শিক্ষার সঙ্গে শিখনের সম্পর্ক | শিখনের স্বরুপ বা প্রকৃতি

শিক্ষার সঙ্গে শিখনের সম্পর্ক

শিক্ষা এবং শিখন পরস্পরবিরােধী কোনাে বিষয় নয়। শিক্ষার অর্থ হল জ্ঞানার্জন, আবার শিখনের অর্থ হল নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন। অর্থাৎ শিক্ষা এবং শিখন একই সত্তার ভিন্ন নাম। যদি ধরা হয়, শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য শিশুকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তােলা, তাহলে এই উদ্দেশ্যপূরণের অন্যতম হাতিয়ার হল শিখন।

শিখনের স্বরুপ বা প্রকৃতি

শিখন একটি আমৃত্যু প্রক্রিয়া। শিখনের কতকগুলি প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। সেগুলি হল নিম্নরূপ一

(১) লক্ষ্যমুখী: শিখন একটি লক্ষ্যমুখী প্রক্রিয়া। অর্থাৎ শিখনের শিখনের স্বরুপ বা প্রকৃতি শিখন একটি আমৃত্যু প্রক্রিয়া মাধ্যমে কোনাে-না-কোনাে উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়।

(২) আচরণ ও তার পরিবর্তন: শিখন মানেই নতুন আচরণ ও তার পরিবর্তন। অর্থাৎ শিখন ঘটলেই আচরণের কিছুনা কিছু পরিবর্তন ঘটবেই। আদি বা প্রাথমিক আচরণের ক্রমপরিবর্তনগত স্থায়ী বিকাশই হল শিখন।

(৩) সমস্যাসমাধান: শিখনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সমস্যা। সমস্যা না থাকলে সমাধানের কোনাে প্রশ্নই ওঠে না। সমস্যা সমাধানের তাগিদে প্রাণী তার আদি আচরণের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন আচরণ আয়ত্ত করার দিকে অগ্রসর হতে থাকে, যাকে শিখন বলে।

(৪) প্রয়ােজন বা তাগিদ: প্রয়ােজন বা দরকার শিখন প্রক্রিয়াকে সচল রাখে। অর্থাৎ শিখন একটি চাহিদানির্ভর প্রক্রিয়া।

(৫) শিখন ও অভিযােজন: পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে সার্থকভাবে খাপ খাইয়ে চলতে গেলে শিখনের প্রয়ােজন হয়। অর্থাৎ শিখন হল সংগতিবিধানের প্রক্রিয়া।

(৬) শিখন ও বিকাশ: বিকাশের অপর নাম শিখন। প্রকৃত শিখনই ব্যক্তির অন্তর্নিহিত সকল সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

(৭) শিখন ও পরিণমন: শিখন পরিণমনের উপর নির্ভরশীল। দৈহিক বিকাশ যথাযথভাবে না হলে তাই শিখনক্রিয়া ব্যাহত হয়। যেমন— শিশুর আঙুলের মাংসপেশির পরিণমন না হলে সে কলম ধরতে পারে না এবং ‘অ’, ‘আ’ লিখতে পারে না। 

(৮) নতুনত্ব : শিখনের ফলে প্রাণীর আচরণের যে পরিবর্তন ঘটে তা সর্বদা নতুন প্রকৃতির হয়। 

(৯) বিস্তত গােত্র: শিখনের ক্ষেত্র বিস্তারিত। শিখন চিন্তামূলক, কর্মমূলক ও অনুভূতিমূলক সব ধরনের হতে পারে। অর্থাৎ শিখন ব্যক্তির বিবিধ আচরণের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।

(১০) শিখন একটি প্রক্রিয়া, ফল নয়: শিখন একটি প্রক্রিয়া কোনাে প্রক্রিয়ার ফল নয়। বরং জ্ঞান, দক্ষতা প্রভৃতি হল শিখনের ফল।

(১১) অসীম বা নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া: শিখনের ফলে যে নতুন নতুন আচরণ আয়ত্ত হয় তার কোনাে অন্ত নেই। অর্থাৎ শিখন অসীম সম্ভাবনাময় প্রক্রিয়া। 

(১২) শিখন ও আত্মপ্রতিষ্ঠা: শিখন ব্যক্তির জ্ঞানভাণ্ডারকে যেমন সমৃদ্ধ করে, তেমনি এই প্রক্রিয়া ব্যক্তির আত্মপ্রতিষ্ঠা লাভ করতেও সাহায্য করে। 

(১৩) শিখন প্রেষণা ও উদবােধকের পারস্পরিক ক্রিয়াফল: প্রেষণা হল এমন এক উপাদান যা কোনাে আচরণকে উদ্বুদ্ধ করে। এই আচরণকে যে বাহ্যিক বস্তুর দ্বারা উদ্বুদ্ধ করা যায়, তাকে বলে উদবােধক। তাই শিখন, প্রেষণা, উদবােধকের পারস্পরিক সম্পর্ক (শিখন = প্রেষণা x উদবােধক)।

(১৪) পরিবেশনির্ভর: পরিবর্তনশীল পরিবেশে অভিযােজনের জন্য শিখন দরকার। শিখন সম্ভব করে যে-কোনাে পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে। তাই শিখন পরিবেশনির্ভর প্রক্রিয়া।

(১৫) শিখন বিভিন্ন প্রকার: সব শিখন একইভাবে হয় না। তাই শিখনের বিভিন্ন প্রক্রিয়া বিভিন্ন ধরনের।

(১৬) বিশেষ গতিপথ: শিখনের ক্ষেত্রে প্রেষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই প্রেষণা শিখনকে একটি নির্দিষ্ট পথে চালিত করে।

(১৭) অনুশীলননির্ভর: শিখন হল অনুশীলননির্ভর। অনুশীলন অধিক হলে শিখন স্থায়ী হয় কিন্তু অনুশীলন হ্রাস করলে শিখনের শক্তি হ্রাস পায়। তবে ,
  • আচরণের প্রবৃত্তিগত পরিবর্তনকে শিখন বলা যায় না, 
  • আচরণের যে-কোনাে পরিবর্তনকে শিখন বলা যায় না,
  • বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিখনের পদ্ধতিগত পরিবর্তন হতে পারে।
সবশেষে বলা যায়, শিখন হল একটি জটিল মানসিক প্রক্রিয়া, বিকাশের একটি ধারা, যার মান অনুশীলনের উপর নির্ভরশীল।