পরিসেবা কাকে বলে? পরিসেবার কয়েকটি উপাদানের নাম উল্লেখ করাে এবং মুখ্য উপাদানসমূহ সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

পরিসেবা

প্রাথমিক (যেমন কৃষি) ও দ্বিতীয় (যেমন শিল্প) ক্ষেত্রের যে-কোনাে ধরনের উৎপাদন বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে সচল রাখতে যেসব কাজগুলি উল্লেখযােগ্য ভূমিকা নিয়ে থাকে, তাদের এককথায় পরিসেবা (Service) বলে। পরিসেবার সাহায্য ছাড়া কোনােপ্রকার অর্থনৈতিক কাজকর্মেরই উৎপাদন বাড়ানাে সম্ভব নয়।


পরিসেবার উপাদানসমূহ


পরিসেবার উপাদানগুলি হল- [1] ব্যাংকিং ও অর্থসংস্থান, [2] পরিবহণ ও যােগাযােগ, [3] বিমা, [4] বিজ্ঞাপন ও প্রচার, [5] গুদামজাতকরণ, [6] বিক্রয়, [7] শক্তি সরবরাহ প্রভৃতি। প্রকৃতপক্ষে এই সাতটি উপাদান একত্রে পরিসেবা রূপে শিল্প ও ব্যাবসাবাণিজ্যের অন্তর্কাঠামাে তৈরি করে এবং কাজের সম্প্রসারণ ঘটাতে সাহায্য করে। নীচে মুখ্য উপাদানগুলি সম্পর্কে আলােচনা করা হল一


[1] ব্যাংকিং ও অর্থসংস্থান : ব্যাংক হল এক বিশেষ ধরনের কারবারি সংস্থা। ব্যাংকের প্রধান দুটি কাজ হল- (১) জনসাধারণ, নানা ধরনের সংস্থা ও সংগঠনের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ের মেয়াদে টাকা জমা নেওয়া এবং (২) বিভিন্ন ঋণপ্রার্থী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন সময়ের মেয়াদে টাকা ঋণ দেওয়া। ব্যাংক নানা ধরনের হয়, যেমন—কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, সমবায় ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংক, জমি উন্নয়ন ব্যাংক প্রভৃতি।


গুরুত্ব

  • বিভিন্ন সময়ের মেয়াদে অর্থ ঋণ দেওয়া।

  • আর্থিক লেনদেনে সাহায্য করা।

  • পাওনা অর্থ আদায়ে সাহায্য করা।

  • গ্রাহকদের পাওনা লাভের অংশ, সুদ, বাড়িভাড়া আদায় করা।

  • গ্রাহকদের বিমার অর্থ দেওয়া এবং শেয়ার ও লগ্নিপত্র কেনাবেচা করা।

  • বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ব্যাবসাবাণিজ্যের ক্ষেত্রে ঋণের প্রত্যায়ন বা লেটার অফ ক্রেডিট দেওয়া।

  • মূল্যবান নথিপত্র নিরাপদে রাখা।

  • বিদেশি মুদ্রা কেনাবেচা করা প্রভৃতি।


উদাহরণ : ভারতের কয়েকটি উল্লেখযােগ্য ব্যাংক হল সিটি ব্যাংক (ইউ. এস. এ), এইচ এস বি সি (ইংল্যান্ড), ব্যাংক অফ আমেরিকা (ইউ. এস. এ), ক্রেডিট এগ্রিকোলে গ্রুপ (ফ্রান্স), ভারতীয় স্টেট ব্যাংক (ভারত) প্রভৃতি।


[2] পরিবহণ ও যােগাযােগ : পরিবহণ বলতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পণ্যদ্রব্যের লেনদেন ও যাত্রীর যাতায়াতকে বােঝায়। আবার যােগাযােগ হল একাধিক স্থানের মধ্যে বার্তা পাঠানাে, দরকারি তথ্যের আদানপ্রদান, মতামত, নির্দেশ প্রভৃতি লেনদেনের ব্যবস্থা। প্রকৃতপক্ষে এই দুই ব্যবস্থার মাধ্যমে উৎপাদক ও ভােক্তার মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়।


মাধ্যম বা উপাদান : লরি, বাস, রেল, জাহাজ, নৌকা, বিমান প্রভৃতি পরিবহণ ব্যবস্থার মাধ্যম এবং যােগাযােগ ব্যবস্থার মাধ্যম হল টেলিফোন, টেলিগ্রাফ, ফ্যাক্স, ই-মেল, রেডিয়াে বা বেতারযন্ত্র, টেলিভিশন বা দূরদর্শন, ইন্টারনেট প্রভৃতি।


গুরুত্ব

  • কৃষি ও শিল্পজাত দ্রব্য পরিবহণ করে, শিল্প, কৃষি ও ব্যাবসাবাণিজ্যের কাজকর্মকে উন্নত, দক্ষ ও লাভজনক করে।

  • উন্নত পরিবহণ ও যােগাযােগের দ্বারা একাধিক স্থানে দ্রুত মালপত্র, শ্রমিক, সংবাদ এবং দলিলপত্র বা নির্দেশ পাঠানাে যায়।

  • পরিবহণের মাধ্যমে পণ্যের লেনদেনের ফলে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বাজারে পণ্যের দাম স্থিতিশীল হয়।

  • উন্নত পরিবহণের সুযােগ নিয়ে নতুন নতুন শিল্প ও বাণিজ্যকেন্দ্রের সম্প্রসারণ ঘটে, ফলে আঞ্চলিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয় প্রভৃতি।


[3] বিমা : বিমা হল এমন একটি উপায়, যার দ্বারা কোনাে অনিশ্চিত ঘটনার জন্য ক্ষতি এবং লােকসানের ঝুঁকি কমাতে নিজের, পরিবারের, উৎপাদিত দ্রব্যের, শিল্প প্রতিষ্ঠানের বা ব্যাবসায়িক সংস্থার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হয়। বিমা পরিসেবা ক্ষেত্রের এক অপরিহার্য অঙ্গ। যে-কোনাে ধরনের কাজকর্মের সঙ্গে আর্থিক ও সামাজিক ঝুঁকি জড়িয়ে থাকে এবং এগুলি দূর করা সম্ভব না হলে কোনােপ্রকার অর্থনৈতিক কাজকর্মের সম্প্রসারণই সম্ভব হয় না। অর্থাৎ সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে বিমার আবশ্যকতা আছে।


প্রকারভেদ : বিমা তিন ধরনের হয়। যথা- জীবন বিমা, সাধারণ বিমা ও সামাজিক বিমা।


গুরুত্ব

  • বিমার সাহায্যে দুর্ঘটনাজনিত কারণে ব্যক্তিগত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কমানাে।

  • নির্দিষ্ট সুদের বিনিময়ে বিমা সংস্থার তহবিলের সঞ্চিত টাকা থেকে কিছু টাকা গৃহ, রাস্তাঘাট নির্মাণ প্রকল্পে দেওয়া হয়।

  • জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা বিধান, কারবারে ঝুঁকির আকঙ্কা হ্রাস ও সম্পদের উপযােগিতা বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে বিমার গুরুত্ব অপরিসীম।


[4] বিজ্ঞাপন ও প্রচার : কোনাে পণ্য বা দ্রব্যের সুযােগসুবিধা, গুণাগুণ সম্পর্কে ক্রেতা বা জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হয়, তাকে বিজ্ঞাপন বলে। কম খরচে যত বেশি সংখ্যক মানুষকে বিক্রেতার বার্তাটি লিখিত, মৌখিক বা চাক্ষুষ ভাবে পৌঁছে দেওয়ার পদ্ধতিকে বলে সেই বিক্রয় দ্রব্যের প্রচার। বর্তমানে সমস্ত রকম পণ্যদ্রব্যের বিক্রয় যেহেতু বিজ্ঞাপন ও প্রচারের উপরই বহুলাংশে নির্ভর করে, তাই আধুনিক যুগকে প্রচার বা বিজ্ঞাপনের যুগ বলে। বর্তমান সভ্যতার উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হল এই বিজ্ঞাপন, যার মাধ্যমে আজ দৈশিক এবং বৈদেশিক অনেক উপকরণই মানুষের হাতের নাগালে চলে এসেছে।


গুরুত্ব

  • স্বল্প খরচে অনেক সংখ্যক ক্রেতাকে একসঙ্গে পণ্য সম্পর্কে জানানাে যায়।

  • ক্রেতাদের বিভিন্ন পণ্যের ব্যবহার শেখানাে যায়।

  • নতুন ক্রেতা তৈরি ও পুরানাে ক্রেতাদের ধরে রাখা যায়।

  • বাজারের সম্প্রসারণ করা ও বিক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযােগ মনােভাব গড়ে তােলা যায়।

  • উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত বিনিয়ােগকারী সংগ্রহ করা যায়।

  • পণ্যের রপ্তানি বাড়ানাে যায়।

  • নতুন কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি হয়।


তৃতীয় স্তরের অর্থনৈতিক কার্যাবলির বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) -র কার্যাবলি চিহ্নিত করাে।


ভারতের প্রধান প্রধান পর্যটন কেন্দ্রগুলির অবস্থান সম্পর্কে আলােচনা করাে। পর্যটন শিল্পের কয়েকটি গুরুত্ব লেখাে। অথবা, কোনাে দেশের অর্থনীতির ওপর পর্যটন শিল্পের প্রভাব আলােচনা করাে।


পর্যটন বলতে কী বােঝ? পর্যটনের শ্রেণিবিভাগ গুলি আলােচনা করাে। পর্যটনশিল্প গড়ে ওঠার কারণ গুলি কী কী?


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)