মাটি গঠনে বৃষ্টিপাতের ভূমিকা উল্লেখ করাে। মাটি নানা রঙের হওয়ার কারণ কী?

মাটি গঠনে বৃষ্টিপাতের ভূমিকা

বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও তীব্রতা মাটির উৎপত্তিতে উল্লেখযােগ্যভাবে প্রভাব বিস্তার করে। যেমন-


  • বৃষ্টিপাত অধিক হলে মাটিতে হাইড্রোজেন আয়নের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে pH-এর পরিমাণ কমে গিয়ে মাটি আম্লিক হয়।


  • অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে উদ্ভিদ প্রচুর জন্মায় এবং অধিক জৈব পদার্থের সঞ্চয়ের ফলে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়।


  • অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ক্যালশিয়াম কার্বনেট কার্বনেশন পদ্ধতিতে ক্যালশিয়াম বাই কার্বনেটে পরিণত হয়ে মাটির অনেক গভীরে স্থানান্তরিত হয়।


  • আর্দ্র ক্রান্তীয় অঞ্চলে অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে মৃত্তিকাতে রাসায়নিক আবহবিকার ত্বরান্বিত হয় এবং এর ফলে মাটিতে কাদার পরিমাণ বাড়ে।


  • আর্দ্র ক্লান্ডীয় জলবায়ু অঞ্চলে মৃত্তিকায় এলুভিয়েশন পদ্ধতিতে পটাশিয়াম, সােডিয়াম, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি লবণ মৃত্তিকার উধ্বস্তর ('A' হােরাইজন) থেকে অপসৃত হয়।


  • মরুভূমি অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অল্প হওয়ায় ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, সােডিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম প্রভৃতি লবণ রাসায়নিক আবহবিকারের মাধ্যমে খনিজ থেকে মুক্ত হলেও মাটির শীর্ষস্তর থেকে অপসৃত হয় না।


মাটি নানা রঙের হওয়ার কারণ


রং মাটির একটি ভৌত ধর্ম। মাটি বিভিন্ন রঙের যেমন সাদা, লাল, বাদামি, ধূসর, হলুদ, কালাে ইত্যাদি হতে পারে। কখনাে কখনাে সবুজ আভাযুক্ত হয়। মাটির রং নির্ভর করে一 [1] খনিজ ও জৈব পদার্থের প্রকার ও পরিমাণ, [2] জলনিকাশি ব্যবস্থা ও মাটিতে বায়ু চলাচল এবং [3] তাপমাত্রার ওপর। [4] খনিজ পদার্থের সঙ্গে জলের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটলে বা জলের মাধ্যমে দ্রবীভূত পদার্থের অপসারণ ঘটলে কিংবা বায়ুজীবী জীবাণুর দ্বারা পচনক্রিয়া ঘটলে মাটি নানা রঙের হয়। যেমন মৃত্তিকায় জৈব পদার্থের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে মৃত্তিকা কালাে রঙের হয়। নাতিশীতােয় অঞ্চলের চারনােজেম মৃত্তিকার রং কালাে। টাইটেনিয়াম অক্সাইড থাকলে মাটির রং হয় কালাে। লােহার পরিমাণ বেশি হলে মাটির রং লাল হয়। আবার আয়রন অক্সাইড আয়রন হাইড্রক্সাইডে পরিণত হলে মাটির রং হলদে হয়। যেখানে মাটিতে বেশি পরিমাণে খনিজ লবণ, চুনাপাথর, কোয়ার্টাজ থাকে সেখানে মাটির রং হয় সাদা ধূসর ও অনেক সময় জলপাই-সবুজ বর্ণের হয়।