ভারতের সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহকে লিপিবদ্ধ করার কারণ | মৌলিক অধিকারের সংজ্ঞা এবং প্রকৃতি | ইতিবাচক ও নেতিবাচক মৌলিক অধিকার কাকে বলে? জরুরি অবস্থায় মৌলিক অধিকারগুলির বৈধতা

মৌলিক অধিকারের সংজ্ঞা

মানবজীবনের মৌলিক প্রয়ােজনগুলি যেসব অধিকারের সাহায্যে পূরণ হয়ে থাকে সেগুলিকে মৌলিক অধিকার বলে অভিহিত করা হয়। মৌলিক অধিকার বলতে সাধারণভাবে সেইসব অধিকারকে বােঝায় যেগুলি নাগরিকদের ব্যক্তিসত্তার বিকাশে একান্তভাবে অপরিহার্য। এই কারণে মৌলিক অধিকারগুলি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংরক্ষিত হয়। অধ্যাপক জোহারির ভাষায়, "A fundamental right may be defined as an interest protected by the higher law of land". (মৌলিক অধিকার হল এমন এক ধরনের অধিকার যা দেশের সর্বোচ্চ আইনের দ্বারা সুরক্ষিত)


মৌলিক অধিকারের প্রকৃতি


সংবিধান বিশেষজ্ঞ দুর্গাদাস বসুর বক্তব্য হল, সাধারণ অধিকারগুলিকে যেভাবে সংসদে সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভােটের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যায়, মৌলিক অধিকারগুলিকে সেভাবে পরিবর্তন করা যায় না। এই কারণে এই অধিকারগুলিকে মৌলিক বলা হয়। মৌলিক অধিকারগুলিকে পরিবর্তন করতে গেলে সংবিধান সংশােধন করতে হয়, সংবিধান সংশােধন ছাড়া মৌলিক অধিকার পরিবর্তন করা যায় না৷ ১৯৫০ সালে এ কে গােপালন বনাম মাদ্রাজ রাজ্য মামলার রায় দিতে গিয়ে বিচারপতি পাতঞ্জলি শাস্ত্রী বলেন, মৌলিক অধিকারগুলি এই কারণে মৌলিক যে এগুলি শাসন বিভাগ ও আইন বিভাগের এক্তিয়ারের বাইরে রয়েছে। মৌলিক অধিকারগুলি সংবিধান কর্তৃক সংরক্ষিত এবং আদালত কর্তৃক বিশেষভাবে বলবৎযােগ্য। স্বাভাবিক অবস্থায় সুপ্রিমকোর্ট সংবিধানের ৩২নং ধারা অনুসারে এবং হাইকোর্ট ২২৬নং ধারা অনুসারে লেখ (Writ), নির্দেশ (Direction) ও আদেশ (Order) জারি করে মৌলিক অধিকার বলবৎ করার ব্যবস্থা নিতে পারে। কেন্দ্র বা রাজ্য আইনসভার কোনাে আইন সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ে বর্ণিত মৌলিক অধিকারগুলির বিরােধী হলে সেই আইনকে বাতিল করে দিয়ে মৌলিক অধিকারগুলির পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব আদালতের হাতে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ অধিকারগুলিকে এই ধরনের কোনাে মর্যাদা দেওয়া হয় না। সাধারণ অধিকারগুলি সাধারণ আইন দ্বারা সংরক্ষিত হয়।


ইতিবাচক মৌলিক অধিকার


যে অধিকারগুলির মাধ্যমে নাগরিকদের সুস্পষ্টভাবে কয়েকটি সুযােগসুবিধা দেওয়া হয়েছে সেগুলি ইতিবাচক মৌলিক অধিকার। যেমন—মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার প্রভৃতি।


নেতিবাচক মৌলিক অধিকার


যে অধিকারগুলি রাষ্ট্রের ওপর বাধানিষেধ আরােপের মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাধীনতা ভােগে সাহায্য করে তাদের নেতিবাচক অধিকার বলা হয়। যেমন, রাষ্ট্র কোনােভাবেই জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার কেড়ে নিতে পারে না।


ভারতের সংবিধানে মৌলিক অধিকারসমূহকে লিপিবদ্ধ করার কারণ


মৌলিক অধিকারগুলিকে সংবিধানে লিপিবদ্ধ করার প্রয়ােজন আছে কি না সেসম্পর্কে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা একমত নন। ভারতের সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলিকে লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত কারণগুলি দেখানাে হয়一


[1] গণতান্ত্রিক অধিকারের সংরক্ষণ: সংবিধান-বিশেষজ্ঞদের মতে, নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকারগুলিকে সংরক্ষণ করার জন্য মৌলিক অধিকারগুলিকে লিপিবদ্ধ করা জরুরি। মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ হওয়ার ফলে রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ সেগুলির বাস্তব রূপায়ণে বাধ্য থাকে। শুধু তাই নয়, আদালতও মৌলিক অধিকারগুলির তত্ত্বাবধানের জন্য উপযুক্ত দায়িত্ব পালন করে। অনেকে মনে করেন যে, নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকে বলে শাসকগােষ্ঠী বা ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে এগুলির ওপর অযথা হস্তক্ষেপ করা সম্ভব হয় না। সংবিধানে উল্লিখিত থাকে বলেই মৌলিক অধিকারগুলি সুরক্ষিত থাকে।


[2] গণচেতনার সৃষ্টি: সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌলিক অধিকারগুলি সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে বলেই জনগণ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকার সুযােগ পায়। অধিকারগুলির বাস্তব প্রয়ােগ এবং সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তাদের একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়।


[3] সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষা: মৌলিক অধিকারগুলি সংবিধানে লিপিবদ্ধ হওয়ায় সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষিত হয় বলে অনেকে মনে করেন। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রকৃতপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসনব্যবস্থা। এক্ষেত্রে মৌলিক অধিকারগুলি লিপিবদ্ধ না থাকলে সংখ্যালঘুদের স্বার্থহানির আশঙ্কা থাকে।


[4] আইনের মর্যাদালাভ: দেশের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানে লিপিবদ্ধ থাকার ফলে নাগরিক অধিকারগুলি মৌলিক আইনের মর্যাদা লাভ করে। এর ফলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংঘ, সমিতি, এমনকি সরকার পর্যন্ত মৌলিক অধিকারগুলির মর্যাদা সংরক্ষণে বাধ্য হয়। তা ছাড়া সংবিধানে লিপিবদ্ধ হওয়ায় মৌলিক অধিকারগুলি আদালতের কাছেও বিশেষ মর্যাদা অর্জন করে।


জরুরি অবস্থায় মৌলিক অধিকারগুলির বৈধতা


সংবিধানের ৩৫২নং ধারা অনুযায়ী জরুরি অবস্থা ঘােষিত হলে ১৯নং ধারায় উল্লিখিত স্বাধীনতার অধিকারগুলির ওপর যে-কোনাে বিধিনিষেধ আরােপ করার ক্ষমতা রাষ্ট্রের রয়েছে। এ ছাড়া ৩৫৯নং ধারা অনুসারে রাষ্ট্রপতি জনগণের মৌলিক অধিকার বলবৎকরণের উদ্দেশ্যে শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকারটি স্থগিত রাখার আদেশ দিতে পারেন।


সংসদীয় শাসনব্যবস্থার সাফল্যের শর্তগুলি আলােচনা করাে।


মন্ত্রীসভা-চালিত এবং রাষ্ট্রপতি-শাসিত সরকারের মধ্যে পার্থক্য | রাষ্ট্রপতি-শাসিত ও সংসদীয় শাসনব্যবস্থার মধ্যে পার্থক্য লেখাে।


ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করাে | ভারতে সংসদীয় ব্যবস্থার স্বরূপ বর্ণনা করাে।


অধিকার বলতে কী বােঝ? পৌর অধিকার ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কে আলােচনা করাে।


অধিকারের রূপভেদ ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করাে। অর্থনৈতিক অধিকার এবং সামাজিক ও কৃষ্টিগত অধিকার সম্পর্কে আলােচনা করাে।


নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কটি আলােচনা করাে । অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে সম্পর্ক আলোচনা করাে।


জাতিপুঞ্জের ঘােষণাপত্রে বিবৃত মানবাধিকারসমূহ । মানবাধিকার এবং অন্যান্য অধিকারের মধ্যে পার্থক্য । মানবাধিকারের মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ । মানবাধিকারের সংজ্ঞা