বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান ও কৃতিত্ব | বাংলা উপন্যাস সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থান, প্রতিভা ও ভূমিকা

বাংলা সাহিত্যে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান


মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯০৮-১৯৫৬) এক অনন্য জীবনশিল্পী। তিনি বিস্ময়কর প্রতিভা নিয়ে বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হন ও বিচিত্র সৃজন কর্মের দ্বারা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেন। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় কল্লোলীয় ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে সাহিত্যরচনা শুরু করেন—মানবমনের গহন গভীর জটিল মুহূর্তকে তুলে ধরেন মনোবিকলন তত্ত্ব দ্বারা মগ্নচৈতন্যের অতলশায়ী বোধকে প্রকাশ করেছেন : চেতনার পরতে পরতে যে অজানিত রহস্য, যে অভাবিত বিস্ময় আছে যা মানুষের ভাবনা চিন্তা ও কার্যবিধিকে নিয়ন্ত্রিত করে উৎকেন্দ্রিক রূপে তাকে তুলে ধরে মানিকের উপন্যাসে তারই বিচিত্র পরিচয় পাওয়া যায়।


কিন্তু মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পরবর্তীকালে এই মনোবিকলন তত্ত্ব বিরংসার স্তরকে দেহমনের লিবিডোকে অতিক্রম করে নতুন জীবনবোধে উপনীত হয়েছেন যাকে সাম্যবাদী আদর্শ রূপে উল্লেখ করা যায় : ফ্রয়েড য়ুঙের মনোদর্শন পরিণতি লাভ করল মার্কস এঙ্গেলসের বস্তুবাদী দর্শনে। মানিক অনুভব করলেন শিল্পীর দায়িত্ব— বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে সামাজিক ত্রুটি বিচ্যুতি অর্থনৈতিক বৈষম্যের স্বরূপ নির্ণয় করা এবং তা দূর করে শাসন শোষণমুক্ত নতুন সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করা। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শেষ দিকের রচনায় বিশেষত ছোট গল্পে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ সঞ্জাত শ্রেণীচেতনার স্বরূপ নির্ণয় ও সাম্যবাদী সমাজ প্রবর্তনার ভাবনা প্রবল রূপ পেয়েছে।


মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় সাধারণ মানুষকেই তাঁর সাহিত্যে প্রধান ভূমিকায় স্থাপন করেছেন। পূর্ববঙ্গের অতি সাধারণ মানুষের সঙ্গে যেমন তার নৈকট্য ছিল, অন্যান্য অঞ্চলের শ্রমিক কৃষক সর্বহারা মানুষও ছিল যেন তাঁর মনের সঙ্গী, যাদের নিখুঁত নিপুণ বাস্তব রূপালেখ্য তাঁর সাহিত্য। আঞ্চলিক উপন্যাসেরও তিনি বড় শিল্পী—‘পদ্মানদীর মাঝি’তে পদ্মানদীর মাঝি ও সন্নিহিত নিম্নবর্ণের মানুষদেরে জীবনচর্চার যথার্থ চিত্র অঙ্কিত হয়েছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় অরুগ্ন বলিষ্ঠ উদ্দাম জীবনচর্যাকেও তার সাহিত্যের উপজীব্য করেছেন যার শ্রেষ্ঠ নিদর্শন ‘প্রাগৈতিহাসিক’।


মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস :

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০টি উপন্যাস লিখেছেন এবং ২২২টি গল্প লিখেছেন যা তাঁর স্বল্পায়ু জীবনের পক্ষে বিপুল ও বিস্ময়কর সৃষ্টি সম্ভার। তার বিশিষ্ট উপন্যাস হল—‘দিবারাত্রির কাব্য' (১৯৩৫), 'পুতুলনাচের ইতিকথা' (১৯৩৬), ‘অমৃতস্য পুত্ৰাঃ’ (১৯৩৮), ‘সহরতলী’, (১৯৪০), ‘প্রতিবিম্ব’ (১৯৪৩) 'অহিংসা' (১৯৪৮) ইত্যাদি। ছোটগল্প গ্রন্থের মধ্যে বিখ্যাত হল— 'অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প' (১৯৩৫), ‘প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭), ‘আজকাল পরশুর গল্প' (১৯৪৬), '‘ছোটবড়', (১৯৪৮) 'ছোট বকুলপুরের যাত্রী’ ইত্যাদি। কিশোরদের জন্যও তিনি বেশ কয়েকটি উচ্চাঙ্গের গল্প লিখেছেন। কয়েকটি মূল্যবান প্রবন্ধেরও তিনি স্রষ্টা। কবিতা রচনাতেও তাঁর দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়।


দিবারাত্রির কাব্য’ প্রেমভিত্তিক নরনারীর জীবনের জটিল হৃদয় সম্পর্কের চিত্র। এটি ফ্রয়েডীয় তত্ত্ব ও দর্শনের ওপর ভিত্তি করে লেখা উপন্যাসের তিনটি ভাগ—প্রথম ভাগ ‘দিনের কবিতা', দ্বিতীয় ভাগ ‘রাতের কবিতা’, তৃতীয় ভাগ ‘দিবারাত্রির কাব্য'। প্রথম ভাগে হেমন্ত এসেছে সুপ্রিয়ার বাড়ী। সুপ্রিয়া হেমন্তকে ভালবাসত কিন্তু হেমন্ত তাতে সাড়া দেয়নি। সুপ্রিয়ার সঙ্গে পুলিশ অফিসার অশোকের বিয়ে হয় যাতে হেমন্তরও প্রবল ইচ্ছা ছিল। হেমন্তর স্ত্রী গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। দ্বিতীয় ভাগে হেমস্ত পুরীতে আসে যেখানে আঠারো বছর পরে দেখা অনাথ আর মালতীর সঙ্গে। অনাথের সঙ্গে মালতী পালিয়ে এসেছিল। এখন তাদের সম্পর্ক তীব্র ও জটিল। মালতী মন্দিরের পূজারিনী, অনাথ তাকে এড়িয়ে চলে। মালতীর মেয়ে আনন্দর বয়স তের। অনাথ-মালতীর নির্মম হৃদয়হীন সম্পর্ক আনন্দকে ক্লিষ্ট করে। সেও ভালবাসতে চায়। আর নাচের মধ্যে তার শাস্তি। অসুস্থ অশোককে নিয়ে সুপ্রিয়া পুরীতে আসে। হেমন্তর প্রতি সুপ্রিয়ার আকর্ষণ প্রবল ও সে আনন্দর প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ। অতঃপর তৃতীয় পর্ব। সেদিন মালতীর জন্মদিন কিন্তু তাকে উপেক্ষা করে অনাথ চলে যায়, মালতীও গোঁসাই ঠাকুরের আশ্রমে যায়। হেমন্ত বিয়ে করবে আনন্দকে। হেমন্তর কথায় আনন্দ নাচে—পরীনৃত্য। ঘরের সব কাঠ জ্বালিয়ে আনন্দ নাচ শুরু করে, নাচতে নাচতে আগুনে সে ঢলে পড়ে। তার আর প্রাণ নেই৷ এই বিচিত্র ভাব ও রীতির উপন্যাসে রোমান্টিকতার প্রকাশ পাওয়া যায় তা যেন জীবনকে এক মায়াময় দ্যুতিতে এক সাংকেতিকতায়’ সমাচ্ছন্ন করে। নরনারীর জটিল মানসিকতার প্রকাশ ও হৃদয়ের বিচিত্র লীলা উপন্যাসে তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে। উপন্যাসের সব চরিত্রই বিকারগ্রস্ত অসুখী। কেবল নিষ্পাপ আনন্দই সুন্দর। প্রেম তার কাছে পবিত্র স্বপ্ন, মৃত্যুর মধ্য দিয়েই তার জীবন পূর্ণতা লাভ করে। 'দিবারাত্রির কাব্য' সম্বন্ধে লেখক বলেছেন—“দিবারাত্রির কাব্য পড়তে বসে যদি কখনো মনে হয় বইখানি খাপছাড়া অস্বাভাবিক, তখন মনে রাখতে হবে এটি গল্পও নয় উপন্যাসও নয়, রূপক কাহিনী। রূপকের এ একটা নুতন রূপ। একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাবে, বাস্তব জগতের সঙ্গে সম্পর্ক দিয়ে সীমাবদ্ধ করে নিলে মানুষের কতগুলি অনুভূতি যা দাঁড়ায়, সেই গুলিকেই মানুষের রূপ দেওয়া হয়েছে। চরিত্রগুলি কেউ মানুষ নয়, মানুষের prejection—মানুষের এক এক টুকরো মানসিক অংশ।”


পুতুলনাচের ইতিকথা' পল্লীজীবনের বর্ণনা ও বিশ্লেষণ আছে—গাওদিয়া গ্রামের জীবনের জটিল ও সমস্যাপূর্ণ চিত্রণ এখানে পাওয়া যায়। পল্লীজীবনচিত্রণে রোমান্সের মায়াকে পরিহার করে দুঃখ বেদনা দারিদ্র্যক্লিষ্ট সাধারণ জীবনের কথা লেখক তুলে ধরেছেন। উপন্যাসের প্রধান পুরুষ শশী ডাক্তার অনন্য চরিত্র। সে বিজ্ঞাননিষ্ঠ চিকিৎসক কিন্তু পল্লীগ্রামই তার কর্মক্ষেত্র। গ্রামের একঘেয়ে ধূসর জীবনচর্যা তার, সে কর্তব্য পালন করে উদাসীন ভাবে নিরাসক্ত হয়ে। কলকাতায় শিক্ষাপ্রাপ্ত শশীর মন ব্যাকুল উদভ্রান্ত হলেও গ্রামজীবন তাকে আকৃষ্ট করে। এই জীবন সঙ্কীর্ণ মলিন দুর্বল। তা জটিলও বটে। তবু তাকে সে ভালবাসে শ্রদ্ধা করে। জীবনের এই জটিলতাকে সে অনুভব করে পিতা গোপাল, বোন বিন্দু, রহস্যময়ী কুসুম, নির্লিপ্ত উদাসীন কুমুদ ও তার অনুরূপ স্ত্রী মতির মধ্যে। অপরের বিবাহিত পত্নী কুসুমের প্রতি শশীর এক দুর্বোধ্য বিচিত্র আকর্ষণ আছে যদিও তা কোনদিন পূর্ণতা পায় নি। বিজ্ঞাননিষ্ঠ নিরাসক্ত অথচ জীবনের সঙ্গে সংবদ্ধ শশী যেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিরূপ। উপন্যাসে অদৃষ্টবাদের প্রকাশও আছে। কুসুমের বাবা অনন্ত শশীকে বলে—“সংসারে মানুষ চায় এক হয় আর, চিরকাল এমন দেখে আসছি ডাক্তারবাবু। পুতুল বই তো নই আমরা; একজন আড়ালে বসে খেলাচ্ছেন।” উপন্যাসের শেষেও ‘এক অজানা শক্তির অনিবার্য ইঙ্গিতে' মানুষের অপরিবর্তনীয় গতিপথের কথা বলা হয়েছে।


পদ্মানদীর মাঝি’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। পদ্মাকে কেন্দ্রস্থলে স্থাপন করে পদ্মানদীর ধীবরদের বিচিত্র জীবনধারা এতে ধরা পড়েছে। ওই সব নিম্নবর্ণে মানুষদের জীবনচর্যা। ঈর্ষা-বিদ্বেষ, কলহ-সংঘাত, প্রেম প্রতির আবর্ত রচনা করেছে যার মধ্যে জীবনতরী অনিবার্য পরিণতির দিকে এগিয়ে চলে। “উপন্যাসটির সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ হইতেছে ইহার সম্পূর্ণরূপে নিম্নশ্রেণী অধ্যুষিত গ্রাম্যজীবনের চিত্রাঙ্কণে সূক্ষ্ণ ও নিখুঁত পরিমিতিবোধ, ইহার সংকীর্ণ পরিধির মধ্যে সনাতন মানব প্রবৃত্তিগুলির ক্ষুদ্র সংঘাত ও মৃদু উচ্ছ্বাসের যথাযথ সীমানির্দেশ”। কুবেরের সঙ্গে কপিলার নিষিদ্ধ অনৈতিক সম্পর্ক জটিল মুহূর্তের রচনা করেছে—শেষ পর্যন্ত উভয়েই আপনা আপনাপন সংসারকে পরিত্যাগ করে অনির্দেশ্য অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়েছে। উপন্যাসের সর্বাপেক্ষা বিচিত্র চরিত্র হোসেন মিয়া তার রহস্যময় কার্যবিধি প্রবল শক্তিমত্তা ধীবরদের ওপর তার প্রভাব তাকে প্রায় বিধাতার মত প্রবল ও অপ্রতিরোধ্য করে তুলেছে। সমুদ্রের মধ্যে তার আবিষ্কৃত দ্বীপটি গ্রামের মানুষদের কাছে কল্পলোকের বার্তা বহন করে এনেছে যার মোহে আচ্ছন্ন মানুষ সেই অচেনা অজানা রহস্যময় জীবনকে বরণ করার জন্য উদভ্রাস্তের মত ছুটে চলেছে।


জননী’ উপন্যাস মাতৃত্বের মর্যাদা প্রতিপন্ন করে। ‘অমৃতস্য ‘পুত্রাঃ’ এক নৈরাশ্যময় সমাজ ও জীবনের ছবি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ববর্তী সময়ে সমগ্র দেশে যে সমস্যাসংকট কালো বিকারগ্রস্ত অন্ধকার নেমে এসেছিল উপন্যাসে সেই কথা রূপ পেয়েছে। 'চতুষ্কোণ’ উপন্যাসে ফ্রয়েড-য়ুঙ প্রভাবিত যৌনকল্পনা ও মনস্তাত্ত্বিক বিকার ও জটিলতার ছবি সার্থক শিল্পরূপ পেয়েছে। প্রতিবিম্ব’তে রাজনৈতিক ভাবনার প্রকাশ।


বাংলা ছোটগল্পে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিভা :

তাঁর ছোটগল্পের মধ্যে মানিকের প্রতিভা সম্যক প্রকাশ পেয়েছে—ভাব ও আঙ্গিক দুদিক থেকেই ছোটগল্পগুলি অভিনব ও শিল্পময়। 'প্রাগৈতিহাসিক' প্রায় জুগুপ্সাব্যঞ্জক বীভৎস রসের গল্প। ভয়ংকর ডাকাত ভিখু ডাকাতি করতে গিয়ে খুন করে পালাবার সময় কাঁধে বর্ষার খোঁচা খায়। স্যাঙ্গাৎ পেহ্লাদ বাগদীর আশ্রয় চেয়ে বনে মাচার ওপর থাকে। তার ক্ষত বীভৎস ঘা হয়ে পচে যায়, জ্বরাক্রান্ত বিকারগ্রস্ত ওষুধপথ্যহীন ভিখু পেহ্লাদের দয়ায় কোন রকমে বেঁচে ওঠে। তার কাঁধের ঘা শুকোলেও ডান হাত অবশ অকর্মণ্য হয়ে পড়ে। শরীরের তাগিদে সে পেহ্লাদের বৌকে টানাটানি করলে পেহ্লাদ মেরে তাকে তাড়িয়ে দেয় ও রাতের অন্ধকারে পেহ্লাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে ভিখু পালায়। শহরে এসে সে ভিক্ষা শুরু করে কিন্তু দুর্দান্ত ভিখু এতে কি করে সন্তুষ্ট থাকে। আদিম ক্ষুধার টানে ভিখু এক ভিখারিণী পাঁচীর সান্নিধে আসতে চায়। এক রাতে পাঁচীর সঙ্গী বসিরের শরীরে গরম লোহার শিক ঢুকিয়ে ও পরে গলা টিপে তাকে খুন করে পঙ্গু পাঁচীকে পিঠে তুলে নিয়ে চলে যায়। “নবমীর চাঁদ আকাশে উঠিয়া আসিয়াছে। ঈশ্বরের পৃথিবীতে শান্ত স্তব্ধতা। হয়তো ওই চাঁদ আর এই পৃথিবীর ইতিহাস আছে। কিন্তু যে ধারাবাহিক অন্ধকার মাতৃগর্ভ হইতে সংগ্রহ করিয়া দেহের অভ্যন্তরে লুকাইয়া ভিখু ও পাঁচী পৃথিবীতে আসিয়া ছিল এবং যে অন্ধকার তাহারা সন্তানের মাংস আবেষ্টনীর মধ্যে গোপন রাখিয়া যাইবে তাহা প্রাগৈতিহাসিক। পৃথিবীর আলো আজ পর্যন্ত তাহার নাগাল পায় নাই, কোনদিন পাইবেও না”। ভয়ংকর আদিম জীবনচর্যা, অরুগ্ন বলিষ্ঠ উদ্দাম প্রাণচেতনা, এক নির্মম নিষ্ঠুর বর্বর অথচ প্রাণরসম্পূর্ণ জীবনসত্যের প্রতিলিপি হয়েছে 'প্রাগৈতিহাসিক’ গল্প।

নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন—“কোথা থেকে কোথায় চলে গেল গল্পটি। সৃষ্টির আদিতে-যখন মানুষের ইতিহাস আরম্ভ হয়নি তখনকার ভয়াল রাত্রির অন্ধকারে, ডাইনোসর ব্রন্টোসরের যুগে ফার্ণের অরণ্যে কেবল একটি সত্যই বিদ্যমান ছিল : হত্যা করো, আত্মরক্ষা করো, বংশধারাকে অবিচ্ছেদ করো। সেদিনের আদিম জিঘাংসা এবং নীতি-ধর্ম-সমাজ বিবর্জিত পাশব কামনা আজও মানুষের অন্তরতম লোকে নিহিত আছে। সেই প্রাগৈতিহাসিক জান্তবলীলার দিকটিই প্রতীকিত হয়েছে ভিখু এবং পাঁচীর গল্পটিতে”।

আবার ‘নেকী’ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শান্ত নিবিড় প্রেমের গল্প। সমাজের বিশেষ করে বড় মানুষের নীর্লভ বোধকে আঘাত করেছেন ‘যাকে ঘুস দিতে হয়’ গল্পে। অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে মানুষের লড়াই শ্রেণীসচেতন মানুষের সংগ্রাম ও মুক্তিবাসনা অসামান্য রূপ পেয়েছে ‘হারানের নাতজামাই’ ‘ছোট বকুলপুরের যাত্রী' ইত্যাদি গল্পে যেগুলো সাম্যবাদী ভাবনায় রাজনৈতিক বক্তব্য রূপায়ণে শুধু মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় নম বাংলা সাহিত্যেরও অন্যতম শ্রেষ্ঠ গল্পের মর্যাদা পেয়েছে।