হবস, লক, রুশো কীভাবে প্রাকৃতিক অবস্থাকে বর্ণনা করেছেন?

হবস, লক এবং রুশাে বর্ণিত প্রাকৃতিক অবস্থা

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত সামাজিক চুক্তি মতবাদের অন্যতম মূল বক্তব্য হল, মানব ইতিহাসে এমন একটা সময় ছিল যখন রাষ্ট্র ও সরকার বলে কিছু ছিল না। সেই সময়ে মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক চেতনারও উদ্ভব হয়নি। রাষ্ট্র ও রাজনৈতিক চেতনাবিহীন এই অবস্থাকে চুক্তি মতবাদীরা প্রাকৃতিক অবস্থা (State of Nature) বলে অভিহিত করেন। প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষ যেসব বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হয়েছিল, তা দূর করার লক্ষ্যেই পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে আদিম মানুষ রাষ্ট্র গঠনে উদ্যোগী হয়েছিল বলে তিনজন চুক্তিবাদী রাষ্ট্রদার্শনিক (হবস, লক ও ব্লুশাে) অভিমত প্রকাশ করেছেন।


হবস বর্ণিত প্রাকৃতিক অবস্থা


ইংরেজ রাষ্ট্র দার্শনিক হবস তার লেভিয়াথান (Leviathan) গ্রন্থে (১৬৫১) এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে, প্রকৃতির রাজ্যে অশান্তি ও সংঘাত ছিল দৈনন্দিন ঘটনা। মানুষ ছিল প্রকৃতিগতভাবে স্বার্থপর, লােভী, ধূর্ত, নিষ্ঠুর ও কলহপ্রিয়। এই সময় কোনাে আইন বা সংগঠন না থাকায় প্রত্যেকে ছিল প্রত্যেকের শ। প্রাক্-সামাজিক এই অরাজক অবস্থায় যে যাকে খুশি মারত এবং যা পেত তাই লুঠ করে নিত। কেউ কাউকে বিশ্বাস করত না। একে অন্যকে নিছক স্বার্থের কারণে আঘাত করতে দ্বিধা করত না। স্বাভাবিকভাবেই এই ধরনের অসহনীয় পরিবেশে মানুষের জীবন হয়ে ওঠে নিঃসঙ্গ, দরিদ্র, ঘৃণ্য, পাশবিক ও ক্ষণস্থায়ী (Solitary, poor, nasty, brutish and short)।


দুঃসহ এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে মানুষ উদ্যোগী হয়। তারা বুঝতে পারে যে, তাদের চেয়ে শক্তিশালী কোনাে ব্যক্তি বা ব্যক্তিগােষ্ঠীর কাছে তারা সকলে মিলে আত্মসমর্পণ করলে এই ধরনের অরাজকতার অবসান ঘটবে, তাদের জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এই ধরনের চিন্তাভাবনারই ফসল হল আদিম মানুষের পারস্পরিক চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন। হবসের মতে, এই চুক্তির মাধ্যমে আদিম মানুষ নিজেদের সমস্ত ক্ষমতা নিঃশর্ত ও চূড়ান্তভাবে কোনাে বিশেষ ব্যক্তি বা ব্যক্তিসংসদের হাতে সমর্পণ করে। এই সার্বভৌম ব্যক্তি বা ব্যক্তিসংসদকে হবস বলেছেন 'লেভিয়াথান'।


লক বর্ণিত প্রাকৃতিক অবস্থা


জন লক ১৬৯০ সালে প্রকাশিত তার টু ট্রিটিজেস অব গভর্নমেন্ট (Tuo Treatises of Government) শীর্ষক গ্রন্থে প্রাকৃতিক অবস্থার বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। লকের মতে, প্রাকৃতিক অবস্থা ছিল প্রাক্‌রাষ্ট্রনৈতিক, অর্থাৎ এসময় সমাজজীবন থাকলেও রাষ্ট্রের কোনাে অস্তিত্ব ছিল না। প্রাকৃতিক অবস্থায় প্রকৃতির নিয়মের সাহায্যে মানুষের জীবন পরিচালিত হত। প্রকৃতি-নিয়ন্ত্রিত এই জীবনে সাম্য ও স্বাধীনতা ছিল। যুক্তি ও বিবেকের দ্বারা চালিত হত মানুষ। প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষ জীবনের অধিকার, সম্পত্তির অধিকার ও স্বাধীনতার অধিকার ভােগ করত। লক এসব অধিকারকে প্রাকৃতিক অধিকার (Natural Rights) বলে আখ্যা দিয়েছেন। লকের মতে, প্রকৃতির রাজ্যে সমাজজীবনের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য ছিল। লকের বক্তব্য অনুসারে প্রকৃতির রাজ্য হল শান্তি, পারস্পরিক সহযােগিতা ও সংরক্ষণের অবস্থা (State of Nature was 'a state of perfect freedom, a state of quality, a state of peace, good will, mutual assistance and preservation')।


রুশাে বর্ণিত প্রাকৃতিক অবস্থা


জা জ্যাক রুশাে তার সােশ্যাল কনট্রাক্ট (Social Contract) নামক বিখ্যাত গ্রন্থে প্রকৃতির রাজ্যের বিবরণ দিয়েছেন। রুশাের মতে, আদিম মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বাস করত। তাদের জীবন ছিল সহজ, সরল ও অনাড়ম্বর। প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের মধ্যে কলহ, বিবাদ, হিংসা, বিদ্বেষ ইত্যাদি কিছুই ছিল না। মানুষ তার স্বাভাবিক প্রবৃত্তির দ্বারা চালিত হত। মানুষ এখানে অল্পেই সন্তুষ্ট থাকত। তার বেঁচে থাকার ন্যূনতম প্রয়ােজন সে নিজেই মেটাতে পারত। এখানে কোনাে অসাম্য ছিল না, তাই সবল ও দুর্বলে কোনাে ভেদাভেদ ছিল না। মানুষের ওপর মানুষের কোনাে নিপীড়ন ছিল না। কেউ কারুর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করত না। রুশাে প্রকৃতির রাজ্যের এই অবস্থাকে 'মর্ত্যের স্বর্গ' (Naturalistic Eden) বলে অভিহিত করেছেন।


রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি উল্লেখ করাে । রাষ্ট্র ও সমাজের পার্থক্য ব্যাখ্যা করাে।


সরকার কী? সার্বভৌমত্ব কী? বোঁদা প্রদত্ত সার্বভৌমিকতার সংজ্ঞা। সার্বভৌমিকতার দুটি বৈশিষ্ট্য। জনগণের সার্বভৌমিকতা।


রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সামাজিক সংগঠনের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলি আলােচনা করাে।


সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে রাষ্ট্র বলা যায় কি । রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত ঐশ্বরিক মতবাদটি সমালােচনা-সহ আলােচনা করাে।


রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বলপ্রয়ােগ মতবাদ আলােচনা করাে। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত বলপ্রয়ােগ মতবাদের সমালােচনা


রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে সামাজিক চুক্তি মতবাদ আলােচনা করাে। রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত সামাজিক চুক্তি মতবাদের সমালােচনা ও প্রবক্তা


 হবস, লক এবং রুশাের তত্ত্বের তুলনামূলক আলােচনা করাে।