অধিকার বলতে কী বােঝ? পৌর অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে আলােচনা করাে।

অধিকার


অধ্যাপক হ্যারল্ড ল্যাঙ্কির মতে, অধিকার হল সমাজজীবনের সেইসব সুযােগসুবিধা যেগুলি ছাড়া কোনাে ব্যক্তি সাধারণভাবে তার ব্যক্তিত্বের প্রকৃষ্টতম বিকাশ ঘটাতে পারে না। বার্কারের মতে, সবচেয়ে অধিক সংখ্যক লােকের সর্বাধিক বিকাশসাধনের জন্য যেসব সুযােগসুবিধা বা শর্ত আইন কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়, তাকে অধিকার বলা হয়। বার্কারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী দুটি শর্ত পূরণ করলে কোনাে সুযােগসুবিধাকে অধিকার বলে অভিহিত করা যেতে পারেㅡ

  • [1] সুযােগসুবিধাগুলি প্রত্যেকের ব্যক্তিত্ববিকাশের সহায়ক হবে ও 

  • [2] সুযােগসুবিধাগুলি রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হবে।


অধিকারের রূপভেদ

প্রকৃতিগতভাবে অধিকারকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে একটি হল নৈতিক অধিকার এবং অন্যটি হল আইনগত অধিকার।


[1] নৈতিক অধিকার: যেসব অধিকার সামাজিক ন্যায়নীতিবােধের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তাদের নৈতিক অধিকার বলা হয়। প্রসঙ্গত বলা যায়, নৈতিক অধিকার রাষ্ট্রীয় আইনের দ্বারা স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত নয়।


[2] আইনগত অধিকার: যেসব অধিকার রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে স্বীকৃত এবং সংরক্ষিত, সেগুলিকে আইনগত অধিকার বলে| আইনগত অধিকারকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। সেগুলি হল

  • (i) পৌর অধিকার, 

  • (ii) রাজনৈতিক অধিকার, 

  • (iii) অর্থনৈতিক অধিকার এবং 

  • (iv) সামাজিক ও কৃষ্টিগত অধিকার।


পৌর অধিকার


যেসব সুযােগসুবিধা ব্যতীত মানুষের পক্ষে সুস্থ সামাজিক জীবনযাপন সম্ভব নয় তাদের পৌর অধিকার বলে। গুরুত্বপূর্ণ পৌর অধিকারগুলি হল


[1] বাঁচার অধিকার: বাঁচার অধিকারকে অনেকে মানুষের সহজাত অধিকার বলে অভিহিত করেছেন। বাঁচার অধিকার বলতে আত্মরক্ষার অধিকার এবং আত্মরক্ষার প্রয়োজনে বলপ্রয়ােগের অধিকারকেও বােঝায়। পৃথিবীর প্রত্যেক সভ্য রাষ্ট্রে বাঁচার অধিকার নাগরিকদের প্রধান মৌল অধিকাররূপে স্বীকৃত ও সংরক্ষিত।


[2] স্বাধীনতার অধিকার: ব্যক্তিসত্তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশের জন্য স্বাধীনতার অধিকার অত্যন্ত জরুরি। ব্যক্তিস্বাধীনতার সঙ্গে জড়িত যেসব অধিকারকে স্বাধীনতার অধিকারের অন্তর্ভুক্ত করা হয় তার মধ্যে রয়েছে। চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, স্বাধীনভাবে সংঘ বা সমিতি গঠন করার অধিকার, স্বাধীন পেশা বা বৃত্তি অবলম্বনের অধিকার, স্বাধীনভাবে বসবাসের অধিকার, সভাসমাবেশে স্বাধীনভাবে যােগদান করার অধিকার এবং বিনাবিচারে গ্রেফতার বা আটক না হওয়ার অধিকার ইত্যাদি।


[3] সম্পত্তির অধিকার: সম্পত্তির অধিকার বলতে ব্যক্তির সম্পত্তি অর্জন, ভােগ, দখল এবং সম্পত্তি ক্লয়বিক্রয়ের অধিকারকে বােঝায়। সম্পত্তিদান এবং সম্পত্তি হস্তান্তরও এর মধ্যে পড়ে।


[4] পরিবার গঠনের অধিকার: অ্যারিস্টটলের মতে, পরিবার হল সমাজজীবনের মূল ভিত্তি। এই কারণে বিবাহের মাধ্যমে নাগরিকদের সুখী ও সমৃদ্ধ পরিবার গঠনের অধিকার প্রতিটি রাষ্ট্রেই স্বীকৃত হয়েছে।


[5] ধর্মের অধিকার: ধর্মের অধিকার আধুনিক রাষ্ট্রে একটি স্বীকৃত পৌর অধিকার। মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাস, ধর্মীয় আচার-আচরণ ও ধর্মপ্রচারের স্বাধীনতায় ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কোনােরকম হস্তক্ষেপ করে না। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সব ধর্মের সমান অধিকার, রাষ্ট্র কোনাে বিশেষ ধর্মের পৃষ্ঠপােষকতা করে না।


[6] শিক্ষার অধিকার: শিক্ষা মানুষকে সুস্থ চেতনায় উদ্ভাসিত করে যােগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তােলে। শিক্ষার সুযােগ না পেলে ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ কখনােই সম্ভব হয় না। প্রতিটি রাষ্ট্রে কার্যকরীভাবে শিক্ষার অধিকারের সংস্থান থাকা একান্ত অপরিহার্য।


[7] চুক্তির অধিকার: চুক্তির অধিকারকে অনেকে পৌর অধিকারের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। ব্যাবসাবাণিজ্য এবং অন্য যেকোনাে বিষয়ে যে কোনাে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমাজের প্রতিটি নাগরিকের স্বাধীনভাবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অধিকার থাকা বাঞ্ছনীয়।


রাজনৈতিক অধিকার


রাষ্ট্রের কাজকর্মে নাগরিকদের প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে অংশগ্রহণের সুযােগসুবিধাকে রাজনৈতিক অধিকার বলা হয়। রাজনৈতিক অধিকারগুলি হল


[1] ভােটদানের অধিকার: ভােট দেওয়ার অধিকার রাজনৈতিক অধিকারগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্ত্রী পুরুষ-জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের ভােটাধিকার স্বীকৃত। সার্বিক প্রাপ্তবয়স্কের ভােট দেওয়ার অধিকার গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি রচনা করে।


[2] নির্বাচিত হওয়ার অধিকার: আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে যােগ্যতাসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক প্রতিটি নাগরিকের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বা নির্বাচিত হওয়ার অধিকার স্বীকৃত হয়েছে। প্রসঙ্গত বলা যায়, বিভিন্ন রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় পদগুলিতে নির্বাচিত হওয়ার জন্য যােগ্যতার শর্ত বিভিন্ন ধরনের।


[3] সরকারি চাকরির অধিকার: স্ত্রী-পুরুষ-জাতি-ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে উপযুক্ত যােগ্যতাসম্পন্ন প্রতিটি নাগরিকের সরকারি চাকরি পাওয়ার অধিকার একটি রাজনৈতিক অধিকাররূপে স্বীকৃত। কোনাে যােগ্যতাসম্পন্ন নাগরিককে জাতি, ধর্ম বা বর্ণের অজুহাতে সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত করা যায় না।


[4] আবেদনের অধিকার: আবেদন করার অধিকার নাগরিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার। নাগরিকরা তাদের অভাব, অভিযােগ এবং বিভিন্ন সমস্যা প্রতিকারের জন্য সরকারকে স্বাধীনভাবে আবেদন জানাতে পারে যা সভ্য রাষ্ট্রে একটি স্বীকৃত মৌল অধিকার।


[5] সমালােচনার অধিকার: সরকার জনবিরােধী কাজ করলে তার সমালােচনা করার অধিকার নাগরিকদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। গণতন্ত্রে জনমতের গুরুত্বকে মর্যাদা দেওয়া হয়। অবশ্য সরকারের বিরুদ্ধে সমালােচনার অর্থ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সমালােচনা করা নয়।


[6] প্রবাসকালীন নিরাপত্তার অধিকার: স্বদেশের মতাে বিদেশে থাকাকালীন নাগরিকদের জীবন ও সম্পত্তির অধিকারের সংরক্ষণ করা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।


[7] প্রতিরােধ বা বিদ্রোহের অধিকার: জনস্বার্থ রক্ষার কাজে নিয়ােজিত না হয়ে সরকার যদি স্বৈরাচারী হয়ে ওঠে, তবে সেই সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরােধ গড়ে তােলা অথবা বিদ্রোহ করা নাগরিকদের একটি মৌলিক অধিকার বার্ট্রান্ড রাসেলের মতে, অপদার্থ সরকার যদি নিজের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করতে না পারে তাহলে অরাজকতার আশঙ্কা সত্ত্বেও জনগণের বিদ্রোহ করার অধিকার থাকা উচিত।


রাষ্ট্রপতি-শাসিত শাসনব্যবস্থা কাকে বলে? রাষ্ট্রপতি শাসিত শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে।


রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকারের গুণ-দোষ বা সুবিধা-অসুবিধা বিশ্লেষণ করাে।


সংসদীয় বা মন্ত্রীপরিষদ-চালিত শাসনব্যবস্থার সংজ্ঞা দাও। সংসদীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে।


সংসদীয় সরকারের গুণ-দোষ বা সুবিধা-অসুবিধাগুলি ব্যাখ্যা করাে।


সংসদীয় শাসনব্যবস্থার সাফল্যের শর্তগুলি আলােচনা করাে।


মন্ত্রীসভা-চালিত এবং রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য | রাষ্ট্রপতি-শাসিত ও সংসদীয় শাসনব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য লেখাে।


ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করাে | ভারতে সংসদীয় ব্যবস্থার স্বরূপ বর্ণনা করাে।