সরকার কী? সার্বভৌমত্ব কী? বোঁদা প্রদত্ত সার্বভৌমিকতার সংজ্ঞা। সার্বভৌমিকতার দুটি বৈশিষ্ট্য। জনগণের সার্বভৌমিকতা।

সরকার


রাষ্ট্র সম্পূর্ণভাবে একটি তাত্ত্বিক ধারণা। বিমূর্ত রাষ্ট্রের বাস্তব রূপ হল সরকার৷ কার্যক্ষেত্রে রাষ্ট্র বলতে আমরা সরকারকেই বুঝি। অধ্যাপক গার্নারের মতে, রাষ্ট্রের প্রতিনিধি বা যন্ত্র হল সরকার। উইলােবির মতে, সরকার হল এমন এক প্রতিষ্ঠান বা যন্ত্র যার মাধ্যমে রাষ্ট্র তার ইচ্ছাকে কার্যকরী করে।


সার্বভৌমত্ব


রাষ্ট্রের চরম, অসীম, অবিভাজ্য ও অহস্তান্তরযােগ্য ক্ষমতাকে সার্বভৌমত্ব বলা হয়। সার্বভৌমত্ব হল রাষ্ট্রের প্রাণস্বরূপ। সার্বভৌমত্ব না থাকলে তাকে রাষ্ট্র বলা চলে না।


বোঁদা প্রদত্ত সার্বভৌমিকতার সংজ্ঞা


ফরাসি দার্শনিক বোঁদা সর্বপ্রথম সার্বভৌমিকতার একটি সুস্পষ্ট সংজ্ঞা নির্দেশ করেন। বােদার মতে, সার্বভৌমিকতা হল নাগরিক ও প্রজার ওপর রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ক্ষমতা। এই ক্ষমতা কোনােভাবেই আইনের দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়।


সার্বভৌমিকতার দুটি বৈশিষ্ট্য


সার্বভৌমিকতার দুটি উল্লেখযােগ্য বৈশিষ্ট্য হল-

  • [1] সার্বভৌম ক্ষমতা হস্তান্তরযােগ্য নয়,
  • [2] এই ক্ষমতা চরম, অবাধ ও অসীম।।


রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের কাছে সার্বভৌম ক্ষমতা এমন একধরনের ক্ষমতা যা কাউকে হস্তান্তর করা যায় না। সার্বভৌম ক্ষমতা রাষ্ট্র একা ভােগ করে থাকে। অন্যদিকে, সার্বভৌম কর্তৃপক্ষ দেশের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ এই সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের হাতে যে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকে তা হল চরম, অবাধ ও অসীম।


জনগণের সার্বভৌমিকতা


জনগণের সার্বভৌমিকতা বলতে বােঝায় যে, রাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার প্রকৃত অধিকারী হল জনগণ জনগণের সম্মতিই রাষ্ট্রের ভিত্তি। জনগণের নির্দেশই হল আইন। রাষ্ট্রের এলাকার মধ্যে জনগণের শক্তির উর্ধ্বে কোনাে শক্তি নেই।


পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, অসম ও ত্রিপুরা রাষ্ট্র কি না

রাষ্ট্র শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল 'স্টেট' (State)। আবার ভারত যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, অসম, ত্রিপুরা প্রভৃতি ২৯টি অঙ্গরাজ্যকেও ইংরেজিতে বলা হয় 'স্টেট'। যেমন—স্টেট অব ওয়েস্ট বেঙ্গল। ফলে এই সংশয় দেখা দেয় যে, 'স্টেট' শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত রাষ্ট্র অর্থে না রাজ্য বা প্রদেশ অর্থ। তাই বিচারবিশ্লেষণ করে দেখা দরকার যে, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, অসম বা ত্রিপুরাকে কেন রাষ্ট্র বলা যাবে না। রাষ্ট্রের অপরিহার্য চারটি বৈশিষ্ট্য হল—

  • [1] জনসমষ্টি,
  • [2] নির্দিষ্ট ভূখণ্ড,
  • [3] সরকার এবং
  • [4] সার্বভৌমত্ব।

[1] জনসমষ্টি: রাষ্ট্র গঠনের প্রথম এবং অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হল জনসমষ্টি। জনগণ ছাড়া রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। পশ্চিমবঙ্গ-সহ প্রতিটি ভারতীয় অঙ্গরাজ্যেরই এই বৈশিষ্ট্য রয়েছে।


[2] নির্দিষ্ট ভূখণ্ড: আয়তনের দিক থেকে ক্ষুদ্র বা বৃহৎ যাই হােক না কেন, প্রতিটি ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড আছে। অতএব, রাষ্ট্র গঠনের দ্বিতীয় মৌলিক উপাদানটিও পশ্চিমবঙ্গ সহ প্রত্যেকটি ভারতীয় অঙ্গরাজ্যে উপস্থিত।


[3] সরকার: প্রতিটি ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের নিজস্ব সরকার রয়েছে। ভারতে কেন্দ্রের ন্যায় অঙ্গরাজ্যগুলিতে সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব ভারতীয় অঙ্গরাজ্যে রাষ্ট্র গঠনের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ উপাদানটি বিদ্যমান।


[4] সার্বভৌমত্ব: রাষ্ট্রের চতুর্থ ও সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল সার্বভৌমত্ব। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, সার্বভৌমত্ব হল আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি পশ্চিমবঙ্গ-সহ কোনাে ভারতীয় অঙ্গেরাজ্যেরই সার্বভৌমত্ব নেই। যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধানের অধীনে থেকে অঙ্গরাজ্যগুলিকে শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়। জরুরি অবস্থা ঘােষিত হলে কেন্দ্রীয় আইনসভা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত যে-কোনাে বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে পারে। তা ছাড়া সংবিধানের ৩৫৬ নং ধারা অনুযায়ী, কোনাে অঙ্গরাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা দেখা দিলে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকার ভেঙে দিয়ে যাবতীয় ক্ষমতা নিজের হাতে নিতে পারেন। যে-কোনাে অঙ্গরাজ্যের নাম, সীমানা প্রভৃতি পরিবর্তনের ক্ষমতা ভারতীয় পার্লামেন্টের রয়েছে। কোনাে ভারতীয় রাজ্য বিদেশি কোনাে রাষ্ট্রের সঙ্গে স্বতন্ত্র ও স্বাধীনভাবে কোনােপ্রকার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন বা চুক্তি, সম্পাদন করতে পারে না। সুতরাং, অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব কোনাে ভারতীয় অঙ্গরাজ্যের নেই। আর এই কারণে বিহার, ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা-সহ ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রের ২৯টি রাজ্য, বস্তুত অঙ্গরাজ্যগুলিকে কোনােভাবেই রাষ্ট্র বলে অভিহিত করা যায় না।


রাজনীতির অর্থ নিরূপণ করাে | রাজনীতি বলতে কী বােঝায়?


রাষ্ট্রবিজ্ঞানের রাষ্ট্রকেন্দ্রিক ও রাষ্ট্রনিরপেক্ষ সংজ্ঞাগুলি আলােচনা করাে।


রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও। রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে কেন 'প্রগতিশীল বিজ্ঞান' হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে?


রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান? রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলার পক্ষে ও বিপক্ষে যুক্তি | রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান পদবাচ্য? আলােচনা করাে।


রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনা ক্ষেত্রের পরিধি বিশ্লেষণ করাে | রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রকৃতি ও বিষয়বস্তুর পরিধি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দাও।রাষ্ট্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি ব্যাখ্যা করাে।


রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি উল্লেখ করাে । রাষ্ট্র ও সমাজের পার্থক্য ব্যাখ্যা করাে।