সুপরিবর্তনীয় সংবিধান বলতে কী বােঝ? সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি আলােচনা করাে।

সুপরিবর্তনীয় সংবিধান

সংশােধন পদ্ধতিকে ভিত্তি করে লর্ড ব্রাইস সংবিধানকে সুপরিবর্তনীয় বা নমনীয় এবং দুষ্পরিবর্তনীয় বা অনমনীয়--এই দুই ভাগে ভাগ করেছেন। যে সংবিধানকে আইনসভা সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতি অনুসরণ করে সংশােধন করতে পারে অর্থাৎ সংবিধান সংশােধনের জন্য কোনাে বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রয়ােজন হয় না, সেই সংবিধানকে সুপরিবর্তনীয় বা নমনীয় সংবিধান বলে। ব্রিটেন, নিউজিল্যান্ড প্রভৃতি দেশের সংবিধান এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত।


সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের সুবিধা


[1] যুগােপযােগিতা: সুপরিবর্তনীয় সংবিধান সহজেই পরিবর্তনশীল বলে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে নিজেকে সময়ােপযােগী করে তুলতে পারে।


[2] গতিশীলতা: এরূপ সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় বলে এই সংবিধান অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ায় না। নমনীয়তার জন্য এরূপ সংবিধান রক্ষণশীলতার ত্রুটিমুক্ত।


[3] জরুরি অবস্থার উপযােগী না হওয়া: যুদ্ধ, জাতীয় সংকট ইত্যাদির মতাে জরুরি অবস্থায় সংবিধানের দ্রুত পরিবর্তন প্রয়োজন হয়। সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নমনীয় হওয়ায় এই প্রয়োজন সহজেই পূরণ করা যায়।


[4] বিক্ষোভের সম্ভাবনা কম থাকা: সুপরিবর্তনীয় সংবিধানকে সহজে পরিবর্তন করা যায় বলে এরূপ সংবিধানে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা সহজেই বাস্তবায়িত হয়। একারণে এরূপ সংবিধানের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ থাকে না।


সুপরিবর্তনীয় সংবিধানের অসুবিধা


সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নমনীয় বলে এরূপ সংবিধানের ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধাও লক্ষ করা যায়—


[1] স্থিতিশীল না হওয়া: সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নমনীয় হওয়ায় ঘনঘন পরিবর্তিত হয়। ফলে শাসনব্যবস্থা পরিচালনায় স্থিতিশীলতার অভাব দেখা দিতে পারে।


[2] মর্যাদার অভাব: এরূপ সংবিধানকে সাধারণ আইন পাসের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা যায় বলে সাধারণ আইন ও সাংবিধানিক আইনের মধ্যে কোনাে পার্থক্য থাকে না। বারংবার পরিবর্তিত হয় বলে এরূপ সংবিধান মর্যাদাহীন হয়।


[3] সরকারের স্বৈরাচারী হওয়ার সম্ভাবনা: সুপরিবর্তনীয় সংবিধানকে সহজেই পরিবর্তিত করা যায় বলে খেয়ালখুশিমতাে এই সংবিধানকে পরিবর্তন করে সরকার স্বৈরাচারী হতে পারে।


[4] নাগরিক অধিকার ক্ষুন্ন হওয়ার সম্ভাবনা: এরূপ সংবিধান নমনীয় হওয়ায় সরকার ইচ্ছামতাে সংবিধান সংশােধন করে নাগরিক অধিকার হরণ করতে পারে।


[5] জনগণের আস্থা না থাকা: সুপরিবর্তনীয় সংবিধান কারণে অকারণে সংশােধন করা যায় বলে এরূপ সংবিধানের প্রতি জনগণের আস্থা থাকে না।


[6] বিচার বিভাগের দুর্বলতা: শাসন বিভাগ এরূপ সংবিধানকে প্রয়ােজনমতাে পরিবর্তন করে বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে।


[7] অনুপযােগিতা: যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় সংবিধান নমনীয় হলে কেন্দ্রীয় সরকার ইচ্ছামতাে সংবিধানের পরিবর্তন করে রাজ্য সরকারের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে|তাই বলা হয় যে, এরূপ সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অনুপযােগী।


মূল্যায়ন: সুপরিবর্তনীয় সংবিধান নমনীয় বলে সহজেই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে| এই নমনীয়তার সুযােগ নিয়ে সরকার নাগরিকদের অধিকার ও স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারে। তাই সংবিধান সুপরিবর্তনীয় হলেও নাগরিকদের অধিকার যেন সুরক্ষিত থাকে, তা সুনিশ্চিত হওয়া বাঞ্ছনীয়।


জাতি, জাতীয়তাবাদ ও আন্তর্জাতিকতা


আধুনিক রাজনীতির মৌলিক ধারণাসমূহ


নাগরিকত্ব | নাগরিক ও বিদেশির মধ্যে বৈসাদৃশ্য | নাগরিকত্ব অর্জনের পদ্ধতি


সংবিধান কাকে বলে? সংবিধানের শ্রেণিবিভাজন করাে।


লিখিত সংবিধান কাকে বলে? লিখিত সংবিধানের সুবিধা ও অসুবিধা ব্যাখ্যা করাে।


অলিখিত সংবিধান এবং তার সুবিধা ও অসুবিধা | অলিখিত সংবিধানের গুণ ও দোষ | অলিখিত সংবিধান কী?


লিখিত ও অলিখিত সংবিধানের মধ্যে পার্থক্য ব্যাখ্যা করাে।