দক্ষিণ ভারতে ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্বের কারণ সম্পর্কে আলােচনা করাে। ইঙ্গ-ফরাসি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফরাসিরা কেন পরাজিত হয়েছিল?

দক্ষিণ ভারতে ইগ-ফরাসি দ্বন্দ্বের কারণ

[1] মার্কেন্টাইল মতবাদ: বাণিজ্যে একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে অষ্টাদশ শতকে মার্কেন্টাইলবাদ নামে অর্থনৈতিক মতবাদ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই সুবাদে ভারতীয় রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে ইংরেজ ও ফরাসিরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে।


[2] মােগল শক্তির দুর্বলতা: মােগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মােগল শক্তির দ্রুত অবক্ষয় শুরু হয়। এই সুযােগে ইংরেজ ও ফরাসিরা ভারতে নিজেদের বাণিজ্যিক একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সচেষ্ট হয়ে ওঠে।


[3] ইউরােপে বিবাদ: বিভিন্ন কারণে ইউরােপে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের মধ্যে বিবাদের ফলে ইউরােপে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ত। ইউরােপের যুদ্ধের সূত্র ধরে ভারতেও ইঙ্গ-ফরাসি সংঘাত শুরু হয়।


[4] দেশীয় রাজাদের দুর্বলতা: ইঙ্গ-ফরাসি শক্তি উপলব্ধি করেছিল যে, ইউরােপীয় শক্তির তুলনায় ভারতের দেশীয় রাজাদের সামাজিক শক্তি দুর্বল ছিল। এই দুর্বলতার সুযােগে ইঙ্গ-ফরাসি উভয় শক্তি দেশীয় রাজ-সিংহাসনে নিজেদের হাতের পুতুল শাসক বা Puppet বসিয়ে এদেশের বাণিজ্যে একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠার নীতি গ্রহণ করে।


ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্বে ফরাসিদের পরাজয়ের কারণ


ইঙ্গ-ফরাসি দ্বন্দ্বের কারণ দক্ষিণ ভারতে তিনটি ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধ বা কর্ণাটকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধ (১৭৫৬-৬৩ খ্রি.) ভারতের ফরাসি শক্তি চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয় এবং ভারতে ইংরেজদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।


[1] বাণিজ্যে অবহেলা: বাণিজ্যিক সুযােগসুবিধা লাভের উদ্দেশ্যেই ইংরেজরা ভারতের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে। অন্যদিকে ফরাসিরা ভারতের বাণিজ্যে যথেষ্ট অবহেলা করে এবং বাণিজ্যে ব্যর্থ হয়ে রাজনীতিতে অংশ নেয়। ফলে তাদের সর্বদা ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অর্থসংকটে ভুগতে হয়।


[2] ইংরেজদের বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি: ভারতে ফরাসিদের তুলনায় ইংরেজদের বাণিজ্য বেশি সমৃদ্ধ ছিল। এই অবস্থায় কর্ণাটকের তৃতীয় যুদ্ধের আগে ইংরেজরা বাংলায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হলে বাংলার বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদও তারা দাক্ষিণাত্যে ফরাসিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহারের সুযােগ পায়। অন্যদিকে ভারতে ফরাসি কোম্পানির অর্থাভাব ছিল প্রবল।


[3] নৌবহরের অভাব: ভারতে ইংরেজরা তাদের শক্তিশালী নৌবহরের সাহায্যে সমুদ্র উপকূল নিয়ন্ত্রণ করত। ইঙ্গ-ফরাসি যুদ্ধেও ইংরেজরা নৌবহরের সুবিধা পায়। শক্তিশালী নৌবহরের অভাবে ফরাসিরা যুদ্ধে পিছিয়ে পড়ে।


[4] শিল্পবিপ্লব: অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লব সংঘটিত হলে ইংরেজরা স্বদেশের কলকারখানাগুলির জন্য কাঁচামাল সংগ্রহে এবং উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য বাজার দখল করতে অত্যন্ত উৎসাহ ও তৎপরতা দেখায়। কিন্তু ফরাসিদের মধ্যে এরূপ উৎসাহ দেখা যায়নি।


[5] জনসমর্থনের অভাব: ব্রিটিশ কোম্পানির পিছনে ব্যাপক জনসমর্থন ছিল। কিন্তু ফরাসি কোম্পানি ছিল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন একটি প্রতিষ্ঠান যার পিছনে কোনাে জনসমর্থন ছিল না। তাই প্রথম থেকেই ফরাসি কোম্পানি যথেষ্ট দুর্বল ছিল।


[6] উপনিবেশ রক্ষায় অনাগ্রহ: সপ্তবর্ষের যুদ্ধের সময় ইউরোপ এবং আমেরিকায় ইঙ্গ-ফরাসি বিবাদ চললেও ইংরেজরা ভারত-সহ বিভিন্ন উপনিবেশগুলি রক্ষায় আগ্রহী ছিল। কিন্তু ফরাসি সম্রাট ও মন্ত্রীরা ইউরােপে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় বেশি আগ্রহী ছিল।


[7] সেনাপতির ত্রূটি: দাক্ষিণাত্য ইঙ্গ-ফরাসি বিবাদের সময়, সান্ডার্স, আয়ার কূট, ফোর্ড, লরেন্স প্রমুখ ইংরেজ সেনাপতি যুদ্ধে অসামান্য যােগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছিলেন। কিন্তু ফরাসি সেনাপতি লালির ব্যবহার ছিল খুবই রুক্ষ, ডুপ্লে ছিলেন অত্যন্ত দাম্ভিক ও উগ্র। যুদ্ধবিদ্যায় তাদের দক্ষতাও ছিল কম।


[8] ফরাসি সেনাপতিদের ভুল: ফরাসি সেনাপতিদের বিভিন্ন ভুলত্রুটি ইংরেজদের বিরুদ্ধে তাদের পরাজয়কে অনিবার্য করে তােলে। কর্ণাটকের দ্বিতীয় যুদ্ধের সময় ডুপ্লের কয়েকটি ভুল, ডুপ্লের অপসারণ, পরবর্তীকালে লালির নির্দেশে হায়দ্রাবাদ থেকে বুসীর অপসারণ প্রভৃতি ইংরেজদের যথেষ্ট সুবিধা করে দিয়েছিল।


মােগল সাম্রাজ্যের পতনের সময় ভারতে নবােথিত বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তিগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে ভারতে ইংরেজ শক্তির প্রসার রােধে বিভিন্ন ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধগুলির বিবরণ দাও।


ইংরেজদের সঙ্গে টিপু সুলতানের সম্পর্ক লেখাে।