বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগে সমাজ ও সংস্কৃতির পরিচয় | বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের প্রধান সাহিত্যের পরিচয় | বাংলা সাহিত্যের আদি ও মধ্য যুগের প্রধান সাহিত্যকীর্তির পরিচয়

বাংলা ভাষার বিকাশের আগে বাঙালি কবিদের সাহিত্যচর্চার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও

আনুমানিক সপ্তম-অষ্টম শতাব্দীতে মাগধী অপভ্রংশ অবহট্ঠ ভাষা থেকে বাংলা ভাষার জন্মের আগে কিংবা বাংলা ভাষার প্রথম যুগে যে বাঙালিরা সাহিত্যচর্চা করেছে, তার প্রমাণ রয়েছে বাঙালি রচিত সে সময়কার সংস্কৃত, প্রাকৃত এবং অপভ্রংশ সাহিত্যে। নীচে এ সম্পর্কে আলােচনা করা হল-


সংস্কৃত সাহিত্য: বাংলাদেশে বাঙালির লেখা প্রথম গ্রন্থ হল অভিনন্দের 'রামচরিত', যা রামচন্দ্রের লঙ্কাকাণ্ড-পরবর্তী কাহিনি অবলম্বনে রচিত (অষ্টম শতাব্দী)। দশম শতাব্দীতে সন্ধ্যাকর নন্দি ওই একই নামে একটি কাব্য রচনা করেন। ধােয়ীর পবনদূত, গােবর্ধন আচার্যের 'আর্যাসপ্তশতী'-ও যথেষ্ট খ্যাতি পেয়েছিল। কবি জয়দেব সংস্কৃত ভাষায় রচিত রাধা কৃয়ের লীলা-বিষয়ক নাট্যকাব্য 'গীতগােবিন্দ'-এর জন্য অমর হয়ে আছেন। বিদ্যাধর সংকলিত সুভাষিত রত্নকোশ বা কবীন্দ্র বচন-সমুচ্চয় এবং শ্রীধরদাস সংকলিত সদুক্তি কর্ণামৃত’ (১২০৬ খ্রিস্টাব্দ) নামক সংস্কৃত সংকলনেও বহু সংখ্যক বাঙালি কবির কাব্যচর্চার পরিচয় পাওয়া যায়।


প্রাকৃত এবং অপভ্রংশ সাহিত্য: প্রাকৃত ভাষায় লেখা ‘গাথাসত্তসই’ এবং 'প্রাকৃত-পৈঙ্গল'—এই দুই সংকলনের বাঙালি রচিত বেশ কিছু কবিতায় আমরা সমকালীন বাঙালি জীবনের পরিচয় পাই। ডাকার্ণব', 'দোহাকোষ পঞ্জিকা' প্রভৃতি অপভ্রংশ ভাষায় লেখা সংকলন গ্রন্থগুলির বেশিরভাগ লেখকই ছিলেন সহজিয়া-বৌদ্ধ বাঙালি।


বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ করে আদি ও মধ্য যুগের প্রধান প্রধান সাহিত্যকীর্তির পরিচয় দাও

বাংলা সাহিত্যকে প্রধানত তিনটি যুগে ভাগ করা হয়-


  • বাংলা সাহিত্যের আদি যুগ: প্রাক্-তুর্কি আক্রমণ যুগ (আনুমানিক ৯০০ থেকে ১২০০ খ্রি.)।

  • বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ: ‘শ্রীকৃয়কীর্তন’ থেকে কবি ভারতচন্দ্রের মৃত্যু পর্যন্ত ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ পূর্ববর্তী যুগ (আনুমানিক ১৩৫১ থেকে ১৮০০ খ্রি.)।

  • বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ: ইউরােপ প্রভাবিত যুগ (১৮০১ খ্রি. থেকে বর্তমান কাল)।


আদি ও মধ্যযুগের প্রধান সাহিত্যগুলি হল-


  • আদি যুগের সাহিত্য: আদি যুগের বাংলা সাহিত্যের একমাত্র নিদর্শন হল চর্যাপদ। এটি বৌদ্ধ সাধকদের সাধনতত্ত্বের সংকলন।


  • মধ্যযুগের সাহিত্য: বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের বিস্তার ছয় শতাব্দী ধরে। চৈতন্যদেবকে (জন্ম ১৪৮৬ খ্রি.) মাঝখানে রেখে এই যুগকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়-প্রাক-চৈতন্য যুগ (১৩৫১-১৫০০ খ্রি.) এবং উত্তর-চৈতন্য যুগ (১৫০০- ১৭৬০ খ্রি.)। প্রাক্-চৈতন্য যুগে রচিত হয়েছে কৃত্তিবাসি 'রামায়ণ', বড়ুচণ্ডীদাসের 'শ্রীকৃয়কীর্তন', মালাধর বসুর 'শ্ৰীকৃয়বিজয়', বিদ্যাপতি ও চণ্ডীদাসের বৈয়ব পদাবলি এবং তিনটি আদি মনসামঙ্গল কাব্য। উত্তর-চৈতন্যযুগের বিচিত্র ও প্রচুর সাহিত্যসম্ভারের মধ্যে বৃন্দাবনদাস, লােচনদাস, জয়ানন্দ এবং কৃয়দাস কবিরাজের চৈতন্য জীবনী-কাব্য ; জ্ঞানদাস ও গােবিন্দদাসের বৈয়ব পদাবলি ; কাশীরাম দাসের মহাভারত ; বহুসংখ্যক মনসা, চণ্ডী, ধর্ম ও অন্নদামঙ্গল কাব্য (কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ, মুকুন্দরাম চক্রবর্তী, ঘনরাম চক্রবর্তী, ভারতচন্দ্র প্রমুখ); মুসলমান কবি দৌলত কাজি ও আলাওলের কাব্যসম্ভার, শাক্ত-পদাবলি এবং ময়মনসিংহগীতিকা উল্লেখযােগ্য। পলাশির যুদ্ধ (১৭৫৭ খ্রি.) বা ভারতচন্দ্রের মৃত্যু (১৭৬০ খ্রি.) থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কালকে যুগসন্ধিক্ষণ বলা হয়।


বাংলা সাহিত্যের যুগ বিভাগ করে আধুনিক যুগের প্রধান প্রধান সাহিত্যের পরিচয় দাও

বাংলা সাহিত্যকে প্রধানত তিনটি যুগে বা পর্যায়ে ভাগ করা হয়। এগুলি হল-

  • বাংলা সাহিত্যের আদি যুগ: প্রাক্-তুর্কি আক্রমণ যুগ (আনুমানিক ৬৫০ থেকে ১৩৫০ খ্রি.)।

  • বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ: ‘শ্রীকৃয়কীর্তন’ থেকে কবি ভারতচন্দ্রের মৃত্যু পর্যন্ত ও ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ পূর্ববর্তী যুগ (আনুমানিক ১৩৫১ থেকে ১৮০০ খ্রি.)।

  • বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ: ইউরােপ প্রভাবিত যুগ (১৮০১ খ্রি. থেকে বর্তমান কাল)


আধুনিক যুগের সাহিত্য: ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ। এই কলেজের পাঠ্যপুস্তক রচনার মধ্য দিয়েই বাংলা সাহিত্য প্রবেশ করে আধুনিক যুগে। আখ্যানকাব্য, মহাকাব্য, নাটক-প্রহসন, গীতিকাব্য এবং সংবাদপত্র সাময়িকপত্রের পথ ধরে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এসে বাংলা সাহিত্য প্রবেশ করে বিশ্বসাহিত্যের দরবারে। আধুনিক যুগের সাহিত্যকীর্তির বিস্তৃতির কারণে এ যুগের সামগ্রিক সাহিত্যসৃষ্টির পরিচয় প্রদান প্রায় অসম্ভব।


উপন্যাস, ছােটোগল্প, রম্যরচনা এবং আধুনিক রীতির কবিতা ও নাটকের সম্ভারে আজ বাংলা সাহিত্য বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্য ভাণ্ডার। মহাকাব্যের ধারায় মাইকেল মধুসূদন দত্ত, গীতিকাব্যের ধারায় বিহারীলাল চক্রবর্তী, উপন্যাসের ধারায় বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র থেকে হাল আমলের সমরেশ বসু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, কবিতায় নজরুল, সুকান্ত, সুভাষ মুখােপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাশ থেকে জয় গােস্বামী, নাটকে দ্বিজেন্দ্রলাল থেকে বিজন ভট্টাচার্য, উৎপল দত্ত থেকে শম্ভু মিত্র, বাদল সরকার প্রমুখ অসংখ্য রচনাকারের নাম উল্লেখ করা যায়। সর্বযুগের বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা রবীন্দ্রনাথও তাে এই আধুনিক যুগেরই ফসল।


বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগে সমাজ ও সংস্কৃতির যে পরিচয় পাওয়া যায় তা সংক্ষেপে লেখাে

সমাজ: মােটামুটিভাবে নবম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কাল হল বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ। বাংলাদেশের সমাজ এবং রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে এই সময়ে লক্ষ করা গেছে। অজস্র ভাঙাগড়া। এই সময়কাল মােটামুটিভাবে পাল রাজত্বের অবসান এবং সেন রাজত্ব প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের পর্ব। পাল এবং সেন দুটি রাজত্বই কৃষিভিত্তিক হলেও পালযুগের সমাজজীবনে আর্যদের চতুর্বর্ণভিত্তিক সমাজব্যবস্থা প্রচলিত না থাকলেও সেনযুগে এই বর্ণপ্রথার তীব্রতা বৃদ্ধি পায়।


সংস্কৃতি: পালরাজারা বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপােষক ছিলেন। তন্ত্রনির্ভর সহজিয়া বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ ঘটে পালযুগে। এই যুগে গুরুর স্থান ছিল সবার ওপরে। অন্যদিকে, সেন রাজত্বকালে বৌদ্ধধর্ম তার গুরুত্ব হারায় এবং পৌরাণিক ব্রাত্মণ্যধর্ম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। বৈদিক দেবতার পুজো এবং বৈদিক শাস্ত্রের চর্চা প্রবল হয়ে ওঠে।


তবে সাহিত্য-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে উভয় শাসনই বেশ ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছিল। পালযুগে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের প্রভূত উন্নতি দেখা যায়। গৌড়ীয় রচনারীতি তৈরি হয়। দর্শন ও ন্যায়শাস্ত্রে শ্রীধর, অভিনন্দ, দায়ভাগ-এর রচয়িতা জীমূতবাহন, 'রামচরিত-এর রচয়িতা সন্ধ্যাকর নন্দী পালযুগেই আবির্ভূত হন। সংস্কৃত সাহিত্যের সুবর্ণযুগ হল সেন শাসনকাল। ধােয়ী, উমাপতি ধর, শরণ, জয়দেবের মতাে লেখকগণ সেনযুগেই আবির্ভূত হন।


"তাকে বাঁধছি মনে করে যতগুলাে পাক দিয়েছি সব পাক কেবল নিজের চার দিকেই জড়িয়েছি।”— মন্তব্যটির তাৎপর্য আলােচনা করাে।

“তুমি যে আমার সঙ্গে লড়াই করবে— সেই লড়াই আমার গুরুর অভ্যর্থনা।”—বক্তা এই কথার মধ্যে দিয়ে কী বােঝাতে চেয়েছেন?

'গুরু' নাটকে 'গুরু'-র ভূমিকাটি বিশ্লেষণ করাে।

একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে 'অচলায়তন' হয়ে ওঠে?


'পাথরগুলাে সব পাগল হয়ে যাবে...' —পাথরগুলাে পাগল হয়ে যাবে কেন?

‘গুরু’ নাটকে পঞ্চক চরিত্রটি আলােচনা করাে।

অচলায়তনের প্রাচীর ভেঙে পড়লে ছাত্রদের মধ্যে এর কী প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল?

"অচলায়তনে তাঁকে কোথাও ধরবে না" -কাকে কেন অচলায়তনের কোথাও ধরবে না?


অচলায়তনের বালক সম্প্রদায়ের কী বৈশিষ্ট্য চোখে পড়ে?

"এই তাে আমার গুরুর বেশ" -গুরুর কোন বেশের কথা বলেছে?

“শিলা জলে ভাসে”—কে, কোন্ প্রসঙ্গে কেন এ কথা বলেছেন?

"ভুল করেছিলুম জেনেও সে ভুল ভাঙতে পারিনি।” কে কাকে কোন্ ভুলের কথা বলেছে? ভুল ভাঙেনি কেন?


“ওরা ওদের দেবতাকে কাঁদাচ্ছে" -কারা কেন তাদের দেবতাকে কাদাচ্ছে?

পঞ্চক শূনকদের কাছ থেকে কোন্ গানের মন্ত্র পেয়েছে? অচলায়তনের মন্ত্রের সঙ্গে তার পার্থক্য কোথায়?

দাদাঠাকুর পঞ্চককে তার দলে নিতে চাননি কেন আলােচনা করাে।

"একটু উৎপাত হলে যে বাঁচি"—কে বলেছে? কোন উৎপাত? সে উৎপাত চায় কেন?


"আমাদের রাজার বিজয়রথ তার উপর দিয়ে চলবে" -প্রসঙ্গটির ব্যাখ্যা দাও।

যূনকরা চাষ করে কেন? তাদের গানে এই চাষের আনন্দ কীভাবে ফুটে উঠেছে?

"ভাই তােরা সব কাজই করতে পাস" -কে, কাকে, কেন এ প্রশ্ন করেছে?

“ঐ আমাদের দুর্লক্ষণ”—কার সম্পর্কে কেন এমন কথা বলা হয়েছে?


“প্রাণকে প্রাণ দিয়ে জাগিয়ে দিয়ে যাও" -কে, কার উদ্দেশ্যে এই প্রার্থনা করেছে? কেন এই প্রার্থনা করেছে?

“সে কি গর্ভের মধ্যেও কাজ করে?" -কে, কোন প্রসঙ্গে বলেছেন? গর্ভের মধ্যে কী কাজ করে? তার কী প্রমাণ মেলে?

"ওঁকে অচলায়তনের ভূতে পেয়েছে" -কার সম্বন্ধে একথা কে বলেছে? অচলায়তনের ভূত কী? কীভাবে তাকে ভূতে ধরেছে?

মহাপঞ্চকের সঙ্গে আচার্য অদীনপুণ্যের বিরােধ বাধল কেন? কে, কোথায় অদীনপুণ্যের নির্বাসন দিলেন?

"শুনেছি অচলায়তনে কারা সব লড়াই করতে এসেছে।" -শিক্ষায়তন কীভাবে অচলায়তনে পরিণত হয়েছিল? সেখানে কারা লড়াই করতে এসেছিল এবং কেন?


নৃতাত্ত্বিক পর্যায় কাকে বলে? কীসের ভিত্তিতে নৃতাত্ত্বিক পর্যায় চিহ্নিতকরণ করা হয় লেখাে।

নিগ্রোবটু, আদি-অস্ট্রাল, দ্রাবিড় এবং আলপীয়- ভারতের এই চারটি প্রাচীন জনগােষ্ঠীর পরিচয় দাও।

নর্ডিক ও মঙ্গোলীয় জনগােষ্ঠী সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

বাঙালি জাতির নৃতাত্ত্বিক পরিচয় দাও।

বাংলার আদি ও পরবর্তীকালের সমাজবিন্যাস সম্পর্কে আলােচনা করাে।

বিভিন্ন বাঙালি জাতির মধ্যে নৃতাত্ত্বিক সম্পর্ক নিজের ভাষায় আলােচনা করাে।