রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা সামাজিক সংগঠনের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্যগুলি আলােচনা করাে।
রাষ্ট্র ও সামাজিক সংগঠনের মধ্যে সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য
আধুনিক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় সংগঠনের পাশাপাশি অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।
রাষ্ট্র ও সামাজিক সংগঠনের মধ্যে সাদৃশ্য
[1] সমাজবােধ: রাষ্ট্র ও অন্যান্য সামাজিক সংগঠন—এ সবেরই সৃষ্টি হয়েছে মানুষের সমাজবােধ থেকে।
[2] সদস্যসংখ্যা: রাষ্ট্রের জনসমষ্টির মতাে অন্য সামাজিক সংগঠনগুলিরও নির্দিষ্ট সদস্য রয়েছে।
[3] শৃঙ্খলা: রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে নাগরিকরা রাষ্ট্রীয় আইনকানুন মেনে চলতে বাধ্য হয়। একইভাবে সংগঠনের সদস্যরাও সংগঠন-প্রণীত নিয়মকানুন মেনে চলে।
[4] পরিচালন পদ্ধতি: সরকার হল রাষ্ট্রের পরিচালক, তেমনই সামাজিক সংগঠনগুলি চালনা করেন পরিচালকমণ্ডলী।
[5] কর্তব্য: নাগরিকরা যেভাবে রাষ্ট্রের কাছ থেকে সুযােগসুবিধা ও অধিকার ভােগের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কর্তব্য পালন করে, তেমনই সংগঠনের সদস্যরাও সংগঠনের সুযোগসুবিধা ভােগের বিনিময়ে কয়েকটি নির্দিষ্ট কর্তব্য পালন করে।
[6] বিবর্তন: সামাজিক বিবর্তনের একটি বিশেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। একইভাবে অন্য সামাজিক সংগঠনগুলিও সমাজবিবর্তনের ধারায় জন্ম লাভ করে।
রাষ্ট্র ও সামাজিক সংগঠনের মধ্যে বৈসাদৃশ্য
রাষ্ট্র
উৎপত্তিগত দিক থেকে বলা যায়, মানবসমাজের ঐতিহাসিক বিবর্তনের এক বিশেষ পর্যায়ে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছিল।
রাষ্ট্রের মধ্যে বসবাসকারী প্রায় সব মানুষই রাষ্ট্রের সদস্য। রাষ্ট্রের সদস্যপদ বাধ্যতামূলক। কোনাে ব্যক্তি একইসঙ্গে একাধিক রাষ্ট্রের নাগরিক হতে পারেন না।
সর্বাঙ্গীণ জনকল্যাণের জন্য রাষ্ট্রকে বহুমুখী উদ্দেশ্য পূরণ করতে হয়।
আকৃতির বিচারে রাষ্ট্র বিশাল।
প্রতিটি রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট ভৌগােলিক সীমানা থাকে, রাষ্ট্রের যাবতীয় কর্মপরিধি সেই সীমানার মধ্যে আবদ্ধ৷
রাষ্ট্র চিরস্থায়ী প্রতিষ্ঠান, এর একটা সুষ্ঠু ধারাবাহিকতা আছে।
সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী না হলে কোনাে প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্র বলা যায় না।
রাষ্ট্র কোনাে সংগঠনের অধীনে থাকে না।
রাষ্ট্রের সৃষ্টি কোনাে সামাজিক সংগঠনের অনুমােদন বা উদ্যোগের ওপর নির্ভর করে না।
রাষ্ট্র প্রধানত মানবজীবনের বাহ্যিক দিকটিকে নিয়ন্ত্রণ করে।
সামাজিক সংগঠন
সামাজিক সংগঠনগুলির উৎপত্তি নেহাতই স্বেচ্ছামূলক।
সামাজিক সংগঠনের সদস্যসংখ্যা রাষ্ট্রের সদস্যসংখ্যার এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ। সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণের বিষয়টি ব্যক্তির ইচ্ছাধীন। কোনাে ব্যক্তি একই সঙ্গে একাধিক সংগঠনের সদস্য হতে পারেন।
সামাজিক সংগঠনগুলি একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসাধনের জন্য গঠিত হয়। যেমন, কোনাে ক্রীড়া সংগঠনের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র খেলাধুলাের বিকাশ ঘটানাে।
রাষ্ট্রের তুলনায় সামাজিক সংগঠন ক্ষুদ্র।
কোনাে কোনাে সামাজিক সংগঠনের কর্মপরিধি পৃথিবীর এক দেশ থেকে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রামকৃয় মিশনের কথা বলা যায়।
সামাজিক সংগঠনগুলি ক্ষণস্থায়ী।
সামাজিক সংগঠনগুলির ক্ষেত্রে সার্বভৌম ক্ষমতার প্রশ্ন অবাস্তব।
সামাজিক সংগঠনগুলি রাষ্ট্রের অধীন। যে-কোনাে সংগঠনকে রাষ্ট্রের নিয়মকানুনের প্রতি অনুগত থাকতে হয়।
রাষ্ট্রের অনুমােদন ও উদ্যোগের মাধ্যমে সামাজিক সংগঠনগুলির জন্ম হয়।
মানুষের অন্তর্জীবনের বিকাশে সামাজিক সংগঠনের প্রভাব অনেক বেশি গভীর| ম্যাকাইভার বলেছেন, পেনসিল কাটার জন্য কুঠার যেমন অনুপযুক্ত, ঠিক তেমনই মানুষের অন্তর্জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলির বিকাশে রাষ্ট্রও অনুপযুক্ত।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, রাষ্ট্র ও সামাজিক সংগঠনের মধ্যে মৌলিক প্রভেদ থাকলেও মানবজীবনের বিকালে উভয়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বার্কারের মতে, রাষ্ট্রীয় জীবন ও সামাজিক জীবন পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত, এরা একে অপরের পরিপূরক।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের রাষ্ট্রকেন্দ্রিক ও রাষ্ট্রনিরপেক্ষ সংজ্ঞাগুলি আলােচনা করাে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে কেন 'প্রগতিশীল বিজ্ঞান' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে?
রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দাও।রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করাে।
রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি উল্লেখ করাে । রাষ্ট্র ও সমাজের পার্থক্য ব্যাখ্যা করাে।