ভারতীয় অর্থনীতিতে রেলপথ স্থাপনের নঞর্থক প্রভাব | ভারতীয় অর্থনীতিতে রেলপথ স্থাপনের কুফল

সূচনা: ব্রিটিশ শাসনকালে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ভারতের সুবিস্তৃত অঞ্চলে রেলপথের প্রসার ঘটে। ড. বিপান চন্দ্র বলেছেন যে, "ভারতে রেলপথের প্রবর্তন ভারতীয় জনজীবন, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করে।" দাদাভাই নওরােজি, জি. ভি. যােশি, ডি. ই. ওয়াচা, জি. এস. আয়ার, রমেশচন্দ্র দত্ত, বালগঙ্গাধর তিলক প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এদেশে রেলপথ নির্মাণের বহু কুফল লক্ষ করেছেন।


রেলপথ স্থাপনের কুফল / নঞর্থক প্রভাব

[1] বৈষম্য: রেলে ভারতীয় যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিভিন্ন বৈষম্যমূলক আচরণ করা হত। শ্বেতাঙ্গ যাত্রীরা ভারতীয় যাত্রীদের লানা করত। মালপত্র পরিবহণে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে ভারতীয়দের বেশি ভাড়া দিতে হত।


[2] সম্পদের বহির্গমন: প্রথম পর্বে রেলপথ নির্মাণে যে বিপুল পরিমাণ মূলধন বিনিযােগ করা হয়, গ্যারান্টিপ্রথার মাধ্যমে সরকার তাতে বার্ষিক ৫ শতাংশ সুদ দেওয়ার গ্যারান্টি দেয়। এর ফলে প্রতি বছর সুদের বিপুল পরিমাণ অর্থ ও লাভের মুনাফা বিদেশে চলে যেতে থাকে।


[3] দেশীয় শিল্পের অবক্ষয়: বিলাতের কারখানায় উৎপাদিত বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী রেলের মাধ্যমে ভারতের বাজারগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে। দেশীয় পণ্যগুলি সস্তা ও সুদৃশ্য বিলাতি পণ্যের সঙ্গে অসম প্রতিযােগিতার সম্মুখীন হয়। ফলে দেশীয় কুটিরশিল্প ও বাণিজ্য চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


[4] যন্ত্রপাতি আমদানি: ভারতে রেলপথ স্থাপনের জন্য রেলের ইঞ্জিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতিগুলি ইংল্যান্ড থেকে ভারতে আনা হত। ফলে ভারতে রেলপথ নির্মিত হলেও এদেশে ভারী শিল্পের বিশেষ প্রসার ঘটেনি।


[5] কর্মসংস্থানে বঞ্চনা: ভারতে রেলপথের সম্প্রসারণের ফলে রেলের কাজে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযােগ হয়। কিন্তু এর উচ্চপদগুলিতে সাধারণত শ্বেতাঙ্গদের নিযুক্ত করা হত। নিম্ন বেতনের শ্রমসাধ্য কাজগুলিতে ভারতীয় অদক্ষ শ্রমিকরা নিযুক্ত হত।


[6] দুর্ভিক্ষের প্রকোপ: দুর্ভিক্ষপীড়িত অঞ্চলে রেলের মাধ্যমে খাদ্য পাঠানাে সহজতর হলেও পরােক্ষে এই রেল ব্যবস্থাই আবার দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে।


[7] জলপথ ও সেচের ক্ষতি: দেশের সুবিস্তৃত অঞ্চলে রেলপথ নির্মাণের জন্য বিভিন্ন নিম্নভূমিতে মাটির বাঁধ দিয়ে রেলপথ এবং নদীনালার ওপর রেলের সেতু তৈরি করতে হয়। ফলে জলস্রোত বন্ধ হত। এসব কারণে কৃষিজমিতে সেচের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।


[8] শাসনের আধিপত্য বৃদ্ধি: রেলপথের শিকড় ভারতের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে ভারতীয়দের ওপর ব্রিটিশ শাসনের আধিপত্য আরও বৃদ্ধি পায়। দেশের যে-কোনাে প্রান্তে ব্রিটিশবিরােধী অসন্তোষ বা বিদ্রোহের সম্ভাবনা দেখা দিলে সরকারের পুলিশ ও সেনা অতি দ্রুত সেই উপদ্রুত অঞ্চলে পৌছে দিয়ে বিদ্রোহীদের দমন করতে সক্ষম হয়।


উপসংহার: রেলপথের প্রসারের ফলে ঔপনিবেশিক ভারতের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিতে শিল্পভিত্তিক অর্থনৈতিক উপাদান যুক্ত হয়। এর দ্বারা দরিদ্র ভারতীয়রা সার্বিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে রেলপথ স্থাপনের কিছু সুফল অবশ্যই ছিল। রেলের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে যােগাযােগ ব্যবস্থায় যে বৈপ্লবিক অগ্রগতি ঘটেছিল তার সুফল থেকে ভারতীয়রা বঞ্চিত হয়নি।


ভারতে কে, কবে সর্বপ্রথম রেলপথ স্থাপন করেন? ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে রেলপথ স্থাপনের বিভিন্ন উদ্দেশ্য বা কারণগুলি উল্লেখ করাে।


ঔপনিবেশিক আমলে ভারতে বিভিন্ন উদ্যোগে রেলপথের সম্প্রসারণ সম্পর্কে আলােচনা করাে।


ভারতীয় অর্থনীতিতে রেলপথ স্থাপনের সদর্থক প্রভাবগুলি সম্পর্কে আলােচনা করাে।

ভারতীয় অর্থনীতিতে রেলপথ স্থাপনের সুফলগুলি উল্লেখ করাে।