শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশ (Short Q&A)

মানবশিশুর বৃদ্ধি বলতে কী বােঝ?

একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মানবশিশুর দেহের আকার বা আয়তন, ওজন ও উচ্চতার স্বতঃস্কৃর্তও স্থায়ী পরিবর্তনই হল বৃদ্ধি।


বিকাশ বলতে কী বােঝ?

বিকাশ হল ক্ৰম-উন্নয়নশীল সামগ্রিক গুণগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়া।


মানবশিশুর বিকাশ বলতে কী বােঝ?

জন্মের পর থেকে শিশুর জীবনব্যাপী সামগ্রিক গুণগত পরিবর্তনের ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হল বিকাশ।


বৃদ্ধি বলতে কী বােঝ?

একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে দেহের আকার বা আয়তন, ওজন ও উচ্চতার স্বতঃস্ফুর্ত ও স্থায়ী পরিবর্তনই হল বৃদ্ধি।


বৌদ্ধিক বিকাশ বলতে কী বােঝ?

বৌদ্ধক বিকাশ বলতে শিশুর সেই ধরণের বিকাশকে বােঝানাে হয়, যার সাহায্যে সে জীবনের নতুন সমস্যা বা পরিস্থিতির সঙ্গে সার্থকভাবে মানিয়ে নেওয়ার সাধারণ মানসিক ক্ষমতা অর্জন করে।


বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্যে একটি পার্থক্য উল্লেখ করাে।

বৃদ্ধি পরিমাপগত ও পরিমাপযােগ্য কিন্তু বিকাশ গুণগত ও পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষ।


মনােবিদগণ জীবন বিকাশের স্তরকে কোন্ কোন্ দিক থেকে ভাগ করেছেন?

মনােবিদগণ জীবন বিকাশের স্তরকে কখনও বয়সের দিক থেকে আবার কখনও শিক্ষার স্তরের দিক থেকে ভাগ করেছেন। যেমন— বয়সের দিক থেকে জীবন বিকাশের স্তরকে পিকুনাস দশটি ভাগে ভাগ করেছেন এবং জোনস্ চারটি ভাগে ভাগ করেছেন। অন্যদিকে, শিক্ষার স্তর অনুযায়ী জীবন বিকাশের স্তর সাত ভাগে বিভক্ত।


বাল্যকালের দুটি মানসিক চাহিদা উল্লেখ করাে।

বাল্যকালের দুটি মানসিক চাহিদা- এই বয়সে নিরাপত্তার চাহিদা খুব বেশি হয়। শিশুরা বড়ােদের কাছ থেকে নিরাপত্তার আশ্বাস পেতে চায়। এই বয়সে শিশুদের মধ্যে কল্পনা ও জ্ঞানের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। অচেনাকে চেনার এবং অজানাকে জানার জন্য তারা উৎসুক হয়ে ওঠে।


আর্নেস্ট জোনস্ প্রদত্ত জীবনবিকাশের স্তরগুলি উল্লেখ করাে।

আর্নেস্ট জোনস্ প্রদত্ত জীবন বিকাশের স্তরগুলি হল- শৈশব, বাল্য, কৈশাের এবং প্রাপ্তবয়স।


শিক্ষার উদ্দেশ্য বা পাঠক্রম নির্ধারণের পূর্বে জীবনবিকাশের ধারাটি বিবেচনা করার দরকার হয় কেন?

জীবন বিকাশের স্তরের সঙ্গে শিক্ষার উদ্দেশ্য ও পাঠক্রম অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। কারণ, শিক্ষার্থীদের চাহিদাকে ভিত্তি করেই শিক্ষার উদ্দেশ্য ও পাঠক্রম নির্ধারিত হয়। আর এই চাহিদা জীবন বিকাশের স্তরের ওপর নির্ভরশীল।


প্রাকৃজন্মস্তর বলতে কী বােঝ?

গর্ভসঞ্চার থেকে শিশু জন্মাবার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত কালকে (প্রায় দশ মাস) বলে প্রাকৃজন্মস্তর। এই সময়কালে শিশু মাতৃগর্ভে থাকে।


সদ্যোজাত স্তর বলতে কী বােঝ?

শিশুর জন্মের পর থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত কালকে সদ্যোজাত স্তর বলে।


প্রারম্ভিক বাল্যের যে-কোনাে চার প্রকার মানসিক চাহিদার উল্লেখ করাে।

প্রারম্ভিক বাল্যের চার প্রকার মানসিক চাহিদা হল- নিরাপত্তার চাহিদা, ভালােবাসার চাহিদা, আত্মপ্রকাশের চাহিদা এবং কল্পনার চাহিদা।


প্রারম্ভিক বাল্যের যে-কোনাে চার প্রকার সামাজিক চাহিদার নাম লেখাে।

প্রারম্ভিক বাল্যের চার প্রকার সামাজিক চাহিদা হল- সহযােগিতার চাহিদা, প্রতিদ্বন্দ্বিতার চাহিদা, সামাজিক সমর্থনের চাহিদা এবং দলভুক্তির চাহিদা।


বাল্যকালের একটি চাহিদার উল্লেখ করাে।

বাল্যকালের একটি চাহিদা হল খাদ্যের চাহিদা।


কৈশােরকালের একটি মনােবৈজ্ঞানিক চাহিদার উল্লেখ করাে।

কৈশােরকালের একটি মনােবৈজ্ঞানিক চাহিদা হল আত্মপ্রকাশের চাহিদা।


শৈশব কাকে বলে?

শিশুর জন্ম থেকে পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত কালকে বলা হয় শৈশব।


শৈশবের দৈহিক বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে।

জন্মের পর প্রথম দুবছরে শিশুর দৈহিক বিকাশ খুব দ্রুত হয়। দুবছর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত দৈহিক বৃদ্ধি আগের তুলনায় কম হয়। পায়ের বৃদ্ধি খুব দ্রুত হয়, দেহের উচ্চতার প্রায় অর্ধেক হয়। মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ধীরে হয়, ঘাড়ের বৃদ্ধি মাঝামাঝি হয়।


শৈশব অবস্থায় মানসিক বিকাশ কীরূপ হয়?

শৈশবে দুবছরের পর থেকেই মানসিক বিকাশ দ্রুত ঘটে। এই সময়ে- মূর্ত বস্তু সম্পর্কে ধারণা গড়ে ওঠে, বস্তুর আকার, আয়তন, রং সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়, সময় ও দূরত্বের ধারণাও তৈরি হয়। স্মৃতিশক্তি দ্রুত বৃদ্ধি পায়, কল্পনা, সৃজনশীলতা, মনােযােগের পরিসর বাড়ে, মূর্ত বস্তুর প্রেক্ষিতে চিন্তাশক্তি ও যুক্তিকরণের ক্ষমতা জন্মায়।


শৈশবের সামাজিক বিকাশের ধারাটি উল্লেখ করাে।

শৈশবের স্তরেই শিশু পরিবারের গণ্ডির বাইরে এসে বৃহত্তর সমাজ-পরিবেশের মুখােমুখি হয়। বালক-বালিকারা একসঙ্গে খেলাধুলা করে, একে অপরের সঙ্গে সহযােগিতা করে, বন্ধুদের সঙ্গে জিনিস ভাগাভাগি করে নিতে শেখে, সামাজিক সমর্থনের প্রত্যাশা করে।


মনােবিদ ব্রিজেস শৈশবের প্রাক্ষোভিক বিকাশের ধারা সম্বন্ধে কী বলেছেন?

মনােবিদ ব্রিজেস বলেছেন যে, তিন মাস বয়স থেকেই শিশুর প্রক্ষোভ বিকশিত হতে শুরু করে।


বাল্য কাকে বলে?

ছয় বছর বয়স থেকে বারাে বছর বয়স পর্যন্ত বয়সকালকে বলে বাল্য।


বাল্যের সামাজিক বৈশিষ্ট্য কীরূপ হয়?

বাল্যকালে প্রথম শৈশবের আত্মকেন্দ্রিকভাব দূর হয়। পরিবারের বাইরে বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশার ফলে সহযােগিতার মনােভাব গড়ে ওঠে। ব্যক্তি ক্রমশ সামাজিক হয়ে ওঠে।


বাল্যের যে-কোনাে দুটি দৈহিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে।

বাল্যের দৈহিক বৈশিষ্ট্য হল - এই বয়সে দৈহিক বিকাশ অব্যাহত থাকে, তবে শৈশবের তুলনায় বিকাশের হার কিছুটা কমে আসে। উচ্চতা ২ থেকে ৩ ইঞ্চি বৃদ্ধি পায় এবং ওজন বাড়ে ২ থেকে ২.৫ কেজি।


কোন্ সময় কালকে মধ্যবাল্যকাল বলা হয়?

পাঁচ থেকে নয় বছর বয়স পর্যন্ত হল মধ্যবাল্য।


কৈশােরের সংজ্ঞা নিরূপণ করাে।

কৈশাের হল এমন একটি বয়ঃস্তর, যে সময়ে ছেলেমেয়েরা মানসিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক এবং দৈহিক বৃদ্ধি ও বিকাশের মধ্য দিয়ে বাল্য থেকে প্রাপ্তবয়স্ককালের দিকে এগিয়ে চলে। মনােবিদ হারলকের মতে, ১২ থেকে ২১ বছর পর্যন্ত সময়কাল হল কৈশােরকাল।


কৈশােরের প্রাক্ষোভিক বিকাশের ধারাটি কীরূপ?

কৈশােরে প্রাক্ষোভিক বিকাশের ক্ষেত্রে এক আলােড়ন দেখা যায়। সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত হয়ে ব্যক্তি স্বাধীন এবং দায়িত্বশীল হতে চায়।


কৈশােরকালে ছেলেদের মধ্যে কী ধরনের দৈহিক পরিবর্তন ঘটে?

কৈশােরকালে ছেলেদের মধ্যে ঘটা দৈহিক পরিবর্তনগুলি। হল- দৈহিক ওজন ও উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। পেশি ও অস্থি শক্তিশালী ও কঠিন হয়। সংবহনতন্ত্র ও শ্বাসতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ে।  দেহের অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিগুলির পূর্ণ বিকাশ ঘটে। পুরুষত্বের লক্ষণগুলি প্রকাশ পায়।


কৈশােরকালে মেয়েদের মধ্যে কী কী ধরনের দৈহিক পরিবর্তন ঘটে?

কৈশােরকালে মেয়েদের দৈহিক পরিবর্তনগুলি হল- দৈহিক ওজন ও উচ্চতার বৃদ্ধি ঘটে। ত্বকের নীচে মেদ জমায় দেহে কমনীয় ভাব দেখা দেয়। স্তনগ্রন্থির বৃদ্ধি ঘটে। নারীত্বের লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে শুরু করে। তারা রজঃস্বলা হয়।


কৈশােরের দুটি সামাজিক চাহিদার উল্লেখ করাে।

বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে মেলামেশার চাহিদা, ক্লাব বা সংঘ গঠনের চহিদা।


জ্য পিয়াজে-এর মতে কৈশাের কী?

জঁ পিয়াজের মতে, কৈশাের হল বয়সের এমন একটি স্তর যেটিকে আদর্শ ও ধারণাগত দিকের পাশাপাশি বাস্তবের সঙ্গে অভিযােজন করার প্রবণতামূলক সময়ও বলা যায়।


ডরােথি রােজার্স বয়ঃসন্ধির যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা উল্লেখ করাে।

ডরােথি রােজার্সের মতে, বয়ঃসন্ধিকাল হল জীবনের এমন একটি সময় যখন সমাজ ব্যক্তিকে শিশু হিসেবেও গণ্য করে না, আবার প্রাপ্তবয়স্কের মর্যাদাও দেয় না।


মনােবিদ এ. টি. জারসিল্ড বয়ঃসন্ধির যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা উল্লেখ করাে।

এ. টি. জারসিল্ডের মতে, বয়ঃসন্ধি হল এমন একটি বয়ঃস্তর যে সময়ে ছেলেমেয়েরা মানসিক, প্রাক্ষোভিক, সামাজিক ও দৈহিক দিক থেকে বাল্যাবস্থা থেকে প্রাপ্তবয়স্ক স্তরের দিকে এগিয়ে চলে।


কৈশােরের দুটি চাহিদা উল্লেখ করাে।

কৈশােরের দুটি চাহিদা হল- স্বাধীনতার চাহিদা এবং আত্মপ্রকাশের চাহিদা।


প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষার স্তরে কী ধরনের কাজ সংযুক্ত করা উচিত?

প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে দৈহিক বিকাশ-সংক্রান্ত কাজ, স্বাস্থ্য সচেতনতা-সংক্রান্ত কাজ, পরিবেশ-সংক্রান্ত কাজ, ইন্দ্রিয়ের পরিমার্জনা-সংক্রান্ত কাজ, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণের কাজ, ভাষাবােধ সম্পর্কিত কাজ এবং সৃজনশীল কাজ ইত্যাদি সংযুক্ত করা উচিত।


প্রাক্প্রাথমিক শিক্ষা কাকে বলে?

২.৫ বছর বয়স থেকে ৫ বছর বয়স পর্যন্ত অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভরতি হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে বলা হয় প্রাক্‌প্রাথমিক শিক্ষা।


প্রাথমিক শিক্ষার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করাে।

ক্রাশ, নার্সারি বিদ্যালয়, কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়, মন্তেসরি বিদ্যালয়, অঙ্গনওয়াড়ি, প্রাবুনিয়াদি বিদ্যালয় এবং বালশিক্ষা মন্দির হল কয়েকটি প্রাক্‌প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিষ্ঠান।


প্রাকৃপ্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি উল্লেখ করাে।

প্রাকপ্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যগুলি হল - অভ্যাস গঠন, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন, প্রাক্ষোভিক বিকাশ, সৌন্দর্যবােধের বিকাশ, মানসিক বিকাশ, কৌতূহলের বিকাশ, দৈহিক বিকাশ ইত্যাদি।


প্রাকৃপ্রাথমিক শিক্ষা কী কী নামে অভিহিত?

প্রাকৃপ্রাথমিক শিক্ষা কিন্ডারগার্টেন, নার্সারি, প্রাবুনিয়াদি, মন্তেসরি প্রভৃতি নামে পরিচিত।


নার্সারি বিদ্যালয় কী?

অর্থনৈতিক কারণে বর্তমানে অনেকক্ষেত্রে পিতা-মাতা উভয়কেই বাড়ির বাইরে চাকরি করতে যেতে হয়। সন্তানদের দৈহিক, মানসিক এবং প্রাক্ষোভিক চাহিদার প্রতি নজর দেওয়ার সময় তাঁরা পান না। এইসব কাজ করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানকেই নার্সারি বিদ্যালয় বলে। ম্যাকমিলান ভাগপীদ্বয় প্রথম এই ধরনের প্রতিষ্ঠান চালু করেন।


মন্তেসরি শিক্ষাপদ্ধতির বৈশিষ্ট্য কী?

মন্তেসরি বিদ্যালয়ে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের নীতিকে প্রাধান্য দিয়ে ইন্দ্রিয় পরিমার্জনার ব্যবস্থা করা হয়। এর জন্য গৃহীত প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ, বাগান তৈরি, হাতের কাজ, সংগীত ইত্যাদি মন্তেসরি শিক্ষাপদ্ধতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।


প্রাথমিক শিক্ষা কী?

ছয় থেকে এগারাে বা বারাে বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষা বলে।


প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে কী কী বিষয় স্থান পেয়েছে?

২০০০ খ্রিস্টাব্দে NCERT জাতীয় স্তরে প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উল্লেখ করেছে— খেলাধুলা ও শরীরচর্চা: সাধারণ খেলাধুলা, ছড়ার মাধ্যমে খেলা, গল্পচ্ছলে খেলা ইত্যাদি। সৃজনশীল ও উৎপাদনমূলক কাজ: কাগজের কাজ, মাটির কাজ, বাগানের কাজ ও চিত্রাঙ্কন। প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতামূলক কাজ: উৎসবপালন, সমাজসেবা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা। পঠনপাঠননির্ভর কাজ: মাতৃভাষা, গণিত, ইতিহাস, ভূগােল, প্রকৃতিবিজ্ঞান, পরিবেশ পরিচিতি ইত্যাদি।


প্রাথমিক শিক্ষার দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করাে।

প্রাথমিক শিক্ষার দুটি উদ্দেশ্য হল—দৈহিক বিকাশ ও স্বাস্থ্যসচেতনতার বিকাশ।


প্রাথমিক শিক্ষার কাঠামােটি উল্লেখ করাে।

প্রাথমিক শিক্ষাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- নিম্নপ্রাথমিক স্তর (প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত) এবং উচ্চপ্রাথমিক স্তর (পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত)।


প্রাথমিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় কেন?

প্রাথমিক শিক্ষার স্তরটি হল সমগ্র শিক্ষা পরিকাঠামাের ভিত্তিস্বরূপ। তাই প্রাথমিক শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।


কোঠারি কমিশন প্রস্তাবিত প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমের চারটি ভাগের নাম লেখাে।

কোঠারি কমিশন প্রস্তাবিত প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমের চারটি ভাগ হল- খেলাধুলা ও শরীরচর্চাভিত্তিক কাজ, উৎপাদনমূলক ও সৃজনমূলক কাজ, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাভিত্তিক কাজ এবং পঠনপাঠননির্ভর কাজ।


শিশুর নান্দনিক বিকাশ ঘটানাের জন্য পাঠক্রমে কী কী অন্তর্ভুক্ত করা উচিত?

শিশুর নান্দনিক বিকাশ ঘটানাের জন্য পাঠক্রমে নাচ, গান, নাটক, মুখাভিনয় প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।


১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য কী ধরনের পাঠক্রম সুপারিশ করা হয়েছে?

১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যে পাঠক্রমের সুপারিশ করা হয়, তার মধ্যে রয়েছে— মাতৃভাষা, গণিত, বিজ্ঞান, পরিবেশ ও সামাজিক পরিবেশ, কর্ম-অভিজ্ঞতা অর্থাৎ সামাজিক প্রয়ােজনে উৎপাদনমূলক কাজ, শরীরচর্চা বা শারীরিক অনুশীলন এবং অঙ্কন, সংগীত ও কলাবিদ্যা।


প্রাথমিক শিক্ষার সৃজনশীল ও উৎপাদনমূলক কাজগুলি কী?

প্রাথমিক শিক্ষার সৃজনশীল ও উৎপাদনমূলক কাজগুলি হল—কাগজের কাজ, মাটির কাজ, বাগানের কাজ, ছবি আঁকা ইত্যাদি।


পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের যে-কোনাে দুটি লক্ষ্য উল্লেখ করাে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষাস্তরের লক্ষ্য হল- দৈনন্দিন জীবনের ন্যূনতম কাজগুলি যাতে সঠিকভাবে করতে পারে সেইভাবে শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে তােলা, শিক্ষার্থীর দৈহিক, সামাজিক, বৌদ্ধিক ও প্রাক্ষোভিক বিকাশে সাহায্য করা।


পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার দুটি ত্রুটি উল্লেখ করাে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার দুটি দুটি হল— শিক্ষার্থীর তুলনায় উপযুক্ত শিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা অনেক কম। অধিকাংশ বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষ এবং উপযুক্ত শিক্ষাসহায়ক উপকরণের অভাব।


নিম্নপ্রাথমিক স্তর বলতে কী বোঝায়?

নিম্নপ্রাথমিক স্তর বলতে প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার স্তরকে বােঝায়। এই স্তরের শিক্ষা শিক্ষার্থীর ছয় বছর বয়সে শুরু হয় এবং নয় বছর বয়স পর্যন্ত চলে।


উচ্চপ্রাথমিক স্তর বলতে কী বােঝায়?

পঞ্চম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার স্তরকে উচ্চপ্রাথমিক স্তর বলে। এই স্তরে শিক্ষা শুরু হয় ১০ বছর বয়সে এবং শেষ হয় ১৩' বছর বয়সে।


কোঠারি কমিশন নিম্নপ্রাথমিক শিক্ষার জন্য কী ধরনের পাঠক্রমের সুপারিশ করেছে?

কোঠারি কমিশন নিম্নপ্রাথমিক শিক্ষার জন্য বিশেষভাবে স্বাস্থ্যশিক্ষা এবং কর্মশিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। খেলাধুলা ও শরীরচর্চা, সৃজনশীল ও উৎপাদনমূলক কাজ, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতামূলক কাজ এবং পঠনপাঠনমূলক কাজের সুপারিশ করা হয়েছে।


ভারতের শিক্ষার বিভিন্ন স্তর উল্লেখ করাে।

ভারতের শিক্ষার বিভিন্ন স্তর হল— প্রাকৃবিদ্যালয় স্তর, প্রাথমিক শিক্ষার স্তর, উচ্চপ্রাথমিক শিক্ষার স্তর, নিম্নমাধ্যমিক শিক্ষার স্তর, মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার স্তর, উচ্চশিক্ষার স্তর।


মাধ্যমিক শিক্ষা বলতে কী বােঝায়?

মাধ্যমিক শিক্ষা হল প্রাথমিক শিক্ষার পর এমন একটি পাঁচ- ছয় বছরের পূর্ণাঙ্গ শিক্ষার স্তর যা শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগত ও সমাজজীবনের জন্য উপযুক্ত যােগ্যতা অর্জনে সাহায্য করে এবং উচ্চস্তরের শিক্ষাগ্রহণের উপযােগী করে গড়ে তােলে।


মাধ্যমিক শিক্ষার যে-কোনাে দুটি উদ্দেশ্য উল্লেখ করাে।

মাধ্যমিক শিক্ষার দুটি উদ্দেশ্য হল— সুনাগরিকতার শিক্ষা ও‌ গণতান্ত্রিক বােধ জাগ্রত করার শিক্ষা।


মাধ্যমিক স্তরের ত্রিভাষা সূত্রটি উল্লেখ করাে।

মাধ্যমিক স্তরের ত্রিভাষা সূত্রটি হল—প্রথম মাতৃভাষা, দ্বিতীয় ইংরেজি বা হিন্দি ভাষা এবং তৃতীয় মাতৃভাষা ও ইংরেজি ভিন্ন অতিরিক্ত একটি ভাষা।


মাধ্যমিক শিক্ষার গুরুত্ব উল্লেখ করাে।

মাধ্যমিক শিক্ষার গুরুত্ব হল- মাধ্যমিক শিক্ষা একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শিক্ষা। এটি শিক্ষার্থীকে গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন সমাজে অংশগ্রহণকারী উপার্জনশীল নাগরিক হতে সাহায্য করে৷ এই শিক্ষা শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রগতিশীল ও বৈজ্ঞানিক মনােভাব গড়ে তােলে।


মাধ্যমিক শিক্ষার প্রধান প্রধান সমস্যা উল্লেখ করাে।

মাধ্যমিক শিক্ষার প্রধান সমস্যাগুলি হল— পাঠক্রম বাস্তবভিত্তিক নয়, বৃত্তিশিক্ষার ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়, শিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকের অভাব, পরীক্ষাব্যবস্থার জুটি।


মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য প্রয়ােজন এমন যে-কোনাে দুটি ব্যবস্থার নাম লেখাে।

মাধ্যমিক শিক্ষার উন্নয়নে প্রয়ােজন হল— বাস্তবমুখী এবং বিজ্ঞানসম্মত পাঠক্রম প্রবর্তন করা, মেধাবী ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যথেষ্ট শিক্ষক নিযুক্ত করা।


লিঙ্গভিত্তিক মাধ্যমিক শিক্ষার বিদ্যালয়গুলিকে কীভাবে শ্রেণিকরণ করা যায়?

লিঙ্গভিত্তিক মাধ্যমিক শিক্ষার বিদ্যালয়গুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়— বালকদের বিদ্যালয়, বালিকাদের বিদ্যালয় এবং সহশিক্ষা বিদ্যালয়।


+2 স্তর বলতে কী বােঝ?

একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষা স্তরটি +2 স্তর নামে পরিচিত। এটি মাধ্যমিকের পরের স্তর। এটিকে উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরও বলা হয়।


উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের পাঠক্রমের ভাষা সংক্রান্ত বিষয়গুলি কী?

উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাস্তরের পাঠক্রমের বিষয়গুলি হল ভাষা: প্রথম ভাষা (বাংলা-সহ ১৪টি ভারতীয় ভাষা)। দ্বিতীয় ভাষা (ইংরেজি)। তবে যাদের প্রথম ভাষা ইংরেজি তাদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় ভাষা হল মাতৃভাষা।


উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বৃত্তিমূলক পাঠক্রমে আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয়গুলি কী?

উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বৃত্তিমূলক পাঠক্রমে আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয়গুলি হল— পরীক্ষাগারভিত্তিক: ভূগােল, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা ইত্যাদি। পরীক্ষাগার- বিহীন: গণিত, অর্থনীতি ইত্যাদি।


উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বৃত্তিমূলক শিক্ষার পাঠক্রমের চারটি ভাগ লেখাে।

উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বৃত্তিমূলক শিক্ষার পাঠক্রমের চারটি ভাগ হল— ভাষা—প্রথম এবং দ্বিতীয়, আবশ্যিক ঐচ্ছিক বিষয়, বৃত্তিমূলক বিষয় এবং  সহপাঠক্রমিক কার্যাবলি।


দুটি ক্রীড়া-সম্বন্ধীয় কাজের উদাহরণ দাও।

দুটি ক্রীড়া-সম্বন্ধীয় কাজ হল- সাধারণ খেলাধুলা এবং ছড়ার মাধ্যমে খেলা ও দেহ সঞ্চালনমূলক খেলা।


সংমিশ্রণ পাঠক্রম ও পদ্ধতিগত চারটি বিদ্যালয়ের নাম লেখাে।

সংমিশ্রণ পাঠক্রম ও পদ্ধতিগত চারটি বিদ্যালয় হল- এক-শিক্ষক পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান,  বাল শিক্ষামন্দির, প্রাবুনিয়াদি বিদ্যালয় এবং মন্তেসরি বিদ্যালয়।


এক-শিক্ষক পরিচালিত বিদ্যালয় বলতে কী বােঝায়?

এক-শিক্ষক পরিচালিত বিদ্যালয়ে একজন মাত্র শিক্ষক বিদ্যালয়ের সবরকম কাজ পরিচালনা করেন। এইসব বিদ্যালয়ে কোনাে নির্দিষ্ট পাঠক্রম বা পদ্ধতি মানা হয় না। এখানে শিশুদের সাধারণ কতকগুলি অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করা হয়।


সহশিক্ষাব্যবস্থা বলতে কী বােঝ?

যে শিক্ষাব্যবস্থায় একটি বিদ্যালয়ে পুরুষ এবং মহিলা শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে পড়াশােনার সুযােগ পায় তাকে সহশিক্ষাব্যবস্থা বলা হয়।


শিশুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার কোন্ কোন্ উপাদান আবর্তিত হতে পারে?

শিশুকে কেন্দ্র করে শিক্ষক, শিক্ষালয়, শিক্ষা পদ্ধতি, শিক্ষামূলক অভিজ্ঞতা ইত্যাদি শিক্ষা-উপাদান আবর্তিত হতে পারে।


কাসা দাই বামবিনি (Casa Dai Bambini) কী?

মাদাম মন্তেসরি প্রবর্তিত শিক্ষানীতিকে বাস্তবে রূপদানের জন্য একটি বিশেষ ধরনের বিদ্যালয় হল 'কাসা দাই বামবিনি। কাসা দাই বামবিনি কথাটির অর্থ হল শিশুদের জন্য গৃহ'।


ডাইড্যাকটিক অ্যাপারেটার্স কী?

মন্তেসরি বিদ্যালয়ে যে যান্ত্রিক পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষা দেওয়া হয়, তা ডাইড্যাকটিক অ্যাপারেটার্স নামে পরিচিত।


প্রথাগত শিক্ষার চারটি পর্যায় কী?

প্রথাগত শিক্ষার চারটি পর্যায় হল- প্রাকৃপ্রাথমিক শিক্ষা, প্রাথমিক শিক্ষা, মাধ্যমিক শিক্ষা এবং উচ্চশিক্ষা।


প্রাথমিক শিক্ষার দুটি প্রয়ােজনীয়তা উল্লেখ করাে।

প্রাথমিক শিক্ষার দুটি প্রয়ােজনীয়তা হল— প্রাথমিক শিক্ষা ওই স্তরের শিক্ষার্থীদের দৈহিক, মানসিক, সামাজিক, প্রাক্ষোভিক প্রভৃতি বিকাশে সহায়ক হয়। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তােলে এবং তাদের মধ্যে কর্মমুখী মনােভাব গঠন করে।


প্রাথমিক শিক্ষার দুটি সমস্যা উল্লেখ করাে।

প্রাথমিক শিক্ষার দুটি সমস্যা হল-

  • আর্থিক সমস্যা: আমাদের দেশে প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি আর্থিক বরাদ্দ প্রয়ােজনের তুলনায় অনেক কম। এ ছাড়া অভিভাবকদের আর্থিক দুরবস্থা ও দারিদ্র্য প্রাথমিক শিক্ষার অগ্রগতিতে বাধা দেয়।

  • পরিকাঠামাে ও পদ্ধতিগত সমস্যা: শিক্ষার পরিকাঠামাে ও পদ্ধতিগত কিছু সমস্যার কারণে প্রাথমিক শিক্ষা ব্যাহত হয়। জুটিপূর্ণ পাঠক্রম, বিদ্যালয়ের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, উপযুক্ত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাব এদের মধ্যে বিশেষ উল্লেখযােগ্য।


শিক্ষার অধিকার আইন (Right to education act) বলতে কী বােঝ?

শিক্ষার অধিকার আইনটি ১ এপ্রিল, ২০১০ সালে চালু হয়। এর মূল বক্তব্য হল ৬ থেকে ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতিটি শিশুর মৌলিক অধিকার হল শিক্ষা। কোনাে পিতা-মাতা বা অভিভাবক এদের শিক্ষাব্যবস্থা না করলে, তা হবে শাস্তিযােগ্য অপরাধ।


মাধ্যমিক শিক্ষা কীভাবে কৈশােরের চাহিদা পরিতৃপ্ত করে তার একটি উদাহরণ দাও।

মাধ্যমিক শিক্ষা জ্ঞান আহরণের চাহিদা পূরণে সহায়তা করে।