ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে কী বােঝায়? ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দাও।

ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতা


ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী ধর্মনিরপেক্ষতা বলতে বােঝায়, রাষ্ট্র ব্যক্তিগত ও গােষ্ঠীগত ধর্মীয় স্বাধীনতা স্বীকার করে, সেই সঙ্গে ধর্ম ছাড়াও ব্যক্তির বিবেকের স্বাধীনতা স্বীকার করে। রাষ্ট্র কোনাে ধর্মের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে না অথবা কোনাে ধর্মীয় ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করে না। ধর্মবিশ্বাস পুরােপুরি নাগরিকদের ব্যক্তিগত বিষয় বলে এক্ষেত্রে মনে করা হয়।


ভারতীয় সংবিধান প্রদত্ত ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার

ভারতে ৪২তম সংবিধান সংশােধনের সাহায্যে সংবিধানের প্রস্তাবনায় ধর্মনিরপেক্ষ শব্দটির সংযােজন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতার অর্থ হল সব ধর্মের প্রতি সমান মর্যাদা প্রদর্শন। সংবিধানের ২৫-২৮ নং ধারায় ভারতীয় নাগরিকদের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার ঘােষিত হয়েছে।


[1] ধর্মপালন ও ধর্মপ্রচারের স্বাধীনতা: সংবিধানের ২৫(১) নং ধারায় বলা হয়েছে বিবেকের স্বাধীনতা এবং ধর্মস্বীকার, ধর্মপালন ও ধর্মপ্রচারের স্বাধীনতা সব নাগরিকের রয়েছে। তবে জনস্বাস্থ্য, জনশৃঙ্খলা বা সামাজিক নীতিবােধ এবং অন্যান্য মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য রাষ্ট্র এই অধিকারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এ ছাড়া কোনাে বিশেষ আচার-অনুষ্ঠান কোনাে ধর্মের অঙ্গ কি না তা বিচার করার ক্ষমতা আদালতের রয়েছে বলে সুপ্রিমকোর্ট ১৯৮৮ সালে হানিফ কুরেশি বনাম বিহার রাজ্য মামলায় রায় দেন। ২৫(২) (ক) নং ধারায় বলা হয়েছে, ধর্মাচরণের সঙ্গে জড়িত অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বা অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষ কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রাষ্ট্রের রয়েছে। তা ছাড়া সামাজিক কল্যাণসাধন ও সমাজসংস্কারের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র প্রয়ােজনমতাে আইন প্রণয়ন করে ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারে। ২৫(২) (খ) নং ধারায় বলা হয়েছে হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে সব হিন্দুধর্মাবলম্বী ব্যক্তির জন্য উন্মুক্ত রাখতে রাষ্ট্র আইন প্রণয়ন করতে পারবে। সংবিধানে হিন্দু শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহার করা হয়েছে; এতে শিখ, জৈন এবং বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।


[2] ধর্মীয় সম্প্রদায় ও ধর্মীয় গােষ্ঠীগুলির স্বাধীনতা: সংবিধানের ২৬ নং ধারা অনুযায়ী প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায় বা ধর্মীয় গােষ্ঠীকে কয়েকটি অধিকার দেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল-

  • (i) ধর্ম বা দানের উদ্দেশ্যে সংস্থা স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ, 

  • (ii) নিজেদের ধর্মীয় কার্যকলাপ নিজেরাই পরিচালনা করা, 

  • (iii) স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন ও ভােগদখল করা এবং 

  • (iv) আইন অনুযায়ী নিজস্ব সম্পত্তি পরিচালনা করা।


তবে রাষ্ট্র জনস্বাস্থ্য, আইনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতা রক্ষার জন্য যে কোনাে ধর্মীয় সম্প্রদায় বা ধর্মীয় গােষ্ঠীর এই অধিকারগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।


[3] কর আদায় সংক্রান্ত বিধিনিষেধ: সংবিধানের ২৭ নং ধারায় ঘােষণা করা হয়েছে যে ধর্ম বা ধর্মসম্প্রদায়ের প্রসার বা রক্ষপাবেক্ষণের জন্য কোনাে ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে কর দিতে বাধ্য করা যাবে না।


[4] শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মশিক্ষার বিধিনিষেধ: সংবিধানের ২৮ নং ধারায় বলা হয়েছে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুরােপুরি সরকারি সাহায্যে পরিচালিত হয় সেখানে ধর্মশিক্ষা দেওয়া যাবে না। এ ছাড়া সরকার কর্তৃক স্বীকৃত বা আংশিকভাবে সরকারি অর্থে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের বিনা অনুমতিতে ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যাবে না। সম্পূর্ণ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অবশ্য ধর্মশিক্ষা নিষেধ করা হয়নি। বলা হয়েছে, রাষ্ট্রের দ্বারা পরিচালিত হলেও কোনাে দাতা বা অছির উইলে ধর্ম বিষয়ে শিক্ষাদানের কথা উল্লিখিত থাকলে, সেখানে ধর্মশিক্ষা দেওয়া যাবে।


অধিকার বলতে কী বােঝ? পৌর অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে আলােচনা করাে।


অধিকারের রূপভেদ ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করাে। অর্থনৈতিক অধিকার এবং সামাজিক ও কৃষ্টিগত অধিকার সম্পর্কে আলােচনা করাে।


নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কটি আলােচনা করাে । অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করাে।


জাতিপুঞ্জের ঘােষণাপত্রে বিবৃত মানবাধিকারসমূহ । মানবাধিকার এবং অন্যান্য অধিকারের মধ্যে পার্থক্য । মানবাধিকারের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ । মানবাধিকারের সংজ্ঞা


ভারতের সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহকে লিপিবদ্ধ করার কারণ । মৌলিক অধিকারের সংজ্ঞা এবং প্রকৃতি । ইতিবাচক ও নেতিবাচক মৌলিক অধিকার কাকে বলে? জরুরি অবস্থায় মৌলিক অধিকারগুলির বৈধতা


ভারতীয় সংবিধানে লিপিবদ্ধ মৌলিক অধিকারগুলির বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।


ভারতের সংবিধানে স্বীকৃত সাম্যের অধিকারটি আলোচনা করাে । ভারতীয় সংবিধানে সংরক্ষিত স্বাধীনতার অধিকার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।