আফ্রিকার ভাষাপরিবার এবং ফিন্নো-উগ্ৰীয় ভাষা পরিবারের পরিচয় | হ্যামীয় ভাষাবংশের পরিচয় | সেমীয় ভাষাবংশের বিস্তৃত পরিচয়

ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাবংশের ইন্দোইরানীয়, ইতালীয় এবং গ্রিক—এই তিনটি প্রধান শাখা ব্যতীত অপর সাতটি অপ্রধান শাখার পরিচয় দাও।

ইন্দো-ইরানীয়, গ্রিক এবং ইতালি- এই তিনটি প্রধান শাখা ব্যতীত ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাবংশের অপ্রধান সাতটি শাখা দেখা যায়। এগুলি হল-


বালিতে-স্লাভিক: লিথুয়ানিয়ার প্রাচীন ও রক্ষণশীল ভাষা লিথুয়ানীয়, বুলগেরিয়ার ভাষা বুলগেরীয়, আধুনিক জনপ্রিয় ভাষা রুশ, পােল্যান্ডের ভাষা পুলিশ, চেক প্রজাতন্ত্রের চেক, শ্লোভাকিয়ার শ্লোভাক, সার্বিয়ার সার্ব ইত্যাদি ভাষা এই শাখার অন্তর্গত।


আলবেনীয়: আলবেনীয় ভাষাশাখার প্রধান ভাষা আলবেনিয়ার ভাষা আলবেনীয়।


কেলতিক: কেলতিক ভাষাশাখার প্রধান ভাষা হল আয়ারল্যান্ডের ভাষা আইরিশ।


জার্মানিক বা তিউনিশীয়: জার্মানিক শাখার তিনটি আঞ্চলিক রূপ রয়েছে- 

  • পূর্ব জার্মানিক উপশাখার অন্তর্গত অধুনালুপ্ত ভাষা গথিক।

  • পশ্চিম জার্মানিক উপশাখা থেকে উদ্ভূত আধুনিক ভাষা ইংরেজি,জার্মান, ওলন্দাজ, ফ্লেমিশ ইত্যাদি।

  • উত্তর জার্মানিক উপশাখা থেকে উদ্ভূত সুইডেনের ভাষা সুইডিস এবং আইসল্যান্ডের ভাষা আইসল্যান্ডিক।


আর্মেনীয়: এশিয়া মাইনর এবং ককেশাস অঞ্চলে প্রচলিত আর্মেনিয়ার রাষ্ট্রভাষা আর্মেনীয় এই ভাষাশাখার প্রধান ভাষা।


তােখারীয়: তােখারীয় উপশাখার ভাষা তােখারীয় একটি অধুনালুপ্ত ভাষা, যা মধ্য-এশিয়ায় সপ্তম শতাব্দীতে ব্যবহৃত হত।


হিত্তীয়: হিত্তীয় উপশাখার ভাষা হল হিট্টি, যে প্রাচীন ভাষার নিদর্শন প্রত্নলিপিতেই কেবল পাওয়া যায়।



সেমীয় ভাষাবংশের বিস্তৃত পরিচয়

ইন্দো-ইউরােপীয় ভাষাবংশের পরে পৃথিবীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভাষা বংশ হল সেমীয়।


সেমীয় ভাষাভাষীদের আদি বাসস্থান উত্তর-আফ্রিকা এবং এশিয়ার আরবীয় উপদ্বীপ অঞ্চল। সেমীয় ভাষা-পরিবারের দুটি উপশাখা-


সেমীয় ভাষাবংশের পূর্ব উপশাখা: এই শাখার অন্তর্গত ছিল বহুকাল পূর্বে বিলুপ্ত অসুর নগররাষ্ট্রের আসিরীয়, আক্কদ নগররাষ্ট্রের আক্কাদীয়, ব্যাবিলন নগররাষ্ট্রের ব্যাবিলনীয় উপভাষা। এই ভাষাগুচ্ছের খ্রিস্টপূর্ব ২৮০০- ৬৫০ স্তরকে বলা হয় প্রাচীন আক্কাদীয় বা আসিরীয় এবং খ্রিস্টপূর্ব ৬৫০-এর পরবর্তী স্তরকে বলা হয় নব আক্কাদীয় বা ব্যাবিলনীয়। এই উপভাষাগুলিকে একসঙ্গে বলা হয়। অ্যাসিরাে ব্যাবিলনীয় আক্কাদীয় ভাষা। ২৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ সময়কার বাণমুখ লিপিতে খােদাই করা প্রত্নলিপি সেমীয় ভাষার পূর্ব উপশাখার প্রাচীন নিদর্শন।


সেমীয় ভাষাবংশের পশ্চিম উপশাখা: পশ্চিমি উপশাখার উত্তর গােষ্ঠীতে আছে প্রাচীনতম ভাষা কানানীয়, ফিনিশীয়, আরামীয় এবং বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টের মূলভাষা হিব্র। সেমীয় ভাষাবংশের পশ্চিমি উপশাখার দক্ষিণ গােষ্ঠীতে আছে আরবি এবং ইথিওপিয়ার (প্রাচীন নাম আবিসিনিয়া) প্রধান ভাষা আমহারিক। অষ্টম খ্রিস্টপূর্বাব্দে লিখিত আরবি ভাষার প্রত্নলেখ নিদর্শন পাওয়া গেছে। মুসলিম ধর্মগ্রন্থ কোরান রচিত হয়েছিল মধ্যযুগীয় আরবি ভাষায়। বর্তমানে আধুনিক আরবি ভাষা উত্তর আফ্রিকার  মরক্কো, তিউনিসিয়া, আলজিরিয়া, লিবিয়া, মিশর বা ইজিপ্ট প্রভৃতি দেশের এবং পশ্চিম এশিয়ার সৌদি আরব, বাহারিন, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, প্যালেস্তাইন, লেবানন, সিরিয়া, ইয়েমেন, ইরাক, কাতার ও ওমানের প্রধান ভাষা।


হ্যামেটিক বা হ্যামীয় শব্দটি কীভাবে এসেছে? হ্যামীয় ভাষাবংশের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

কোরান ও বাইবেলে উল্লিখিত হজরত নূহ-এর এক পুত্র হ্যাম-এর নাম থেকে হ্যামীয় বা হ্যামেটিক ভাষাশাখার নাম হয়েছে।


হ্যামীয় শাখার সর্বপ্রধান ভাষা প্রাচীন মিশরীয়। ৪০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের পর থেকে এই ভাষা প্রাচীন মিশরে প্রচলিত হয় বলে জানা যায়। খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে প্রাচীন মিশরীয় ভাষা থেকে কপটিক (Coptic) ভাষার জন্ম হয়। যােড়শ শতাব্দী পর্যন্ত মিশরবাসী কপটিক ভাষাতে কথা বললেও সপ্তদশ শতাব্দীতে এই ভাষাকে সরিয়ে দিয়ে আরবি ভাষা সমগ্র মিশরে প্রচলিত হয়। হ্যামীয় শাখার অপর দুই ভাষা-উপশাখা হল কুশীয় (Kushitic) ও লিবিকোবারবার (libyco-Berber)। কুশীয় শাখার ভাষা (তমশে, কাবিল ইত্যাদি) লােহিত সাগরের পশ্চিম উপকূলে, ইথিওপিয়া, সােমালিয়া ইত্যাদি পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলিতে অল্প প্রচলিত। লিবিকো বারবার উপশাখার অন্তর্গত লিবিয়া, মরক্কো, আলজিরিয়া, সাহারা ও কানারি দ্বীপের কয়েকটি অপ্রধান ভাষা।


আফ্রিকার ভাষাপরিবার এবং ফিন্নো-উগ্ৰীয় ভাষা পরিবারের বিস্তৃত পরিচয়

আফ্রিকার ভাষাপরিবার: উত্তরাংশ বাদে সমগ্র আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে বসবাস করা কালাে চামড়ার আদি বাসিন্দাদের ভাষাসমূহ (সেমীয়-হামীয় বাদে) প্রকৃতপক্ষে নিম্নলিখিত তিনটি ভাষাপরিবারের সমষ্টি-


  • সুদানি-গিনীয়: পূর্ব আফ্রিকার সুদান, পশ্চিম আফ্রিকার গিনি এবং তার পার্শ্ববর্তী দেশগুলিতে প্রচলিত আছে এই শ্রেণির অন্তর্গত অন্তত একশাে একাত্তরটি ভাষা।

  • বান্টু: মধ্য ও দক্ষিণ আফ্রিকা মহাদেশের বিস্তৃত অঞ্চলে এই ভাষাপরিবারের শতাধিক ভাষা প্রচলিত। এদের মধ্যে নাইজার কাঙ্গো পরিবারের সােয়াহিলি (Swahili), জুলু (Zulu), কঙ্গাে, লুবা, নিয়াঞ্জা ভাষা এবং চারিনিল পরিবারের মাসাই, দিনকা, নুবা, মােরু ভাষা উল্লেখযােগ্য।

  • হটেনটট-বুশম্যান: উওভাষা অন্তরীপের উত্তর-পশ্চিমাংশে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার দক্ষিণাংশে এই শ্রেণির ভাষাগুলি (পিগমিদের) প্রচলিত। বর্তমানে হটেন্টট ভাষার চারটি এবং বুশম্যান ভাষার দুটি উপভাষার অস্তিত্ব রয়েছে।


ফিন্নো-উগ্ৰীয় বা উরালীয়: ইউরােপেরই ফিন্নো-উগ্ৰীয় ভাষা পরিবারের চারটি শাখা—ফিন্নীয় (Finnish), উগ্রীয় (Ugric), পারমীয় (Permian) এবং সামােয়িদ (Samoyede)। ফিনল্যান্ডের ভাষা ফিন্নীয় (Finnish), লাপ্পীয় (Lapponic), এথেনিয়ার ভাষা এস্থােনীয় (Esthonian) [এগুলি ফিন্নীয় শাখার], হাঙ্গেরির ভাষা হাঙ্গেরীয় (Hungarian ) বা মাজ্যর (Magyar) ( উগ্রীয় শাখার অন্তর্গত) সিরিয়েনীয়, ভােটিয়াক [পারমীয় শাখার অন্তর্গত), উরক, তাগভি [সামেয়িদ শাখার অন্তর্গত] ইত্যাদি বহু ভাষা এই ভাষাপরিবারের অন্তর্গত। ইউরাল পর্বতের দু-প্রান্তে প্রচলিত বলে এর আর এক নাম উরালীয়।


ভাষার রূপতত্ত্ব বা আকৃতি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ করার পদ্ধতিগত সুবিধা কী? এই পদ্ধতিটি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

ইন্দো ইউরােপীয় ভাষাবংশের পরিচয় দাও।

ইন্দো-ইরানীয় শাখার পরিচয় দাও।

গ্রিক ও ইতালীয় ভাষাশাখার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।


আলতাইক ও ককেশীয় ভাষাপরিবারের বিস্তৃত বিবরণ দাও।

আমেরিকার আদিম ভাষাসমূহ সম্বন্ধে বিস্তৃত আলােচনা করাে।

অবর্গীভূত বা অশ্রেণিবদ্ধ (Unclassified) ভাষা কাকে বলে? পৃথিবীর উল্লেখযােগ্য কয়েকটি অবর্গীভূত ভাষার বর্ণনা দাও।

মিশ্র বা জারগন ভাষার বৈশিষ্ট্য ও বিভাগ উল্লেখ করাে।


বিলা-মার এবং পিজিন ইংরেজি—এই দুই মিশ্র ভাষার পরিচয় দাও।

চিনুক এবং মরিশাস ক্রেয়ল-এই দুই মিশ্রভাষার পরিচয় দাও।

কৃত্রিম বিশ্বভাষা এসপেরান্তো কীভাবে উৎপত্তি হল?

কৃত্রিম বিশ্বভাষা এসপেরান্তের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।


সাংকেতিক ভাষা কাকে বলে? এই ভাষার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

মানুষের ভাষার সঙ্গে বিভিন্ন মানবজাতি ও উপজাতির সম্পর্ক কী?