সার্ক (SAARC)-এর সমস্যাগুলি কী কী? সার্ক (SAARC)-এর সংগঠনের সাফল্যগুলি আলােচনা করাে।

সার্ক-এর সমস্যা

[1] ভারত সম্পর্কে সন্দেহ: বিভিন্ন সময়ে সার্কভুক্ত দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক অসন্তোষ লক্ষ করা গেছে। বিশেষ করে ভারত সম্পর্কে প্রতিবেশী ছােটো রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। জনশক্তি, অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিতে বলীয়ান ভারত সম্পর্কে প্রতিবেশী বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল প্রভৃতি দেশগুলি সন্দেহ পােষণ করে থাকে। এরূপ অন্তর্দ্বন্দ্ব সার্কের শক্তিবৃদ্ধির পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।


[2] চিনের সঙ্গে আঁতাঁত: বাংলাদেশ, নেপাল, পাকিস্তান প্রভৃতি দেশগুলি অনেক সময় ভারত সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে সন্দিহান হয়ে চিনের সঙ্গে আঁতাত গড়ে তুলেছে। ফলে সার্কের সদস্যগুলির মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাসভঙ্গ হয়েছে।


[3] ভারত-পাক সম্পর্ক: সার্কের সাফল্যের ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্তানের অস্থির ও বিরােধিতাপূর্ণ সম্পর্ক যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের মধ্যে বিরােধ ও ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কার্গিলে পাক সেনাদলের অনুপ্রবেশের ঘটনা দু-দেশের সম্পর্কের যথেষ্ট অবনতি ঘটিয়েছে। আঞ্চলিক ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা, সামরিক প্রতিযােগিতা, সংঘর্ষ প্রভৃতি ঘটনার প্রভাব সার্কের অভ্যন্তরে যথেষ্ট বাধার সৃষ্টি করেছে।


[4] সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ: ভারতীয় উপমহাদেশে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সার্কের কাজে যথেষ্ট ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। তামিল জঙ্গি হানায় শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি প্রেমদাশার মৃত্যু, ভারতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস, ভারতে পাক ISI-এর গুপ্তচরবৃত্তি ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ, ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে মুম্বাই বিস্ফোরণ, বাংলাদেশে ভারত বিরােধী মৌলবাদ প্রভৃতি ঘটনা সার্কের বিভিন্ন শীর্ষ সম্মেলনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে।


[5] তামিল জঙ্গি সমস্যা: শ্রীলঙ্কায় তামিল জঙ্গিদের সন্ত্রাসবাদী কাজ ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে প্রচ্ছন্ন বিরােধ সৃষ্টি করেছে। তামিল জঙ্গিবাদী কার্যকলাপের ঘটনায় শ্রীলঙ্কা সন্দেহ করে যে, এই কার্যকলাপের প্রতি ভারতের মদত রয়েছে। ফলে ভারত-শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে, যা পরােক্ষভাবে সার্কের শক্তি দুর্বল করেছে।


[6] ভারসাম্য নষ্ট: সার্কের সদস্যভুক্ত ক্ষুদ্র ও বৃহৎ রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবধান, প্রাকৃতিক সম্পদের অসমবণ্টন প্রভৃতি ঘটনা সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শক্তির ভারসাম্য নষ্ট করেছে। দুর্বল রাষ্ট্রগুলি ভারতের তুলনায় খুবই অনগ্রসর হওয়ায় সার্কের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।


[7] মতভেদ: সার্কের কর্মপদ্ধতি ও কার্যকলাপ সম্পর্কে বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতভেদ রয়েছে। এই মতভেদ সার্কের সমস্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি করছে।


[8] সহযােগিতার অভাব: সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অনেক সময় সহযােগিতার অভাবের ফলে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না এবং দেশগুলির উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে।


সার্ক-এর সার্বিক সাফল্য


সদস্য রাষ্ট্রগুলির নানাবিধ সমস্যার সমাধান এবং বিভিন্ন বিষয়ে সাফল্যের ক্ষেত্রে সার্ক যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছে।


  • [1] সার্কের সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক আদানপ্রদান ও বাণিজ্যিক সহযােগিতা যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। 

  • [2] পারস্পরিক সহযােগিতার মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদ প্রতিরােধেও যথেষ্ট সাফল্য এসেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা খুবই প্রশংসার যােগ্য। 

  • [3] দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের জন্য সার্ক বিশেষ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। 

  • [4] খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে সদস্য রাষ্ট্রগুলির মধ্যে সহযােগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

  • [5] শিশু কন্যাদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে সার্ক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 

  • [6] কাঠমান্ডুতে সার্কের স্থায়ী সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করে সার্কের কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।