পটসডাম সম্মেলন ও ইয়াল্টা সম্মেলনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

পটসডাম সম্মেলন

পটভূমি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে যেসব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল পটল্ডাম সম্মেলন। জার্মানির রাজধানী বার্লিনের পাশে পটল্ডাম শহরে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী চলা এই সম্মেলনে মিলিত হন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস. ট্রম্যান, সােভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক ই. স্টালিন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল।


আলােচ্য বিষয়


  • জার্মানির কাছ থেকে যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ আদায়।

  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে জার্মানির সমাজব্যবস্থার পুনর্গঠন।

  • ইয়াল্টা সম্মেলনের ঘােষণাপত্রগুলির মূল্যায়ন।

  • পােল্যান্ডের পশ্চিম সীমান্ত নির্ধারণ।


পটসডাম সম্মেলন গৃহীত সিদ্ধান্ত


  • ব্রিটেন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠন করা হবে। এই কাউন্সিল জার্মানি, ইতালি, রুমানিয়া, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি ও ফিনল্যান্ডের সঙ্গে শান্তি চুক্তির খসড়া তৈরি করবে।


  • জার্মানিকে আশ্বাস দিয়ে বলা হয় যে, জার্মান জাতির স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে। এর পাশাপাশি জার্মানিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবােধ রক্ষা, রাজনৈতিক দলগুলির অস্তিত্ব রক্ষা, নাগরিক স্বাধীনতা রক্ষা করা হবে।


  • জার্মানির সমরবাদ ও নাৎসিবাদের সম্পূর্ণরূপে অবসান ঘটানাে হবে এবং সামরিক শিক্ষাকেন্দ্র ও নাৎসি প্রতিষ্ঠানগুলির অস্তিত্ব বিলােপ করা হবে।


  • জার্মানিতে যুদ্ধাস্ত্র তৈরি হয় এমন কারখানাগুলি মিত্রপক্ষ নিজেদের অধিকারে নিয়ে আসবে।


  • আন্তর্জাতিক বিচারালয়ে জার্মানির যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হবে।


  • পূর্ব প্রাশিয়াকে ভেঙে এর পশ্চিমাঞ্চল পােল্যান্ডকে দেওয়া হবে। আর অবশিষ্ট অংশ সােভিয়েত রাশিয়া পাবে।


  • জার্মানির নৌবহরগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সােভিয়েত রাশিয়া ও ব্রিটেন নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেবে।


  • জার্মানির কাছ থেকে যুদ্ধের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করবে মিত্রপক্ষ নিযুক্ত কমিশন।


ইয়াল্টা সম্মেলন


পটভূমি: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৪ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃয়সাগরের পাশে ক্রিমিয়ার ইয়াল্টা প্রদেশে এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইয়াল্টা নামে পরিচিত ওই সম্মেলনে যােগ দিয়েছিলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট, ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল আর সােভিয়েত রাষ্ট্রনায়ক স্টালিন।


আলােচ্য বিষয়


  • জার্মানির ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করা।

  • দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে ইউরােপের রাজনৈতিক মানচিত্রের পুনর্গঠন করা।

  • বিশ্বে আন্তর্জাতিক শান্তিপ্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এক আন্তর্জাতিক সংগঠন তৈরি করা।

  • রাশিয়ার দাবিমতাে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো প্রয়ােগের ক্ষমতা নিয়ে আলােচনা করা।

  • দূরপ্রাচ্যের যুদ্ধে রাশিয়ার যােগদানের গুরুত্ব পর্যালােচনা করা।

  • পােল্যান্ডের সীমানা ও ভবিষ্যৎ সরকার গঠনের প্রশ্নের সমাধান করা।


জার্মানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ


  • স্থির হয় নাৎসিবাদের কবল থেকে জার্মানবাসীকে মুক্ত করা হবে এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে।


  • জার্মানির রাজধানী বার্লিনকেও চার ভাগ করে পশ্চিমাংশ আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণে এবং পূর্বাল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকবে বলা হয়। ইংল্যান্ড ও আমেরিকার ভাগ থেকে ফ্রান্সকে কিছুটা অংশ দেওয়া হবে বলেও ঠিক হয়।


  • স্থির হয় নবগঠিত জার্মানির শাসনতান্ত্রিক আইনকানুন আন্তর্জাতিক আইনের অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

  • সিদ্ধান্ত হয় জার্মানির অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে মিত্রপক্ষ।


  • যুদ্ধে জার্মানি মিত্রপক্ষের যে ক্ষয়ক্ষতি করেছিল তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে জার্মানির কাছ থেকে আপাতত ২০ মিলিয়ন ডলার আদায় করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।


রাষ্ট্রসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রস্তুতি


  • রাষ্ট্রসংঘের সংবিধান রচনার জন্য আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো শহরে মিত্রপক্ষের সকল দেশ এপ্রিল মাসে মিলিত হবে।

  • রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য দেশগুলি ভেটো প্রয়ােগের ক্ষমতা পাবে।

  • নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য দেশ অছি পরিষদের রাষ্ট্রগুলির ব্যাপারে আলােচনা করতে পারবে।


পােল্যান্ড নীতি


  • ঠিক হয় দু-টুকরাে পােল্যান্ডকে পুনরায় ঐক্যবদ্ধ স্বাধীন দেশের স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

  • পােল্যান্ডের রাষ্ট্রীয় সীমানা অক্ষুন্ন রাখার জন্য জার্মানির উত্তর পশ্চিম দিকের ভূখণ্ড পাবে পােল্যান্ড।


রাশিয়ার প্রাপ্তি


  • দক্ষিণ মাঞ্চুরিয়া রেলপথ ব্যবহারের অধিকার।

  • কিউরাইল দ্বীপপুঞ্জ, শাখালিনের দক্ষিণাংশ এবং তার নিকটবর্তী উপদ্বীপ।

  • দাইরেনের বন্দরকে আন্তর্জাতিক বন্দর হিসেবে ঘােষণা করা হয়, সেখানে রাশিয়াকে বিশেষ সুযােগসুবিধা ও অধিকার প্রদান করা হয়।

  • পোর্ট আর্থারকে নৌ-ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের জন্য রাশিয়াকে ৯১ বছরের লিজের অধিকার প্রদান করা হয়।