আলতাইক ও ককেশীয় ভাষাপরিবারের বিস্তৃত বিবরণ | আমেরিকার আদিম ভাষাসমূহ | মিশ্র বা জারগন ভাষার বৈশিষ্ট্য ও বিভাগ | অবর্গীভূত ভাষার বর্ণনা

আলতাইক ও ককেশীয় ভাষাপরিবারের বিস্তৃত বিবরণ

তুর্ক-মােঙ্গল-মাঞ্চু বা আল্তাইক: সমগ্র মধ্য এশিয়ায় প্রচলিত এই ভাষাবংশের তিনটি শাখা নিম্নরূপ-


  • তুর্ক (Turkish): তাতার (Tartar), উজবেগ (Uzbeg) [উজবেকিস্তানে], কিরঘিজ (Kirghiz) [কিরঘিজস্তানে], তুর্কি (Turkish) [তুরস্কে], কাজাখ (Kazakh) [কাজাখস্তানে] এই শাখার প্রধান ভাষা।

  • মােঙ্গল (Mongolian): এই শাখার ভাষাগুলি শুধু মঙ্গোলিয়া নয়, রাশিয়া এবং এই দুই দেশের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলেও প্রচলিত। এই শাখার খালখা মােঙ্গল (Khalkha Mongolian) ভাষা মঙ্গোলিয়ায় সর্বাধিক প্রচলিত।

  • মাঞ্চু (Manchu): উত্তর চিনের মাঞ্চুরিয়ার মাঞ্জু (Manchu) এবং রাশিয়ার সাইবেরিয়ার তুঙ্গুজ (Tunguse) এই শাখার প্রধান ভাষা।


ককেশীয়: রাশিয়ার ককেশাস পর্বতমালার আশেপাশে অর্থাৎ কৃয়সাগর ও ক্যাম্পিয়ান সাগরের মধ্যবর্তী অঞ্চলে ককেশীয় ভাষাপরিবারের চারটি ছােটো ছােটো ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে প্রধান জর্জিয়ার ভাষা জর্জীয় (Georgian)। এই ভাষা সাহিত্যগুণসম্পন্ন।


আমেরিকার আদিম ভাষাসমূহ সম্বন্ধে বিস্তৃত আলােচনা

আমেরিকার আদিম ভাষাসমূহ: উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ (বা লাতিন) আমেরিকা মহাদেশে ইউরােপীয়দের আগমনের আগে থেকেই যেসব ভাষা প্রচলিত ছিল, সেগুলিকেই আমেরিকার আদিম ভাষা হিসেবে ধরা হয়। ইউরোপীয়রা শুধু এই দুই মহাদেশের অধিবাসীদেরই নির্বিচারে ধ্বংস করেনি, তাদের ভাষাগুলিকেও ক্রমে ক্রমে লুপ্ত করে দিয়েছে। আমেরিকার আদিম অধিবাসীদের ভাষাগুলিকে আটটি শাখায় ভাগ কার যায়—


  • আলাগােংকিয়ান (Algonquion),

  • আথাবাস-কান (Athabascan),

  • ইরােকোইয়ান (Iroquoian),

  • মুসকোজিয়ান (Muskogean)

  • সিওউয়ান্ (Siouan),

  • পিমান্ (Piman),

  • শােশােনিয়ান (Shoshonean) এবং

  • নাহুআটলান্ট (Nahuatlant)।


এই আটটি শাখার ভাষাগুলি সাহিত্য-সংস্কৃতিতে বিশেষ উন্নত নয়, অনেক ভাষার লিপিও নেই। উত্তর আমেরিকার দুটি প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ ভাষা হল মায়া সভ্যতার ভাষা মায়া এবং আজতেক সভ্যতার ও এই বংশের ভাষা উটো। প্রাচীন মেক্সিকোর উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতির ভাষা উটো বা আজটেক (Aztec) নাহুআটলান্ট শাখার প্রধান ভাষা। দক্ষিণ আমেরিকার উন্নত সংস্কৃতির বাহক ইনকাদের ভাষা কিচুয়া বা ইনকা-ও উল্লেখযােগ্য। দক্ষিণ-আমেরিকার আর-একটি উল্লেখযােগ্য ভাষাবংশের নাম আরাওয়াক। অ্যানটিলিশ দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত এই ভাষাবংশের বিভিন্ন ভাষা ছড়িয়ে পড়েছিল।


অবর্গীভূত বা অশ্রেণিবদ্ধ (Unclassified) ভাষা কাকে বলে? পৃথিবীর উল্লেখযােগ্য কয়েকটি অবর্গীভূত ভাষার বর্ণনা দাও।

পৃথিবীর যেসব ভাষায় এমন কোনাে ভাষাতাত্বিক প্রমাণ বা সূত্র পাওয়া যায়নি, যার মাধ্যমে তাকে অন্য একাধিক ভাষার সঙ্গে একই বংশজাত অর্থাৎ কোনাে একটি নির্দিষ্ট ভাষাবর্গের অন্তর্ভুক্ত বলে ধরা যায়, তাদের অবর্গীভূত বা অশ্রেণিবদ্ধ ভাষা (Unclassified language) বলে। জাপানি ও কোরীয়, বাস্ক, বুরুশাসকি ইত্যাদি ভাষা এবং আন্দামানি ভাষাশাখার অন্তর্গত ভাষাগুলি এই শ্রেণির ভাষা।


জাপানি ও কোরীয়: কোরীয় ভাষা এবং উপভাষা-সহ জাপানি ভাষার সঙ্গে আলতাইক ভাষাবংশের ভাষাগুলির অবশ্য সামান্য সাদৃশ্য আছে। জাপান ও রিয়ুকিয়ু দ্বীপে জাপানি ভাষা এবং উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় কোরীয় ভাষা প্রচলিত। জাপানি ভাষায় চিনা ভাষা, লিপি ও সংস্কৃতির প্রভাব যেমন আছে, তেমনি আছে কোরীয় ভাষাতেও।


বাস্ক: ফ্রান্সের পশ্চিমে এবং স্পেনের পূর্বদিকে পিরানিজ পর্বতমালার চারপাশে বাস্ক ভাষা প্রচলিত। উত্তর স্পেনের দুই শতাংশ এবং দক্ষিণ ফ্রান্সের কিছু মানুষের (যাঁরা জাতিতে বাস্ক) মাতৃভাষা ব্যাংক। ফিল্নো-উগ্রীয় অর্থাৎ উরানীয় ভাষা-পরিবারের ভাষাগুলির সঙ্গে এই ভাষার সামান্য সাদৃশ্য আছে।


বুরুশাসকি: ভারতবর্ষের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে প্রচলিত রয়েছে বুরুশাসকি বা খজুনা ভাষা নামক এক বিচ্ছিন্ন ভাষা।


আন্দামানি: আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের বিভিন্ন দ্বীপে প্রচলিত বহু ভাষা যেমন শাড়ি, কোরা, ইয়ারভা প্রভৃতি এই বিচ্ছিন্ন ভাষাশাখার অন্তর্গত। কম্বােডিয়ার খমের (Khmer)-ও অশ্রেণিবদ্ধ ভাষা।


মিশ্র বা জারগন ভাষার বৈশিষ্ট্য ও বিভাগ উল্লেখ করাে।

ভিন্ন ভিন্ন ভাষাগােষ্ঠীর মানুষ পেশাগত বা অভিবাসনজনিত কারণে পাশাপাশি থাকতে গিয়ে একে অপরের ভাষার উপাদান নির্বিচারে বা অজান্তে গ্রহণ করে ফেলে। এভাবেই যখন একটি নিম্নমানের কৃত্রিম ভাষার সৃষ্টি হয়, তাকে মিশ্র ভাষা (Mixed Language বা Jargon) বলে। মিশ্র ভাষার বৈশিষ্ট্যগুলি। হল—


  • প্রথমত, এই ভাষায় একাধিক ভাষার উপাদান উপস্থিত থাকলেও তাদের মধ্যে একটি উন্নত ভাষার প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। 

  • দ্বিতীয়ত, মিশ্র ভাষায় ব্যাকরণের কোনাে সুষ্ঠু নিয়ম বজায় থাকে না। তবে প্রধান ভাষাটির ব্যাকরণের নিয়মটিই সাধারণত অনুসরণ করা হয়। 

  • তৃতীয়ত, মিশ্র ভাষায় শব্দসংখ্যা খুবই সীমিত থাকে। চতুর্থত, মিশ্র ভাষা মূলত কথ্যভাষা বলে সাহিত্যের বিকাশ এই ভাষার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী ঘটনা।


ভাষাবিজ্ঞানীরা মিশ্র ভাষা অর্থাৎ জারগনকে দুভাগে ভাগ করেছেন—পিজিন (Pidgin) এবং ক্রেয়ল (Creole)। মিশ্র ভাষা ব্যবহারকারীদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটলে বা ভাষাগােষ্ঠীগুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে যখন সেই ভাষাটি লুপ্ত হয়ে যায়, তখন তাকে বলে পিজিন। যেমন—পিজিন ইংরেজি, ফরাসি পিজিন, চিনুক, বি-লা-মার। কিন্তু মিশ্র ভাষা যখন লুপ্ত না হয়ে ক্রমে ক্রমে ভাষা ব্যবহারকারীর মাতৃভাষায় পরিণত হয় এবং উন্নত ব্যাকরণবিশিষ্ট লিখিত ভাষায় পরিণত হয়, তখন তাকে বলে ক্রেয়ল। মরিশাস ক্ৰেয়ল, সােয়াহিলি, উর্দু ক্রেয়লের উদাহরণ।


ভাষার রূপতত্ত্ব বা আকৃতি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ করার পদ্ধতিগত সুবিধা কী? এই পদ্ধতিটি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

ইন্দো ইউরােপীয় ভাষাবংশের পরিচয় দাও।

ইন্দো-ইরানীয় শাখার পরিচয় দাও।

গ্রিক ও ইতালীয় ভাষাশাখার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাবংশের ইন্দোইরানীয়, ইতালীয় এবং গ্রিক—এই তিনটি প্রধান শাখা ব্যতীত অপর সাতটি অপ্রধান শাখার পরিচয় দাও।

সেমীয় ভাষাবংশের বিস্তৃত পরিচয় দাও।

হ্যামেটিক বা হ্যামীয় শব্দটি কীভাবে এসেছে? হ্যামীয় ভাষাবংশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

আফ্রিকার ভাষাপরিবার এবং ফিন্নো-উগ্ৰীয় ভাষা পরিবারের বিস্তৃত পরিচয় দাও।


বিলা-মার এবং পিজিন ইংরেজি—এই দুই মিশ্র ভাষার পরিচয় দাও।

চিনুক এবং মরিশাস ক্রেয়ল-এই দুই মিশ্রভাষার পরিচয় দাও।

কৃত্রিম বিশ্বভাষা এসপেরান্তো কীভাবে উৎপত্তি হল?

কৃত্রিম বিশ্বভাষা এসপেরান্তের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।


সাংকেতিক ভাষা কাকে বলে? এই ভাষার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

মানুষের ভাষার সঙ্গে বিভিন্ন মানবজাতি ও উপজাতির সম্পর্ক কী?