বিকাশের প্রক্রিয়া হিসেবে পরিণমন এবং শিখন (Short Q&A)
পরিমন কাকে বলে?
পরিমন হল এমন এক জৈবিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জন্মগত সন্তাবনাগুলির স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশের মধ্য দিয়ে ব্যক্তির আচরণের গুণগত এবং পরিমাণগত উভয় ধরনের পরিবর্তন হয়।
মনােবিদ কোলেসনিকের মতে পরিণমন কী?
মনােবিদ কোলেসনিকের মত অনুযায়ী, জন্মগত প্রবণতাগুলি স্বাভাবিকভাবে প্রস্ফুটিত হওয়ার ফলে শিশুর আচরণের গুণগত এবং পরিমাণগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়াই হল পরিণমন।
স্কিনারের মতে পরিণমন কী?
পরিণমন হল এক বিশেষ প্রকার বিকাশ যা পারিপার্শ্বিক অবস্থার পার্থক্য থাকলেও সংঘটিত হয়।
থম্পসনের মতে পরিণমন কী?
থম্পসনের মত অনুযায়ী, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশু একজন পরিণত মানুষ হয়ে ওঠে এবং যে প্রক্রিয়াটি বাহ্যিক প্রভাব বা উপাদান ছাড়াই শারীরিক পরিবর্তন ঘটায় তাই হল পরিণমন।
পরিণমনের সর্বাধুনিক সংজ্ঞাটি লেখাে।
পরিণমনের সর্বাধুনিক সংজ্ঞাটি হল— শিখন নিরপেক্ষ, অনুশীলনহীন, যে প্রক্রিয়া ব্যক্তির মধ্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংঘটিত হয়ে ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়, সেই প্রক্রিয়াকে পরিণমন বলে।
পরিণমনের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করাে।
পরিণমনের দুটি বৈশিষ্ট্য হল— পরিণমন জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া নয়: পরিণমন জীবনের একটি বিশেষ পর্যায়ে শুরু হয় এবং একটি বিশেষ পর্যায়ে শেষ হয়। পরিণমন প্রশিক্ষণ নির্ভর নয়; পরিণমন ঘটার জন্য কোনাে প্রকার প্রশিক্ষণের প্রয়ােজন হয় না। এটি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে।
সংরক্ষণ বা ধারণ কী?
সংরক্ষণ বা ধারণ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে বিভিন্ন অভিজ্ঞতা দীর্ঘমেয়াদি স্মৃতিতে পরিবর্তিত হয়।
বৃদ্ধি কী?
জীবদেহের আকৃতি ও আয়তনের যে স্থায়ী পরিবর্তন হয়, তাকে বৃদ্ধি বলে। বৃদ্ধি হল একটি পরিমাণগত পরিবর্তন।
বিকাশ কী?
বিকাশ হল ক্রম-উন্নয়নশীল সামগ্রিক গুণগত পরিবর্তনের প্রক্রিয়া।
শিখন প্রক্রিয়ার পর্যায়গুলি কী কী?
শিখন প্রক্রিয়ার পর্যায়গুলি হল— সংরক্ষণ বা ধারণ, পুনরুদ্রেক বা মনে করা, প্রত্যভিজ্ঞা বা চেনা।
শিখনের কার্যকরী বিষয়গুলি কী?
শিখনের কার্যকরী বিষয়গুলি হল— উপযুক্ত পরিবেশ, উপযুক্ত পদ্ধতি, ও প্রেষণা, আত্মপ্রচেষ্টা, ফলপ্রাপ্তি, অনুশীলন, দেহ ও মনের সুস্থতা, মনােযােগ এবং পরিপমন।
স্মৃতি কাকে বলে?
বিষয়বস্তুকে মনে রাখা এবং প্রয়ােজনমতাে স্মরণ করাকেই স্মৃতি বলা হয়। এটি একটি মানসিক ক্রিয়া।
দুটি অভিজ্ঞতার মধ্যে কয়প্রকার সংযোগের মধ্য দিয়ে অনুষঙ্গ স্থাপিত হয়?
যদি দুটি অভিজ্ঞতার মধ্যে অবস্থানগত ও সময়গত নৈকট্য, সাদৃশ্য এবং বৈপরীত্য থাকে, তবে তাদের মধ্যে তিন প্রকার সংযােগের মাধ্যমে অনুষঙ্গ স্থাপিত হয়।
পরিমন এবং শিখনের মধ্যে কী কী সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়?
পরিমন এবং শিখনের মধ্যে যে সাদৃশ্যগুলি লক্ষ করা যায়। সেগুলি হল— শিখন ও পরিপমন উভয়ই ব্যক্তিনির্ভর প্রক্রিয়া। উভয়ই ব্যক্তিজীবনের বিকাশে সহায়তা করে। উভয়ই আচরণ পরিবর্তনের কারণ ও উভয়ই ব্যক্তির ইতিবাচক দিক।
সংরক্ষণত্রিয়া বা ধারণব্রিয়া কাকে বলে?
যে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা ব্যক্তির মধ্যে সংরক্ষিত হয়, মনােবিজ্ঞানের ভাষায় তাকেই সংরক্ষপত্রিয়া বা ধারণক্রিয়া বলে।
ধারণ বা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কোন্ কোন্ বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়?
সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়, সেগুলি হল— যে-কোনাে বিষয় ভালােভাবে বুঝে নেওয়া এবং বিষয়টিকে মাঝে মাঝে অনুশীলন করা, বিষয়টি যত বেশি সাম্প্রতিক হবে, তত বেশি স্মৃতিতে থাকবে, বিষয়ের প্রতি অনুরাগ বেশি হলে তা স্মৃতিতে দীর্ঘস্থায়ী হয়, অতিশিখন, দেহ ও মনের সুস্থতা।
ধারণ বা সংরক্ষণের দুটি শর্ত লেখা।
ধারণ বা সংরক্ষণের দুটি শর্ত হল- যে-কোনাে বিষয় ভালােভাবে বুঝে নেওয়া এবং বিষয়টিকে মাঝে মাঝে অনুশীলন করা। অতিশিখন৷
প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক কাকে বলে?
যখন কোনাে অভিজ্ঞতাকে মনে করার সময় কেবল তার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতাটির সাহায্য গ্রহণ করা হয়, তখন তাকে প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক বলা হয়। উদাহরণ- স্বরূপ বলা যেতে পারে—যদু ও মধু দুই বন্ধু। যদুর কথা বললে যদি মধুর কথা মনে পড়ে তবে তা হল প্রত্যক্ষ পুনরুদ্রেক।
পরােক্ষ পুনরুদ্রেক কাকে বলে?
যখন কোনাে অভিজ্ঞতাকে মনে করার জন্য তার সঙ্গে পরােক্ষভাবে সম্পর্কযুক্ত অভিজ্ঞতার সাহায্য নেওয়া হয়, তখন তাকে বলে পরােক্ষ পুনরুদ্রেক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়—যদু ও মধু দুই বন্ধু। মধুর ভাই বিধু! এক্ষেত্রে যদি যদুর নাম মনে করার সময় মধুর ভাই বিধুর নাম মনে পড়ে, তাহলে বলা হয় সেটি পরােক্ষ পুনরুদ্রেক।
পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে সান্নিধ্যের সূত্রটি কী?
যে সূত্রের কারণে পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে একটি ঘটনা আর একটি ঘটনাকে মনে করিয়ে দেয়, তাকে সান্নিধ্যের সূত্র বলা হয়।
পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে সাদৃশ্যের সূত্রটি কী?
পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে সাদৃশ্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। দুটি বিষয়ের মধ্যে মিল থাকলে, একটি মনে করলে অপরটিও মনে পড়ে। একেই সাদৃশ্যের সূত্র হিসেবে ধরা হয়। যেমন—আম কাঁঠাল।
পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে বৈসাদৃশ্যের সূত্রটি কী?
বৈসাদৃশ্যও পুনরুদ্রেকের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দুটি বিষয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য থাকলে একটি মনে করলে অপরটিও মনে পড়ে যায়। একেই বৈসাদৃশ্যের সূত্র হিসেবে ধরা হয়। যেমন—শ-মিত্র।
পুনরুদ্রেকের দুটি শর্ত লেখাে।
পুনরুদ্রেকের দুটি শর্ত হল- যদি দুটি ঘটনা এক সময়ে ঘটে, তবে সময়গত নৈকট্যের জন্য সেগুলি আমাদের মধ্যে পুনরুদ্রেক ঘটায়, যদি কয়েকটি ঘটনা পর্যায়ক্রমে ঘটে, তবে পুনরাবৃত্তির জন্য সেগুলিও আমাদের মধ্যে পুনরুদ্রেক ঘটায়।
প্রত্যভিজ্ঞা কাকে বলে?
পূর্বার্জিত অভিজ্ঞতা যখন তার প্রতিরূপের সাহায্যে পুনরুখাপিত হয়, তখন তাকে প্রত্যভিজ্ঞা বলে।
