চতুর্থ স্তরের ক্রিয়াকলাপের অন্যতম ক্ষেত্র হিসেবে তথ্যভিত্তিক কাজের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।
তথ্যভিত্তিক ক্রিয়াকলাপ
অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা সভ্যতার অগ্রগতিতে তথ্যভিত্তিক (Information Based) ক্রিয়াকলাপের গুরুত্ব অপরিসীম। টেলিযােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নতি, কম্পিউটার আবিষ্কার, মহাকাশে উপগ্রহ প্রেরণ ও স্থাপন ইত্যাদি তথ্যভিত্তিক ক্রিয়াকলাপের জগতে আমূল পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে মানুষ মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের খবরাখবর, ঘটনাবলি কিংবা বিভিন্ন তথ্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই পেয়ে যাচ্ছে। এভাবে খুব অল্প সময়ে বিভিন্ন তথ্যভাণ্ডার মানুষের হাতের মুঠোয় চলে আসছে। এর ফলে একদিকে যেমন বিভিন্ন জটিল সমস্যাগুলির সমাধান সহজেই করা যাচ্ছে তেমনি নিত্যনতুন জিনিসেরও উদ্ভাবন ঘটছে।
তথ্য সরবরাহের সাথে যুক্ত বিভিন্ন প্রযুক্তি : তথ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে যেসব প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয় সেগুলি হল কম্পিউটার, ইন্টারনেট, টেলিগ্রাম, টেলিফোন, মােবাইল ফোন, টেলিপ্রিন্টার, টেলিফ্যাক্স, GPS ও DGPS ইত্যাদি। মূলত বিভিন্ন ধরনের সফ্টওয়্যার মারফত ওই সমস্ত প্রযুক্তিগুলি পরিচালিত হয়।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযূক্তির ব্যবহার : বর্তমান সময়ে তথ্যপ্রযুক্তিকে বহু ক্ষেত্রে কাজে লাগানাে হচ্ছে। যেমন一
ভূপৃষ্ঠের কৃষিজ, বনজ, খনিজ, জলজ ও মৎস্য সম্পদ, জনবসতি ইত্যাদি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও প্রদান তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে করা হয়।
অনলাইন ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষাদান, বিষয়ভিত্তিক বা প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষা নেওয়া, ব্যাবসাবাণিজ্য, টাকা লেনদেন, ব্যাংকিং পরিসেবা, ঘরে বসে বিমান ও রেলের টিকিট কাটা, ভিডিও কনফারেন্স প্রভৃতি কাজ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে করা হয়।
বিভিন্ন ওয়েবসাইট (গুগুল, উইকিপিডিয়া), সােস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট (ফেসবুক, টুইটার) ইত্যাদির মাধ্যমে বহু তথ্যের আদানপ্রদান করা হয়ে থাকে। যা বর্তমানে বহুল প্রচলিত।
আধুনিক কম্পিউটার, স্যাটেলাইট, রিমােট সেন্সিং পদ্ধতি, র্যাডার প্রযুক্তি প্রভৃতির প্রয়ােগ ঘটিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের আবহাওয়ার পরিবর্তনের মান, তার মাত্রা ও গতিপথ খুব সহজেই নির্ধারণ করা যায়। ফলে সারা পৃথিবীতে অথবা পৃথিবীর নির্দিষ্ট অঞ্চলে তার কী কী প্রভাব পড়বে তা সহজেই অনুমান করা যায়। সেই সঙ্গে সেই অঞ্চলের অধিবাসীদের আগাম সতর্কতা জারি করা যায়।
তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে প্রাপ্ত বিভিন্ন স্থান থেকে প্রাপ্ত খবরাখবর খবরের কাগজ, টেলিভিশন, রেডিয়াে ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচার করা হয়।
তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান : অর্থনৈতিক বিকাশে তথ্যপ্রযুক্তি অনুঘটক রূপে কাজ করে। বিগত কয়েক বছর ধরে এই ক্ষেত্রটিতে কাজের বাজার ক্রমবর্ধমান। বিগত কয়েক বছরে ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রের পাশাপাশি সরকারও তথ্যপ্রযুক্তি পরিসেবার প্রধান ব্যবহারকারী হয়ে উঠেছে। সরকার বিভিন্ন নাগরিক পরিসেবা (নাগরিক পরিচয়পত্র, সরকারি বণ্টন ব্যবস্থা), স্বাস্থ্য পরিসেবা (টেলিমেডিসিন, ভ্রাম্যমান ক্লিনিক), শিক্ষা (ই-লার্নিং) ও আর্থিক পরিসেবার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে বহু সংখ্যক কর্মী নিয়ােগ করছে। Economic Survey (2010-11) ও NASSCOM (2011) -এর রিপাের্ট অনুযায়ী তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতে 2011 সালে প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষ কর্মী নিয়ােগের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে 2.5 মিলিয়ন ও ৪.3 মিলিয়ন। অনুমান করা হচ্ছে 2015 সাল নাগাদ এই ক্ষেত্রে প্রায় 14.3 মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান হবে।