পুনর্যৌবন লাভের ফলে গঠিত ভূমিরূপের পরিচয় দাও।

পুনর্যৌবন লাভের ফলে গঠিত ভূমিরূপ

সমুদ্রপৃষ্ঠ নেমে গেলে, ভূমিভাগের উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে, নদী গ্রাস ঘটলে, নদীর বােঝা হ্রাস পেলে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন (মরু জলবায়ু থেকে আর্দ্র জলবায়ুতে রূপান্তরিত) হলে নদীর প্রবাহমাত্রা ও নিম্নক্ষয় করার ক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায়। এই সময়ে নদী পুরােনাে ভূমিভাগের ওপর পুনরায় নিম্নক্ষয় শুরু করে। ফলে, পর্যায়িত বা পূর্ববর্তী ভূমিভাগের ওপর যৌবনচিত ভূমিরূপ অধ্যারােপিত হয়। একে ভূমির পুনর্যৌবন লাভ বলে। ভূমিভাগের পুনর্যৌবন লাভের ফলে যেসব ভূমিরূপ গড়ে ওঠে সেগুলি হল一


(১) নিক পয়েন্ট বা নিক বিন্দু : ভূমিরূপের পুনর্যৌবন লাভের ফলে নদীর দৈর্ঘ্য বরাবর মৃদু পুরাতন ঢাল ও খাড়া নতুন ঢালের সংযােগ বিন্দুতে যে খাঁজের সৃষ্টি হয়, তাকে নিক পয়েন্ট বলে। নিক বিন্দুর ওপরের অংশের মৃদু ঢালের সঙ্গে নীচের খাড়া ঢালের মধ্যে ভূপ্রকৃতিগত পার্থক্যের জন্য জলপ্রপাত গঠিত হয়। মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুরে নর্মদা নদীর ওপর ধোঁয়াধার নিক বিন্দুতে জলপ্রপাত সৃষ্টি হয়েছে। এই বিন্দুতে নদীর মস্তকমুখী ক্ষয় দ্রুত হতে থাকে। নদীক্ষয়ের নতুন শেষ সীমা অনুযায়ী নদী তার ঢালকে মসৃণ করার জন্য মােহানা থেকে উর্ধ্বপ্রবাহের দিকে ক্ষয় করতে শুরু করে। এইভাবে মস্তকমুখী ক্ষয়ের ফলে নিক পয়েন্ট পিছু হটতে থাকে এবং এক সময়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।


(২) উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা : ভূমিরূপের পুনর্যৌবন লাভের ফলে নিক বিন্দুর ওপর উর্ধ্ব উপত্যকা এবং নিক বিন্দুর নীচে নিম্ন উপত্যকার মধ্যে ভূমিরূপের প্রকৃতিগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়। নদী অববাহিকার নিক বিন্দুর ওপরের অংশের ভূমিরূপ পরিণত বা বার্ধক্য অবস্থায় থাকে। কিন্তু নিক বিন্দুর নিম্নাংশে নদী গভীর নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে পুরােনাে উপত্যকার মধ্যে সংকীর্ণ 'v আকৃতির উপত্যকা সৃষ্টি করে। নিক বিন্দুর ওপরের মৃদু ঢালবিশিষ্ট প্রশস্ত পুরােনাে উপত্যকা এবং নীচের খাড়া ঢালবিশিষ্ট নবীন উপত্যকার সংযােগস্থলে ঢালের বিচ্যুতিজনিত একটি স্কন্ধভূমি সৃষ্টি হয়। আবার, নিক বিন্দুর নীচে উপত্যকার আড়াআড়ি একটা প্রস্থচ্ছেদ নিলে দেখা যায় যে, নদীর পুরাতন উপত্যকার মধ্যে একটি নতুন উপত্যকা অবস্থান করছে। এইরূপ উপত্যকাকে উপত্যকার মধ্যে উপত্যকা বলে। মধ্যপ্রদেশে কপিলধারা জলপ্রপাতের 1 কিমি ঊধ্বপ্রবাহে এই ধরনের ভূমিরূপ লক্ষ করা যায়।


(৩) নদীমঞ্চ : নদী উপত্যকায় অনেক সময় নদীর দু-পাশে এক বা একাধিক ধাপ বা মঞ্ দেখা যায়। সমুদ্রপৃষ্ঠের ঋণাত্মক পরিবর্তন, জলবায়ুর পরিবর্তন (মরু জলবায়ু থেকে আর্দ্র জলবায়ুতে পরিবর্তন) ইত্যাদির কারণের ফলে নদীর জলপ্রবাহের মাত্রা বেড়ে গেলে নদী নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে পুরাতন উপত্যকার ওপর উল্লম্বভাবে কেটে বসে যায়। ফলে নদীর উভয় পার্শ্বে পরিত্যক্ত মৃদু ঢালবিশিষ্ট উপত্যকা নবীন উপত্যকার কিছুটা ওপরে মঞ্চের আকারে অবস্থান করে। একে নদীমঞ্চ বলে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা প্রভৃতি নদীর উভয় তীরে নদীমঞ্চ দেখা যায়। নদীমঞ্চ পলি দিয়ে গঠিত হলে তাকে পলল মঞ্চ বলে। পলিহীন বা শিলা দ্বারা গঠিত নদীমঞ্চকে প্রস্তর শয্যা নদীমঞ্চ বলে। ভূমিভাগের পুনর্যৌবন লাভের ফলে সমান উচ্চতায় নদীর উভয় পার্শ্বে দুটি নদীমঞ্চ গড়ে উঠলে তাকে যুগল নদীমঞ্চ বলে। এ ছাড়া অসমান উচ্চতায় একাধিক নদীমঞ্চ গড়ে উঠলে তাকে অযুগল নদীমঞ্চ বলে।


(৪) কর্তিত বা খোদিত নদী বাঁক : পরিণত ও বার্ধক্য অবস্থায় নদী বড়াে বড়াে বাঁক নিয়ে প্রবাহিত হয়। ভূমিভাগের পুনর্যৌবন লাভের ফলে নদী নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে কেটে বসে যায় এবং পার্শ্বক্ষয়ের মাধ্যমে নদী উপত্যকা প্রশস্ত হতে থাকে। ফলে বৃহৎ বাঁকের সৃষ্টি হয়। এইরূপ নদীবাঁককে কর্তিত বা খােদিত নদীবাক বলে। ক্ষয় ও ভূমিরূপের প্রকৃতি অনুযায়ী কর্তিত নদীবাঁককে সাধারণত দুভাগে ভাগ করা হয়।


  • নদীর নিম্নক্ষয় প্রবল হলে নদী উল্লম্বভাবে কেটে বসে যায় এবং এর দুই পাড় খাড়া প্রাচীর দ্বারা আবদ্ধ হয়। একে খাড়া পরিখাবিশিষ্ট নদীবাঁক বলে।


  • কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে নদীর নিম্নক্ষয় অপেক্ষা পাশ্বক্ষয় বেশি হলে নদী একদিকে সরতে থাকে। ফলে নদীর উভয় পাড়ের ঢাল সমান হয় না। এক পাড় বেশ খাড়া এবং অন্য পাড় অপেক্ষাকৃত মৃদু ঢালযুক্ত হয়। এইরুপ নদীবাঁককে অসম খাড়া পরিখাবিশিষ্ট নদীবাক বলে।


(৫) উথিত সমুদ্রসৈকত ও সমুদ্র মঞ্চ : বহুকাল ধরে উপকূল-ভাগে ক্ষয়ের ফলে অবক্ষেপহীন বা অবক্ষেপযুক্ত সৈকতভূমি গড়ে ওঠে। এই অবস্থায় উপকূলভাগ উথিত হলে বা সমুদ্রপৃষ্ঠ নেমে গেলে পূর্বের সৈকতভূমি বর্তমান সমুদ্রতল অপেক্ষা ঊর্ধ্বে মরে আকারে অবস্থান করে। এই মঞ্চের উচ্চতা 50 মিটারের কম হলে তাকে উথিত সমুদ্রসৈকত বলে। এর উচ্চতা 50 মিটারের বেশি হলে তাকে সমুদ্র মঞ্চ বলে। গ্রেট ব্রিটেনের দক্ষিণ ও পশ্চিম অংশে উখিত সমুদ্রসৈকত গড়ে উঠেছে।


'একটি ভূমিভাগের একটি নির্দিষ্ট জীবন ইতিহাস আছে'—W.M. Davis-এর উক্তিটির তাৎপর্য সংক্ষেপে বিশ্লেষণ করাে। স্বাভাবিক ক্ষয়চক্র বলতে কী বােঝ?


ডেভিসের স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের তত্ত্বের পূর্বশর্তগুলি লেখাে। সমপ্রায় ভূমির বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে লেখাে। স্বাভাবিক ক্ষয়চক্রের বার্ধক্য দশার ভূমিরূপের উল্লেখ করাে।


ক্ষয়চক্রের ব্যাঘাত বলতে কী বােঝায়? এর কারণগুলি উল্লেখ করাে। স্থিতিশীল পুনর্যৌবন লাভ কীভাবে ঘটে থাকে?


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)