উপনিবেশবাদ ও অব-উপনিবেশবাদ কাকে বলে | প্রাচীনযুগ ও আধুনিক যুগের বিভিন্ন ঔপনিবেশিক শক্তির উদাহরণ দাও।

উপনিবেশবাদ

ল্যাটিন 'Colonia' শব্দটি থেকে ইংরেজি 'Colony' বা 'Colonialism' শব্দটির উৎপত্তি হয়েছে। 'Colonialism' শব্দটির বাংলা অর্থ হল উপনিবেশবাদ। বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে উপনিবেশবাদের সংজ্ঞা দেওয়া হয়। যেমন一


[1] সাধারণ অর্থ: সাধারণভাবে উপনিবেশবাদ বলতে একদল‌ মানুষের বা একটি দেশের ওপর জোরপূর্বক শাসন প্রতিষ্ঠাকে বােঝানাে হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে, উপনিবেশ হল কোনাে মাতৃভূমি দেশ থেকে দূরে অবস্থিত কোনাে নগর বা রাষ্ট্র বা অন্য কোনাে ভৌগােলিক অঞ্চল যেখানে উক্ত মাতৃভূমি থেকে আসা লােকজন আধিপত্যমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। উদাহরণ হিসেবে আমেরিকায় অবস্থিত ইংল্যান্ডের ত্রয়ােদশ উপনিবেশের কথা বলা যেতে পারে, যেখানে মাতৃভূমি ইংল্যান্ডের বাসিন্দারা দূরবর্তী আমেরিকার উপনিবেশে আধিপত্যমূলক শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল।


[2] জনগণ ও সম্পদের ওপর আধিপত্য: সাধারণভাবে বলা হয় যে, কোনাে সবল রাষ্ট্র যখন কোনাে দুর্বল রাষ্ট্রের ওপর নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার দ্বারা দুর্বল রাষ্ট্রটির বাসিন্দাদের ওপর শােষণ ও অত্যাচার চালায় এবং সেদেশের সম্পদ অধিকার করে, তখন সবল রাষ্ট্রটিকে ঔপনিবেশিক শক্তি এবং দুর্বল রাষ্ট্রটিকে সবল রাষ্ট্রটির উপনিবেশ বলা হয়।


[3] আধুনিক অর্থ: আধুনিক অর্থে, কোনাে ভূখণ্ড ও সেখানকার জনগােষ্ঠীর ওপর রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার পর সেখানকার অর্থনৈতিক কাঠামােকে নিজ দেশের নিয়ন্ত্রণে আনার ঘটনা হল উপনিবেশবাদ, অর্থাৎ উপনিবেশের জনগােষ্ঠীর কোনাে দিকই ঔপনিবেশিক শক্তির নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে না।


অব-উপনিবেশবাদ


[1] Decolonisation বা অব-উপনিবেশবাদ কথার অর্থ হল ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান, অর্থাৎ উপনিবেশবাদের বিপরীত ধারণা হল ‘অব-উপনিবেশবাদ’। জার্মান বিশেষজ্ঞ মরিৎস জুলিয়াস বন (Moritz Julius Bonn) ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম Decolonisation শব্দটি ব্যবহার করেন। এককথায়, ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তিকে অব-উপনিবেশীকরণ বা Decolonisation বলা হয়।


[2] অন্যভাবে বলা যায় যে, অব-উপনিবেশবাদ হল, পূর্বে কোনাে ঔপনিবেশিক শক্তির উপনিবেশ ছিল এমন কোনাে দেশকে রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রদান।


[3] দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রি.) পর থেকে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন উপনিবেশগুলি পশ্চিম সার্বভৌম সাম্রাজ্যবাদী শক্তির অধীনতা থেকে মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে তীব্র সংগ্রাম শুরু করলে অধিকাংশ উপনিবেশ স্বাধীনতা লাভে সক্ষম হয়। ঔপনিবেশিক শক্তির অধীনতা থেকে উপনিবেশগুলির মুক্তির ঘটনাকে সাধারণভাবে 'অব-উপনিবেশীকরণ' (Decolonisation) বলা হয়।


প্রাচীন ও আধুনিক যুগের ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র


[1] প্রাচীন যুগের উপনিবেশ: পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রাচীনকালে মিশর, পারস্য, গ্রিস, রােম, ভারত প্রভৃতি বিভিন্ন দেশ তাদের সীমানার বাইরের কোনাে না কোনাে দেশে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করেছিল। সুদূর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তখন ভারতের উপনিবেশ গড়ে উঠেছিল বলে জানা যায়। মধ্যযুগে আরব এবং মােঙ্গলরাও দূরদেশে উপনিবেশ স্থাপন করেছিল।


[2] আধুনিক যুগের উপনিবেশ: আধুনিককালে উনবিংশ শতককে উপনিবেশবাদের সুবর্ণ যুগ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই সময় ইউরােপের ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন, ইটালি, ডেনমার্ক, হল্যান্ড, পাের্তুগাল, স্কটল্যান্ড, জার্মানি প্রভৃতি দেশগুলি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানও উপনিবেশের প্রসারে এগিয়ে আসে। পশ্চিমি শক্তিগুলি প্রধানত এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন দেশে নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে।