশিষ্ট কাউন্সিল গঠিত হয়।
  • [vi] ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে একজন প্রধান বিচারপতি ও ৩ জন সাধারণ বিচারপতি নিয়ে কলকাতায় সুপ্রিমকোর্ট স্থাপিত হয়। এর প্রথম প্রধান বিচারপতি ছিলেন স্যার এলিজা ইম্পে।

রেগুলেটিং আইন-এর মূল্যায়ন


১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং আইন-এর বিভিন্ন ত্রূটিবিচ্যুতি এবং গুরুত্ব উভয়ই ছিল, যেমন


[১] ত্রূটি: ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং আইন-এর প্রধান ত্রূটি-বিচ্যুতি ছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট না হওয়া, যেমন—

  • [i] গভর্নর জেনারেল ও তার কাউন্সিলের সদস্যদের মধ্যে ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট হয়নি।
  • [ii] বােম্বাই ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির ওপর বাংলার গভর্নর-জেনারেলের ক্ষমতাও সুনির্দিষ্ট হয়নি। ফলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • [iii] দেশীয় বিচারালয়গুলির ওপর সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা সুনির্দিষ্ট না হওয়ায় দেশীয় বিচারালয়গুলির ওপর সুপ্রিমকোর্ট হস্তক্ষেপ শুরু করে।
  • [iv] গভর্নর-জেনারেলের সঙ্গে সুপ্রিমকোর্টের সম্পর্ক সুনির্দিষ্ট না হওয়ার কারণে বিভিন্ন স্তরে ক্ষমতার লড়াই দেখা দেয় এবং প্রশাসনে সমস্যার সৃষ্টি হয়।

[২] গুরুত্ব: ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দের রেগুলেটিং অ্যাক্ট-এর বিভিন্ন গুরুত্ব ছিল, যেমন—

  • [i] এই আইনের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীকালে ইঙ্গ- ভারতীয় প্রশাসন গড়ে ওঠে।
  • [ii] সর্বপ্রথম এই আইনের মাধ্যমে ভারতে একটি সুনির্দিষ্ট প্রশাসনিক কাঠামাে প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
  • [iii] এটি হল ভারতের প্রথম লিখিত আইন যা পূর্বেকার অলিখিত ও স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটানাের উদ্যোগ নেয়।
  • [iv] এই আইনের দ্বারাই ব্রিটিশ সরকার সর্বপ্রথম কোম্পানির ওপর নিয়ন্ত্রণ আরােপের উদ্যোগ নেয়। মাইকেল এডওয়ার্ডস বলেন যে, এই আইন বাণিজ্যশক্তি হিসেবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পতনের সূচনা করে।
  • [v] এই আইনের দ্বারা ভারতে প্রথম নিয়মতান্ত্রিক শাসনের সূত্রপাত ঘটে।