ভারতে স্বস্থানিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ সম্পর্কে আলােচনা করাে | জীববৈচিত্র্য ও মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আলােচনা করাে।

ভারতের স্বস্থানিক জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ

বিভিন্ন প্রজাতিগুলিকে তাদের নিজ আবাসস্থলে রক্ষা করার পদ্ধতিকে জীববৈচিত্র্যের স্বস্থানিক বা অন্তঃক্ষেত্রীয় সংরক্ষণ (In-Situ Conservation) বলা হয়। যেমন রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারকে সুন্দরবন অভয়ারণ্যে সংরক্ষণ করা হয়। স্বস্থানিক সংরক্ষণের পদ্ধতিগুলি নীচে আলােচিত হল一


(১) জাতীয় উদ্যান : ভারত সরকারের আইন দ্বারা জাতীয় উদ্যান (National Park) নিয়ন্ত্রিত হয়। এখানে শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মূলত গবেষণা, শিক্ষা এবং বিনােদনের জন্য গড়ে তােলা হয়। 2011 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে 102 টি জাতীয় উদ্যান গড়ে উঠেছে। উল্লেখযােগ্য জাতীয় উদ্যানের উদাহরণ হল—উত্তরাখণ্ডের করবেট, মধ্যপ্রদেশের কানহা ইত্যাদি।


(২) অভয়ারণ্য : বণ্যপ্রাণীরা যাতে নির্ভয়ে চলাফেরা এবং প্রজননে লিপ্ত হতে পারে তার জন্য অভয়ারণ্য (Sanctuary) গড়ে তােলা হয়েছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশে এখানে শিকার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ভারতে বর্তমানে 515 টি অভয়ারণ্য রয়েছে। ভারতের কয়েকটি উল্লেখযােগ্য অভয়ারণ্য হল- পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ, বেথুয়াডহরি; কর্ণাটকের সােমেশ্বর ইত্যাদি।


(৩) সংরক্ষিত বনাঞ্চল : Indian Forest Act 1927 অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চল (Reserve Forest)- এ প্রাণী শিকার ও গাছ কাটা নিষিদ্ধ। ভারতের কয়েকটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল হল পশ্চিমবঙ্গের গরুমারা, চাপরামারি; অসমের কাজিরাঙা ইত্যাদি।


(৪) সূরক্ষিত বনভূমি : জনগণ সরকারি অনুমতি সাপেক্ষে সুরক্ষিত বনভূমি (Protected Forest)-কে ব্যবহার করতে পারে। তবে এখানে পশুশিকার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।


(৫) জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল : জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য UNESCO-এর প্রােগ্রাম অনুযায়ী Man and the Biosphere Reserve (MAB) তৈরি করা হয়েছে। 2011 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চল (Biosphere Reserve)-এর সংখ্যা 18টি, যার মধ্যে 9টি MAB স্বীকৃত। ভারতের অন্যতম জীবমণ্ডল সংরক্ষণ হল পশ্চিমঘাট পর্বতের নীলগিরি। একটি জীবমণ্ডল সংরক্ষণ অঞ্চলের মধ্যে তিনটি বলয় থাকে—


  • কেন্দ্রীয় অঞ্চল (Core Zone), 

  • মধ্যবর্তী অঞ্চল (Buffer Zone) ও ও 

  • পরিবর্তনশীল অঞ্চল (Transitional Zone)।


জীববৈচিত্র্য ও মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক


মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক দু-ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। [1] মানুষের ওপর জীববৈচিত্র্যের প্রভাব ও [2] জীববৈচিত্র্যের ওপর মানুষের প্রভাব।


[1] মানুষের ওপর জীববৈচিত্রের প্রভাব : মানুষ জীববৈচিত্র্য নির্ভর প্রাণী। মানুষের খাদ্যের উৎসই হল জীববৈচিত্র্য। তা ছাড়া জীবিকা বস্ত্র ও বাসস্থানের বিভিন্ন উপকরণগুলিও আসে জীববৈচিত্র্য থেকে। প্রকৃতপক্ষে জীববৈচিত্র্যের জন্যই পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব বজায় রয়েছে।


[2] জীববৈচিত্র্যের ওপর মানুষের প্রভাব : অতীত থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মানুষের যত উন্নতি ঘটেছে, মানুষ তত বেশি করে জীববৈচিত্র্যকে প্রভাবিত করেছে। মানুষের বিভিন্ন অবিবেচিত ক্রিয়াকলাপ যেমন বৃক্ষচ্ছেদন, চোরাশিকার, অতিশিকার, কৃষি ও বাসভূমির অপরিকল্পিত সম্প্রসারণ, পরিবেশ দূষণ ও শিল্প স্থাপন ইত্যাদি কারণে আজ জীববৈচিত্র্য মহা সংকটের সম্মুখীন। যেখানে একটি উন্নত প্রজাতি সৃষ্টি হতে 2,000 থেকে 1.00,000 প্রজন্ম সময়কাল লেগে যায় সেখানে মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষ প্রভাবে প্রতিদিন গড়ে প্রায় 50 থেকে 200 টি প্রজাতি প্রকৃতি থেকে লােপ পেয়ে যাচ্ছে, যা ভীষণ উদ্বেগের। দেরিতে হলেও বর্তমানে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য বহু মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। তাই জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য মানুষ বহু সংস্থা স্থাপন ও নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।


ভারতে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে?


জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের তাৎপর্যগুলি উল্লেখ করাে। ক্রান্তীয় অঞ্চলে সর্বাধিক জীববৈচিত্র্য দেখা যায় কেন?


ভারতীয় উপমহাদেশের জীববৈচিত্র্য হটস্পট অল সম্পর্কে আলােচনা করাে। ভারতে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী ও উদ্ভিদ প্রজাতির উল্লেখ করাে?


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)