শস্যাবর্তন বা চক্ৰকৃষি কী? এর বৈশিষ্ট্য এবং গুরুত্ব বা সুবিধা উল্লেখ করাে।

শস্যাবর্তন বা চক্ৰকৃষি

উৎপাদন বৃদ্ধি ও জমির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য কোনাে জমিতে ধারাবাহিকভাবে পরপর বিভিন্ন শস্যের পর্যায়ক্রমিক চাষকে শস্যাবর্তন বা চক্ৰকৃষি (Crop Rotation) বলে। ভূমধ্যসাগরীয় এবং মিশ্র কৃষির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলিতে শস্যাবর্তনের সর্বাধিক প্রয়ােগ দেখা গেলেও এর গুরুত্ব উপলব্ধি করে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এই কৃষিপদ্ধতিটি প্রসার লাভ করেছে। পশ্চিম ইউরােপের দেশগুলিতে মিশ্র কৃষি পদ্ধতিতে মূলত চারটি পর্যায়ে শস্যাবর্তন বা চক্ৰকৃষি সম্পূর্ণ হয়। প্রথম পর্যায়ে মানুষের খাদ্যের পাশাপাশি বিভিন্ন পশুখাদ্য (ভুট্টা, শালগম) চাষ করা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের ঘাস জাতীয় তৃণের (ক্লোভার, আলফা-আলফা) চাষ করা হয়। তৃতীয় পর্যায়ে জমিকে পশুচারণ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং চতুর্থ পর্যায়ে বিভিন্ন অর্থকরী শস্য (গম, রাই) ইত্যাদির চাষ করা হয়।


শস্যাবর্তন পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য


(১) পর্যায়ক্রমিক বিভিন্ন শস্যের চাষ : কোনাে একটি নির্দিষ্ট জমিতে একটার পর একটা পরপর বিভিন্ন শস্যের চাষ করা হয়।


(২) মানুষ ও পশুর খাদ্যের চাষ : মানুষের বিভিন্ন খাদ্য (গম, রাই) প্রভৃতির চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন পশুখাদ্যও (টিমােথি, ক্লোভার জাতীয় তৃণ) চাষ করা হয়।


(৩) জলবায়ুর পরিবর্তনের ওপর নির্ভরশীল : শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে কোন সময় কোন্ শস্যের চাষ করা হবে তা জলবায়ুর পরিবর্তনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।


(৪) জমির উর্বরতা ও উৎপাদন বাড়ানো মূল লক্ষ্ম : জমির উর্বরতা যাতে বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে কৃষিতে শস্যাবর্তন পদ্ধতির প্রয়ােগ করা হয়। তা ছাড়া উৎপাদন বৃদ্ধি করাও এই কৃষিপদ্ধতি প্রয়ােগের অন্যতম লক্ষ্য।


শস্যাবর্তনের গুরুত্ব বা সুবিধা


(১) জমির উর্বরতা হ্রাস পায় না : শস্যাবর্তন পদ্ধতিতে পর্যায়ক্রমিক চাষের জন্য এমন কিছু শস্যকে নির্বাচন করা হয় যেগুলি জমির উর্বরতাকে বজায় রাখে। যেমন ধান চাষের পর জমিতে মটর জাতীয় শস্য চাষ করলে জমিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।


(২) উৎপাদন বৃদ্ধি : একই জমিতে পরপর নিবিড়ভাবে চাষ করা হয় বলে ওই জমি থেকে মােট শস্য উৎপাদনের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে যায়।


(৩) আগাছা হ্রাস পায় : একই জমিতে বারবার চাষ করা হয় বলে জমি সবসময় আগাছা মুক্ত থাকে।


(৪) রোগ-পোকার উপদ্রব কমে : জমিতে কোনাে নির্দিষ্ট শস্য একভাবে চাষ করা হয় না বলে, জমিতে রােগ-পােকার উপদ্রব কম থাকে।


(৫) কৃষকের ক্ষতির সম্ভাবনা কম : প্রাকৃতিক দুর্যোগজনিত কারণে যদি কোনাে শস্য উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে কৃষক অন্য শস্য উৎপাদন করে সেই ক্ষতিপুরণ করতে পারেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে এই কৃষিপদ্ধতিতে কৃষকদের ক্ষতির সম্ভাবনা অনেক হ্রাস পায়।


(৬) অধিক লাভজনক : জমিতে বিভিন্ন প্রকার শস্য চাষ করা হয় বলে এই কৃষি থেকে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি।


(৭) কম উৎপাদন ব্যয় : এই প্রকার কৃষিপদ্ধতিতে চাষের জমিকে বারবার নতুন করে তৈরি করতে হয় না। তা ছাড়া চাষের জন্য প্রয়ােজনীয় পরিকাঠামােও পর্যাপ্ত থাকে, তাই উৎপাদন ব্যয় অনেক কম হয়।


(৮) কৃষকদের সবসময় কাজের সুজোগ থাকে : এই কৃষি পদ্ধতিতে জমিকে একবার চাষের পর ফেলে রাখা হয় না। সারাবছরই জমিতে কোনাে না কোনাে শস্য উৎপাদন করা হয়। এজন্য কৃষকদের সারাবছর কাজের অভাব হয় না।


(৯) মানুষ ও পশুর উভয়ের খাদ্যের জোগান : মানুষ ও পশু উভয়েরই খাদ্যের জোগান এই কৃষিপদ্ধতির মাধ্যমে করা হয়।