প্রান্তীয় বাল্যের বিকাশগত বৈশিষ্ট্য ও চাহিদাগুলি সম্পর্কে যা জনি লেখাে।

প্রান্তীয় বাল্যের বিকাশগত বৈশিষ্ট্য

সাধারণত আট থেকে বারাে বছর বয়সকালকে বলা হয় শিশুর প্রান্তীয় বাল্য। প্রান্তীয় বাল্যের বিকাশগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল一


(১) দৈহিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্য: প্রান্তীয় বাল্যে দৈহিক দিক থেকে শিশুর বৃদ্ধির হার কম হয়। তবে এই সময় দেহের অভ্যন্তরীণ যন্ত্রগুলি পরিপূর্ণতা লাভ করে। হৃৎপিণ্ড, পেশিতন্ত্র প্রভৃতি পরিণত হওয়ায় শিশু শক্তিশালী হয় এবং তার কর্মক্ষমতা, ক্লান্তি প্রতিরােধের ক্ষমতা এবং সহ্যশক্তি বৃদ্ধি পায়। মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় দৈহিক বিকাশে এগিয়ে থাকে।


(২) মানসিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্য: এই বয়সে শিশু নিজের সঙ্গে বাইরের জগতের পার্থক্য পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারে। বিভিন্ন রকমের তথ্য সংগ্রহে আগ্রহ প্রকাশ করে, শিখন ও স্মৃতিশক্তি চর্চার ফলে উন্নত হয়, যুক্তিভিত্তিক চিন্তনের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।


(৩) সামাজিক বিকাশগত বৈশিষ্ট্য: বাড়িতে এবং বিদ্যালয়ে অভব্যতা অধিক মাত্রায় দেখা দেয়, শিশু প্রাপ্তবয়স্কদের নির্ধারিত নিয়মকানুনের তােয়াক্কা করে না।


(৪) প্রাক্ষোভিক বিকাশ ও বৈশিষ্ট্য: প্রক্ষোভ বহিঃপ্রকাশের পরিবর্তন ঘটে। এই পর্যায়ের শেষের দিকে বালক-বালিকারা সামাজিক পরিস্থিতিতে প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, আবেগের প্রকাশ আরও নির্দিষ্ট হয়।


প্রান্তীয় বাল্যের দৈহিক চাহিদা


প্রান্তীয় বাল্যে ছেলেমেয়েদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের দৈহিক চাহিদা পরিলক্ষিত হয়। যেমন


(১) সক্রিয়তার চাহিদা: প্রান্তীয় বাল্যে শিশুদের মধ্যে খুব বেশি সক্রিয়তা লক্ষ করা যায়।


(২) খাদ্যের চাহিদা: অতি সক্রিয়তার কারণে প্রান্তীয় বাল্যে শিশুদের মধ্যে খাদ্যের প্রতি বিশেষ চাহিদা দেখা যায়। তারা নিজেদের পছন্দমতাে খাবার খেতে চায়।


(৩) পুনরাবৃত্তির চাহিদা: প্রান্তীয় বাল্যে পুনরাবৃত্তির চাহিদাটি বৃদ্ধি পায়। ফলে এই স্তরে শিশুরা যে-কোনাে বিষয় তুলনামূলকভাবে কম সময়ে মুখস্থ করে ফেলে।


প্রান্তীয় বাল্যের মানসিক চাহিদা


প্রান্তীয় বাল্যে ছেলেমেয়েদের মানসিক চাহিদা খুব বেশি হয়। এই স্তরের চাহিদাগুলি হল


(১) মানসিক নিরাপত্তার চাহিদা: মানসিক নিরাপত্তার চাহিদা এই বয়সে খুব বেশি হয়। শিশুরা বয়স্কদের এবং তার দলের সভ্যদের কাছ থেকে স্নেহ, ভালোবাসা, সমর্থন ইত্যাদি প্রত্যাশা করে।


(২) দায়িত্বপালনের চাহিদা: এই চাহিদার জন্য প্রান্তীয় বাল্যের ছেলেমেয়েরা যে-কোনাে দায়িত্বপূর্ণ কাজে এগিয়ে যায় এবং আনন্দের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে।


(৩) সাহসিকতার চাহিদা: এই স্তরে শিশুদের মধ্যে সাহসী কাজকর্মের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।


(৪) কল্পনা ও জ্ঞানের চাহিদা: প্রান্তীয় বাল্যে শিশুদের মধ্যে কল্পনা ও জ্ঞানের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।


(৫) অনুসন্ধানের ও অনুকরণের চাহিদা: প্রান্তীয় বাল্যে শিশুদের মধ্যে অনুসন্ধানের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বৌদ্ধিক প্রক্রিয়াগুলি উন্নত হওয়ার ফলে সব কিছুর ভিতরে প্রবেশ করতে চায়।


প্রান্তীয় বাল্যের সামাজিক চাহিদা


প্রান্তীয় বাল্যে শিশুদের মধ্যে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে। বিভিন্ন প্রকার সামাজিক চাহিদা লক্ষ করা যায়। যেমন


(১) সামাজিক পরিচিতির চাহিদা: এই স্তরের শিশুদের মধ্যে সামাজিক পরিচিতির চাহিদা লক্ষ করা যায়।


(২) দলবদ্ধ হওয়ার চাহিদা: এই স্তরের ছেলেমেয়েদের দলপ্রীতি প্রকট হয়। দলের নিয়মকানুন তারা মেনে চলে। দলের প্রতি তারা অনুগত থাকে।


(৩) সমবেদনা ও সহযােগিতার চাহিদা: প্রান্তীয় বাল্যের ছেলেমেয়েদের মধ্যে সমবেদনা ও সহযােগিতার চাহিদা দেখা যায়। বিশেষ করে নিজের দলের সদস্যদের প্রতি তারা সহানুভূতিশীল হয়।


প্রান্তীয় বাল্যের চাহিদাগুলি যথাযথভাবে পূরণের ওপর শিশুর কৈশাের বা বয়ঃসন্ধিকালীন বিকাশ নির্ভর করে। তাই বাবা-মা ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিশুর এই চাহিদাগুলির পরিতৃপ্তির জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।


বৃদ্ধি ও বিকাশের অর্থ ও সংজ্ঞা ব্যাখ্যা করাে। এই প্রসঙ্গে বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে।


বিকাশের বৈশিষ্ট্য ও নীতি উল্লেখ করাে। বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে পার্থক্যগুলি কী?


কৈশােরের চাহিদাগুলি কী? মাধ্যমিক শিক্ষা কীভাবে এই বয়সের ওই চাহিদাগুলি পূরণে সহায়তা করতে পারে?


মানবশিশুর জীবনবিকাশের পর্যায় বলতে কী বােঝায়? এইরূপ পর্যায়ের গুরুত্ব বা তাৎপর্য লেখাে।


শৈশবের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি লেখে। ওই সময় শিশুর মধ্যে কী কী চাহিদা দেখা দেয়, তা আলােচনা করাে।

অথবা, শৈশব বলতে কী বােঝ? শৈশবের বিকাশমূলক বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে।


বাল্যকালের পর্যায় বলতে কী বােঝায়? বাল্যকালের বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে। এই স্তরের শিশুদের শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি বর্ণনা করাে।


প্রারম্ভিক বাল্য বলতে কী বােঝায়? প্রারম্ভিক বাল্যের বৈশিষ্ট্য কী? প্রারম্ভিক বাল্যের চাহিদাগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করাে।