নীল বিপ্লবের ফলাফল আলােচনা করাে | ভারতে অভ্যন্তরীণ মৎস্য চাষের ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের উন্নতিকল্পে গৃহীত পরিকল্পনাসমূহের উল্লেখ করাে।

নীল বিপ্লবের ফলাফল


নীল বিপ্লবের সুফল

  • উৎপাদন বৃদ্ধি : 1950-51 খ্রিস্টাব্দে ভারতে মৎস্যের মােট উৎপাদন ছিল 7.52 লক্ষ টন। নীল বিপ্লবের ফলে মৎস্যের উৎপাদন উল্লেখযােগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। 1980-81 খ্রিস্টাব্দে মৎস্যের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়ায় 24.42 লক্ষ টনে এবং 2010-11 খ্রিস্টাব্দে তা আরও বেড়ে হয় 82.31 লক্ষ টন।


  • কর্মসংস্থান বৃদ্ধি : নীল বিপ্লবের ফলে মৎস্যের উৎপাদন উল্লেখযােগ্যভাবে বেড়ে যাওয়ায়। বহু মানুষের কর্মসংস্থানের সুযােগ বেড়েছে। বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে ভারতের প্রায় 1.4 কোটি লােক মৎস্য আহরণ ও মৎস্যভিত্তিক শিল্পের সাথে যুক্ত।


  • পুষ্টিজাত খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি : মৎস্য একপ্রকার পুষ্টিকর খাদ্য। নীল বিপ্লবের ফলে মৎস্যের উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় পুষ্টিজাত খাদ্যের জোগান বৃদ্ধি পায়।


  • রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধি : নীল বিপ্লবের ফলে মৎস্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। 2010-11 খ্রিস্টাব্দে ভারত মৎস্য-সহ সামুদ্রিক দ্রব্য রপ্তানি করে 11,917 কোটি টাকা আয় করেছে।


নীল বিপ্লবের কুফল

  • আঞ্চলিক বৈষম্য : ভারতে নীল বিল্পবের প্রসার সর্বত্র সমানভাবে হয়নি। দক্ষিণ ভারতের অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, পশ্চিম ভারতের গুজরাত ও মহারাষ্ট্র এবং পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বাদে অন্যান্য রাজ্যগুলিতে নীল বিপ্লবের প্রসার তেমনভাবে হয়নি। ফলে উৎপাদনের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।


  • জল দূষণ : অভ্যন্তরীণ মৎস্য চাষের ক্ষেত্রে নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়। যার ফলে জলদূষণ ঘটে।


  • বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত : মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত রাসায়নিকের ব্যবহার বাস্তুতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। জলাশয়ে বসবাসকারী ছােটো ছােটো প্রাণীর প্রাণ হানি ঘটে।


  • অরণ্য ধ্বংস : মৎস্য চাষের জন্য জলাশয় খনন, মৎস্য বন্দর নির্মাণ প্রভৃতি কাজের জন্য প্রচুর পরিমাণে অরণ্য নিধন করা হয়।


  • কৃষি জমির সংকোচন : অনেকসময় কৃষিজমিকে মৎস্য চাষের জন্য ব্যবহৃত করা হচ্ছে। যার ফলে কৃষিজমির পরিমাণ সংকুচিত হচ্ছে।


অভ্যন্তরীণ মৎস্য চাষে ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের উন্নতিকল্পে গৃহীত পরিকল্পনাসমূহ


(১) প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটানো : মৎস্য চাষে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে। সামুদ্রিক মৎস্য সংগ্রহের জন্য চিরাচরিত জালের আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। মৎস্য চাষে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ৪ টি মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে।


(২) প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তােলা : চাষিদের আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ এবং আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ ধরার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তােলা হয়েছে।


(৩) হিমঘর গড়ে তোলা : মৎস্যকে সংরক্ষণের জন্য বহু হিমঘর গড়ে তােলা হয়েছে।


(৪) মৎস্য বন্দরের নির্মাণ : মৎস্য সংগ্রহের জন্য পাঁচটি বড়াে মাপের মৎস্য বন্দর ও 28 টি ছােটো মাপের মৎস্য বন্দর নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া 113 টি মৎস্য আহরণ কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে।


(৫) উপকূল বলয় চিহ্নিতকরণ : উপকূল বলয়কে চওড়ায় 200 নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত চিহ্নিত করা হয়েছে, যা Exclusive Economic Zone (EEZ) নামে পরিচিত।


(৬) ঋণ প্রদান : বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে মৎস্য চাষিদের ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


(৭) বীমা সুরক্ষা প্রদান : মৎস্য চাষিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তাই তাদের আর্থিক সুরক্ষার জন্য বীমার ব্যবস্থা করা হয়েছে।


(৮) হ্যাচারি স্থাপন : মাছের ডিম প্রজননের জন্য বর্তমানে ভারতে 900 টিরও বেশি হ্যাচারি স্থাপন করা হয়েছে।


(৯) FFDA স্থাপন : কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের সহায়তায় জেলা স্তরে 422 টি Fish Farmers Development Agencies (FFDA) নির্মাণ করেছে। যার ফলে 6.78 লক্ষ মৎস্যজীবী উপকৃত হয়েছে।


শ্বেত বিপ্লব বলতে কী বােঝায়? শ্বেত বিপ্লব বা 'অপারেশন ফ্লাড'-এর উদ্দেশ্যগুলি কী কী? শ্বেত বিপ্লবের বিভিন্ন পর্যায়গুলি উল্লেখ করাে।


শ্বেত বিপ্লবের সুফল বা গুরুত্ব উল্লেখ করাে। শ্বেত বিপ্লবের সাফল্যে প্রধান অন্তরায়গুলি কী কী? আমুল কী?


নীল বিপ্লব কী? নীল বিপ্লবের প্রধান উদ্দেশ্যগুলি কী ছিল? নীল বিপ্লবের ফলে মৎস্য উৎপাদনের যে গতিপ্রকৃতি তা উল্লেখ করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)