হ্যামলেট বা ক্ষুদ্র গ্রাম কী? গ্রামীণ বসতির বিন্যাস আলােচনা করাে।

হ্যামলেট বা ক্ষুদ্র গ্রাম

হ্যামলেট (Hamlet) হল প্রকৃতপক্ষে গ্রামের প্রধান অংশ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এক-একটি পাড়া বা উপগ্রাম (Satellite village).


বৈশিষ্ট্য

  • এগুলি সাধারণত গ্রামের প্রধান অংশ থেকে একটু দূরে অবস্থান করে। ক্ষেত্রমান বা পরিসরে এরা বেশ ছােটো।

  • এই বসতিগুলির নামের শেষে টোলা বা টুলি (যেমন—পূর্বতন কুমােরটুলি ও আহিরিটোলা) বা নামের আগে ছােটো বা পট যুক্ত থাকে।

  • এই ধরনের বসতিগুলিতে প্রধানত তথাকথিত অস্পৃশ্য শ্রেণির লােকেরা বাসকরে।


উদাহরণ : অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশের আরাকু ভ্যালির কাছে কোট্টাভালাসা ও পাপুড়াভালাসা হ্যামলেট বা ক্ষুদ্র গ্রামের উদাহরণ।


গ্রামীণ বসতির বিন্যাস


গ্রামের বসতবাড়িগুলি নদীর পাড়, স্বাভাবিক বাঁধ, জলের উৎস স্থান, নদী পারাপারের স্থান, রাস্তা বা রাস্তার সংযােগস্থল, কৃষিজমি, হাট বাজার, মন্দির, মসজিদ ইত্যাদিকে অনুসরণ করে বা কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। তখন এই বাড়িগুলির বিভিন্ন রকম বাহ্যিক রূপ বা জ্যামিতিক নক্সা ফুটে ওঠে। একে বলা হয় বসতির বিন্যাস বা ধাঁচ। গ্রামীণ বসতির কয়েকটি প্রধান বিন্যাস আলােচনা করা হল


[1] আয়তাকার বিন্যাস : গ্রামীণ বসতির বাহ্যিক রূপটি আয়তক্ষেত্রের মতাে হলে আয়তাকার বিন্যাস গঠিত হয়। কৃষিজমির আয়তাকার আকারের ওপর নির্ভর করে বসতির এরূপ বিন্যাস গড়ে ওঠে। ছােটোনাগপুর অঞ্চলের ডালসালমা, প্রতাপপুর, এডাল গ্রামগুলি আয়তাকার জনবসতির উল্লেখযােগ্য উদাহরণ।


[2] বর্গাকার বিন্যাস : এটি আয়তাকার জনবসতির প্রাথমিক রূপ। কৃষিজমির মাঝে পায়ে চলা পথের সংযােগস্থলে বর্গাকৃতি বসতি গড়ে ওঠে। ঝাড়খণ্ডের দাইপাড় গ্রাম বর্গাকার বসতির উল্লেখযােগ্য উদাহরণ।


[3] শূন্যগর্ড বর্গাকার বা আয়তাকার বিন্যাস : আয়তাকার বা বর্গাকার বসতির মাঝখানে চৌক জলাশয়, মন্দির, মসজিদের জন্য সংরক্ষিত জায়গার চারদিকে বসতির এ ধরনের বিন্যাস দেখা যায়। ঝাড়খণ্ডের পালামৌ জেলায় এধরনের অনেক জনবসতি দেখা যায়।


[4] বৃত্তাকার বিন্যাস : বসতি স্থাপনের আকর্ষণীয় উপাদান, যেমন—মন্দির, মসজিদ, পুকুর প্রভৃতি অবস্থানকে কেন্দ্র করে বৃত্তাকারে এই বসতি গড়ে ওঠে। ছােটোনাগপুর মালভূমির ধানওয়ার একটি বৃত্তাকার বসতি।


[5] নক্ষত্রকার বা তারকাকৃতি বিন্যাস : বৃত্তাকার বসতি যখন পায়ে-চলা পথ বা অন্য সড়ক পথ বরাবর বিভিন্ন দিকে বিস্তৃত হয় তখন তার আকার নক্ষত্রের মতাে হয়। বিহারের চম্পারণে এইরূপ বসতি দেখা যায়।


[6] ত্রিভূজাকৃতি বিন্যাস : নদীর সংগমস্থলে সাধারণত বসতির এরূপ বিন্যাস গড়ে ওঠে।


[7] নীহারিকা বিন্যাস : কোনাে একটি আকর্ষণীয় স্থানকে কেন্দ্র করে যাতায়াতের পথ কুণ্ডলী আকারে বিস্তৃত হলে বসতিগুলিও কুণ্ডলী আকারে বিস্তৃত হয়। তখন নীহারিকা বিন্যাস সৃষ্টি হয়।


[8] রৈখিক ও দণ্ডকৃতি বিন্যাস : রাস্তা দুধার বরাবর, স্বাভাবিক বাঁধ বরাবর, পাহাড়ের সমােন্নতি স্থান বরাবর কিংবা সংকীর্ণ উপত্যকা বরাবর বসতি গড়ে উঠলে তা রৈখিক ধাঁচের গড়ে ওঠে। এরূপ অবস্থানে বাসগৃহগুলি যদি বেশি আড়াআড়িভাবে বিস্তৃত হয়, তখন তা দেখতে দণ্ডাকৃতি হয়। রৈখিক বসতি আবার ‘L, T’, 'Y' আকৃতির, বক্ররৈখিক অথবা অঙ্গুরীয় ধরনের হয়।