রাসায়নিক আবহবিকার কীভাবে মাটি গঠনে ভূমিকা পালন করে?

মাটি গঠনে রাসায়নিক আবহবিকারের ভূমিকা

বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাস (অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি), ভূপৃষ্ঠের জল ও বিভিন্ন অম্লের উপস্থিতিতে শিলান্তর রাসায়নিকভাবে বিয়ােজিত হলে, তাকে রাসায়নিক আবহবিকার বলে। বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় এই রাসায়নিক আবহবিকার ঘটে এবং শিলা মাটিতে পরিণত হয়।


কার্বনেশন বা অঙ্গাৱৰোজন : বায়ুমণ্ডলের কার্বন ডাইঅক্সাইডের (C02,) সঙ্গে জলের রাসায়নিক সংযােগে সৃষ্ট কার্বনিক অ্যাসিড (H2,CO3,) শিলার খনিজের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে শিলায় পরিবর্তন ঘটালে সেই প্রক্রিয়াকে কার্বনেশন বলে। বৃষ্টির জল বাতাসের কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে মিশে সৃষ্টি হয় মৃদু কার্বনিক অ্যাসিড।

H20 + co2 = H2CO3 + O3

জল + কার্বন = কার্বনিক + অক্সিজেন

ডাইঅক্সাইড অ্যাসিড


এই কার্বনিক অ্যাসিড চুনাপাথর বা ক্যালশিয়াম কার্বনেটের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে ক্যালশিয়াম বাইকার্বনেট তৈরি করে, যা সহজেই জলে দ্রবীভূত হয়।


CaCO3 + H2CO3 = Ca(HCO3), + CO2

চুনাপাথর + কার্বনিক অ্যাসিড = ক্যালশিয়াম বাইকার্বনেট + কার্বন ডাইঅক্সাইড


চুনাপাথর, ফেলস্পার, হর্নব্লেন্ড প্রভৃতি খনিজের ওপরও এই প্রক্রিয়া কার্যকর হয় এবং চুনসমৃদ্ধ মাটির উৎপত্তি হয়। যেমন রেনজিনা, চারনােজম প্রভৃতি মাটি।


অক্সিডেশন বা জারণ : জল বা জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিতে শিলামধ্যস্থ খনিজের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন যুক্ত হলে তাকে জারণ বলে। ভূপৃষ্ঠে যেসব শিলার মধ্যে লােহা আছে সেখানেই এই প্রক্রিয়া ক্রিয়াশীল। তা ছাড়া অ্যাম্ফিবােল, পাইরক্সিন ও বায়ােটাইট খনিজের ওপরেও অক্সিডেশন কার্যকর হয়।


লােহা যখন ফেরাস অক্সাইডরূপে থাকে, তখন তা অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু অক্সিডেশন প্রক্রিয়ায় যখন ফেরিক অক্সাইডে পরিণত হয় তা সহজে ভেঙে যায়, তাই শিলায় মরচে পড়ে।

4FeO + O2 = 2Fe2O3

ফেরাস অক্সাইড + অক্সিজেন = ফেরিক অক্সাইড


ফেরাস সালফাইড এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ফেরাস সালফেটে পরিণত হয়।

FeS + 2O2 = FeSO4

ফেরাস সালফাইড + অক্সিজেন = ফেরাস সালফেট


এভাবে লাল, হলুদ, বাদামি, ল্যাটেরাইট প্রভৃতি মাটি গঠিত হয়।


হাইড্রেশন : শিলাস্থ খনিজের সঙ্গে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জল যুক্ত হয়ে শিলার রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটলে তাকে হাইড্রেশন বলে। এই প্রক্রিয়ায় জলের অণুগুলি শিলামধ্যস্থ খনিজের অণুগুলির সঙ্গে যুক্ত হয়ে খনিজের গ্রন্থিবন্ধনগুলিকে আলগা করে তােলে। খনিজগুলির পারস্পরিক বন্ধন হ্রাস পাওয়ায় গৌণ খনিজগুলি নমনীয় হয়ে পড়ে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই হেমাটাইট লিমােনাইটে, অ্যানহাইড্রাইড জিপসামে এবং অলিভিন সার্পেন্টাইনে পরিণত হয় এবং পরবর্তীকালে লিমােনাইট বা জিপসাম-সমৃদ্ধ মাটি সৃষ্টি হয়।

2Fe203 + 3HO = 2Fe2O3, 3H2O

হেমাটাইট + জল = লিমােনাইট


হইলিসিস বা আর্ বিক্লেষণ : এটি রাসায়নিক আবহবিকারের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া। জল হাইড্রোজেন (H+) এবং হাইড্রক্সিল (OH-) আয়নে ভেঙে গিয়ে খনিজের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে রাসায়নিক আবহবিকার ঘটায়। ফেলস্পার এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অ্যালুমিনােসিলিসিক অ্যাসিড ও পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইডে পরিণত হয়। পুনরায় পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড কার্বন ডাইঅক্সাইডের সঙ্গে বিক্রিয়া করে পটাশিয়াম কার্বনেটে পরিণত হয়। এভাবে ক্যালশিয়াম ও পটাশিয়াম থেকে ক্ষারধর্মী মাটি সৃষ্টি হয়।

2KOH + CO2 = K2CO3 + H2O

পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড + কার্বন ডাইক্সাইড = পটাশিয়াম কার্বনেট + জল।