লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করাে।

লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের মধ্যে পার্থক্য

যখন রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়মাবলি কোনাে সংবিধান সভা বা কনভেনশন দ্বারা দলিল আকারে লিপিবদ্ধ থাকে, তখন সেই সংবিধানকে লিখিত সংবিধান বলে। আর যদি রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা-সংক্রান্ত নিয়মাবলি সংবিধান সভা বা কনভেনশন দ্বারা লিপিবদ্ধ না হয়ে প্রথা, রীতিনীতি, আইন, বিচারালয়ের রায় ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে, তাকে অলিখিত সংবিধান বলে। লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্য দেখা যায়।


লিখিত সংবিধান


  • লিখিত সংবিধান সাধারণত সংবিধান সভা বা কনভেনশন দ্বারা সৃষ্ট।

  • লিখিত সংবিধানে শাসনকার্য পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়মাবলি লিখিত আকারে থাকে বলে এরূপ সংবিধান স্পষ্ট ও স্বচ্ছ হয়।

  • লিখিত সংবিধান প্রধানত দুষ্পরিবর্তনীয় হয়।

  • লিখিত সংবিধানে সরকার সহজে স্বৈরাচারী হতে পারে না বলে নাগরিক অধিকার সুরক্ষিত থাকে।

  • লিখিত সংবিধানে বিচার বিভাগের প্রাধান্য থাকে। কারণ সংবিধানকে রক্ষা ও ব্যাখ্যার সকল দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে বিচার বিভাগের ওপর।

  • লিখিত সংবিধান প্রধানত দুষ্পরিবর্তনীয় হওয়ায় সহজে পরিবর্তন করা যায় না। তাই এরূপ সংবিধানের বিশেষ মর্যাদা থাকে।

  • লিখিত সংবিধানে শাসনকার্য পরিচালনা সংক্রান্ত সমস্ত নিয়মাবলি লিপিবদ্ধ থাকে এবং এরূপ সংবিধান অনমনীয় বলে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে উপযােগী হয়।

  • লিখিত সংবিধানেও কিছু অলিখিত অংশ থাকে।


অলিখিত সংবিধান


  • অলিখিত সংবিধান প্রথা, রীতিনীতি, বিচারালয়ের রায়, আইনসভা প্রণীত আইন প্রভৃতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।

  • অলিখিত সংবিধানে শাসনকার্য পরিচালনা সংক্রান্ত নিয়মাবলি কোনাে নির্দিষ্ট দলিলে লিপিবদ্ধ থাকে না বলে এরূপ সংবিধান অস্পষ্ট হয়।

  • অলিখিত সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হয়।

  • অলিখিত সংবিধানে সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে বলে নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হতে পারে।

  • অলিখিত সংবিধানে বিচার বিভাগের পরিবর্তে আইনসভার প্রাধান্য লক্ষ করা যায়। এই ধরনের সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হওয়ায় আইনসভা সহজেই সংবিধান সংশােধন করতে পারে।

  • অলিখিত সংবিধান অনমনীয় হওয়ায় বারংবার পরিবর্তনের ফলে এরূপ সংবিধান তার নিজস্বতা হারায়। এ কারণে এরূপ সংবিধানের মর্যাদা কম হয়।

  • অলিখিত সংবিধান নমনীয় হওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকার সহজেই রাজ্য সরকারের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে বলে এরূপ সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার পক্ষে অনুপযােগী।

  • অলিখিত সংবিধানেও কিছু কিছু লিখিত অংশ থাকে।


মূল্যায়ন: উপরি-উক্ত আলোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, লিখিত সংবিধান অলিখিত সংবিধানের তুলনায় শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে পারে। তবে মনে রাখা দরকার যে, পৃথিবীর কোনাে সংবিধানই সম্পূর্ণ লিখিত বা সম্পূর্ণ অলিখিত হতে পারে না। লিখিত সংবিধানের মধ্যেও বহু অলিখিত নিয়মকানুনের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায় এবং অলিখিত সংবিধানের মধ্যেও লিখিত নিয়মকানুনের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। কিন্তু তা সত্ত্বেও উভয়প্রকার সংবিধান সমার্থক নয়।


রাষ্ট্রের প্রকৃতি সম্পর্কিত তত্ত্বগুলির সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা করাে।


জাতি, জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতা


আধুনিক রাজনীতির মৌলিক ধারণাসমূহ


নাগরিকত্ব | নাগরিক ও বিদেশির মধ্যে বৈসাদৃশ্য | নাগরিকত্ব অর্জনের পদ্ধতি


সংবিধান কাকে বলে? সংবিধানের শ্রেণিবিভাজন করাে।


লিখিত সংবিধান কাকে বলে? লিখিত সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধা ব্যাখ্যা করাে।


অলিখিত সংবিধান এবং তার সুবিধা ও অসুবিধা | অলিখিত সংবিধানের গুণ ও দোষ | অলিখিত সংবিধান কী?