শিক্ষা মনােবিদ গ্যাগনের বা গ্যানের মতানুসারে শিখনের প্রকারভেদ | বিদ্যালয় শিখনের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব
গ্যাগনের মতানুসারে শিখনের প্রকারভেদ
শিক্ষা মনােবিদ রবার্ট গ্যাগনে (Robert M Gagne) ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁর প্রকাশিত ('The Conditions of Learning') গ্রন্থে শিখন তত্ত্ব ও নির্দেশনামূলক তত্ত্বকে পৃথক করে আলােচনা করেছেন। তিনি শিখনের আটটি পর্যায়কে ক্রম অনুযায়ী বিন্যস্ত করেছেন। তিনি নির্দেশমূলক ঘটনাগুলিকে ৯টি ভাগে আলোচনা করেছেন। সেগুলি হল一
[1] সংকেত শিখন: সংকেত শিখন হল সবচেয়ে সরল প্রকৃতির শিখন এবং শিখনের সর্বনিম্ন স্তর। এটি প্যাভলভের প্রাচীন অনুবর্তন ক্রিয়ার অনুরূপ। এই প্রক্রিয়ায় শিশু কোনাে সিগন্যালের পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া করে। শিখনকে এখানে অনৈচ্ছিক আখ্যা দেওয়া হয়। যেমন— মা হাত বাড়ালে শিশু তার কোলে ঝাপ দেয়।
[2] উদ্দীপক-প্রতিক্রিয়ার শিখন: এই প্রকার শিখনে প্রাথমিক পর্যায়ের থেকে উন্নত ও জটিল পর্যায়ের শিখন। উদ্দীপকের প্রতিক্রিয়া যদিসন্তোষজনক হয় তবে একই প্রতিক্রিয়া বারবার করার প্রবণতা বাড়ে। থর্নড্রাইক ও স্কিনারের শিখন পদ্ধতিতে এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই প্রকার শিখন প্রাণীর ইচ্ছাধীন। এই ধরনের শিখনে প্রেষণা ও পুরস্কারের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। অর্থাৎ শিখনের ফলে শিশুর কাছ থেকে আকাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে তাকে পুরস্কৃত করা হয়।
[3] শৃঙ্খলীকরণ শিখন: শৃঙ্খলিত করার অর্থ হল পূর্বে লেখা হয়েছে এমন একাধিক উদ্দীপক প্রতিক্রিয়াকে একসঙ্গে যুক্ত করা। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া। সময়সীমা এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ, যে কারণে প্রতিটি ঘটনাকে ক্রমানুযায়ী সাজানাে হয়। এই ধরনের শিখনে প্রাণী এমন একপ্রকার দক্ষতা অর্জন করে, যার সাহায্যে সে দুই বা ততােধিক পূর্বাৰ্জিত S-R Bond-কে একটি সংযােজিত পর্যায়ক্রমের সঙ্গে যুক্ত করতে পারে। যেমন— বাক্য গঠন করা, বাঁশি বাজানাে।
বিদ্যালয় শিখনের ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে গ্যাগনের গুরুত্ব
বিদ্যালয়ে নির্দেশদান : গ্যাগনে বলেছিলেন শিখনের এই পর্যায়ক্রমিক ৮টি স্তরের উপর নির্ভর করে নির্দেশনার ৭টি প্রকার রয়েছে一
- শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থীর আগ্রহ বৃদ্ধি করবে, উৎসাহ জাগাবে।
- শিক্ষক-শিক্ষিকা কোনাে পাঠ পড়ানাের সময় শিক্ষার্থীদের জানাবে সেই পাঠের গুরুত্ব ও লক্ষ্য কী এবং সাফল্য অর্জনের পর তা থেকে কী ধরনের ফলপ্রাপ্তি সম্ভব।
- কোনাে পাঠ বা পাঠ্যাংশ পড়ানাের সময় শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দেবেন যাতে তারা পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগায়।
- শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের সামনে আকর্ষণীয় পরিবেশ তৈরির জন্য শিক্ষা সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করবেন।
- শিক্ষিকা বা শিক্ষক শিক্ষার্থীদের শিখনের ব্যাপারে নির্দেশনা দেবেন।
- শিক্ষার্থীরা কতটুকু শিখেছে তা জানার চেষ্টা করবেন শিক্ষক শিক্ষিকা।
- শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত ফিডব্যাকের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষিকা তাদের উন্নয়নে চেষ্টা করবেন।
- শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীদের কাজের মূল্যায়ন করবেন।
- শিক্ষক-শিক্ষিকা শিক্ষার্থীর সংরক্ষণ ও সঞ্চালনমূলক ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে চেষ্টা করবেন।
বিদ্যালয়ে গ্যাগনের শ্রেণিবিভাগের উপযােগিতা
(১) সংকেত শিখন : শিশুরা ক্লাসে কোনাে দুষ্টুমি করলে শিক্ষক যেমন বকা দেন তেমনি ভালাে কাজে প্রশংসাও করেন। এই ধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া শিক্ষক-শিক্ষিকার এবং শিক্ষার্থীদের সংকেত শিখন থেকে বােঝা যায়।
(২) ভাষাগত অনুষঙ্গমূলক শিখন ও শৃঙ্খলীকরণ : শিশুরা প্রথমে বর্ণ তারপর বর্ণমালা, তারপর শব্দ ও তার থেকে বাক্য গঠন করতে পারে শৃঙ্খলাকারে।
(৩) উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়াজনিত শিখন : উদ্দীপকের বিভিন্নতা শিক্ষার্থীদের উপর বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যার মাধ্যমে শিখন সম্পন্ন হয়।
(৪) পার্থকীকরণ শিখন : বিদ্যালয়ে শিশুরা যেমন—বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পৃথকীকরণ করতে শেখে, তেমন একই উচ্চারণের বিভিন্ন শব্দ বা সমােচ্চারিত শব্দগুলির মধ্যে পৃথকীকরণ করতে শেখে।
(৫) ধারণা গঠন ও নিয়ম শিখন : বিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়গুলি সম্পর্কে ধারণা গঠন করতে পারে এবং সেইসকল বিষয়ের নির্দিষ্ট নীতিগুলিকেও আয়ত্ত করে শিক্ষার্থীরা।