বিপর্যয়-পূর্ব ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে আলােচনা করাে।

বিপর্যয়-পূর্ব ব্যবস্থাপনা

বিপর্যয় লঘুকরণের জন্য বিপর্যয়ের পূর্বে বিভিন্ন ব্যবস্থা বা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এইসব পরিকল্পনাগুলি পূর্বজ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে তােলা হয়। বিপর্যয়প্রবণ এলাকায় বিপর্যয়-পূর্ব ব্যবস্থাপনা রূপে যে সমস্ত পদ্থাগুলি অবলম্বন করা প্রয়ােজন সেগুলি হল一


(১) বিপর্যয় সম্পর্কিত গবেষণা : বিপর্যয় সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণার বিশেষ প্রয়ােজন। এর জন্যে

  • বিপর্যয়প্রবণ এলাকার মানচিত্র প্রস্তুত,

  • উচ্চমাত্রার বিপর্যয় এলাকা নির্ধারণ, 

  • অতীতের বিপর্যয় সম্পর্কে জ্ঞান আহরণ 

  • ঝুঁকির সঠিক মূল্যায়ন

ইত্যাদি বিষয়গুলিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।


(২) ঝুঁকির মূল্যায়ন : কোনাে একটি অঞ্চলে বিপর্যয়ের ঝুঁকি কী ধরনের বা কতটা পরিমাণ, সেই বিষয়ে এবং তার সম্ভাব্য কারণ ও প্রতিকার সম্বন্ধে মূল্যায়ন প্রয়ােজন। কারণ মূল্যায়ন থেকে পরিকল্পনাগ্রহণ সহজ হয়।


(৩) পরিকল্পনা : বিপর্যয়-পরবর্তী পর্যায়ের ত্রাণকার্য, উদ্ধারকার্য ইত্যাদির সম্পাদনার জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা এই স্তরে গ্রহণ করতে হবে। এই পরিকল্পনাগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল

  • সঠিক উদ্ধারকার্য 

  • আশ্রয় প্রদান ও খাদ্য সরবরাহ

  • বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহ

  • বিদ্যুৎ সরবরাহ

  • যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতি ইত্যাদি।


(৪) সতর্কীকরণ ব্যবস্থার উন্নতি : বর্তমানে বিজ্ঞান ও উন্নত প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে দ্রুত সতর্কীকরণ ব্যবস্থা (Early Warning System or EWS) চালু হয়েছে। এই ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলি হল


  • ট্রেস ইন্ডিকেটর : বায়ুমণ্ডল-সংক্রান্ত তথ্যবলী সংগ্রহ করা।

  • দ্রুত সতর্কীকরণ উপকরণ : রেডার, টেলিভিশন, বেতার, খবরের কাগজ, মােবাইল ইত্যাদি।

  • বিপর্যয় সতর্কীকরণ কেন্দ্র : আঞ্চলিক, স্থানীয়, জাতীয় ও বিশ্ব স্তরে বিভিন্ন কেন্দ্র গড়ে তুলতে হবে।


(৫) সহযােগিতা: বিপর্যয় অধ্যুষিত এলাকার বাসিন্দাদের খাদ্য, অর্থ, ওষুধ, বস্ত্র এবং প্রশাসনিক বিষয়ে সহযােগিতা করতে হবে।


(৬) শিক্ষা ও সচেতনতা : সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে বিপর্যয় সংক্রান্ত শিক্ষা ও সচেতনতা সম্পর্কে জ্ঞান প্রদান করতে হবে।


(৭) তথ্য ও জ্ঞান আহরণ : বিপর্যয় ঘটার আগের ও পরের তথ্য বিপর্যয়-সংক্রান্ত পদক্ষেপ নিতে বিশেষ সাহায্য করে। প্রাপ্ত তথ্যের সঠিক বিশ্লেষণ ও মূল্যায়ন বিশেষ প্রয়ােজন। যে-কোনাে তথ্যের সঠিক বিশ্লেষণ না হলে বিপর্যয়ে ক্ষতির মাত্রা বহুগুণে বেড়ে যায়।


(৮) মহড়া প্রদান : বিপর্যয়ের পূর্বে বিপর্যয়প্রবণ এলাকার অধি বাসীদের নিয়মিত মহড়া প্রদান করা উচিত যাতে বিপর্যয় চলাকালীন তারা ঠিকমতাে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে।


(৯) পরিকাঠামোগত উন্নয়ন : বিপর্যয় মােকাবিলার জন্য বিপর্যয় সংক্রান্ত সরকারি, বেসরকারি এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির উন্নতি ঘটাতে হবে এবং তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ আবহাওয়া দপ্তর, সেনাবাহিনী, পুলিশবাহিনী, দমকল বিভাগ, পূর্ত দপ্তর ইত্যাদির সাহায্যে সহজেই বিপর্যয় মােকাবিলা করা যায়।


(১০) ভূমির বিজ্ঞানসম্মত ব্যবহার : বিজ্ঞানসম্মতভাবে ভূমি ব্যবহার ও নির্মাণকার্য সম্পাদন করলে বিপর্যয়ের ফলে ক্ষতির প্রবণতা অনেক কমে যায়।